দেড় কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের উদ্যোক্তা

বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২: ৫৫

বাগেরহাটে ডিপোজিটের দেড় কোটি টাকা নিয়ে সরে পড়েছেন হাদিউজ্জামান হাদি নামে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এক উদ্যোক্তা। খবর পেয়ে আজ রোববার দুপুর থেকে গ্রাহকেরা সদর উপজেলার যাত্রাপুর বাজার ব্যাংকের কার্যালয়ে ভিড় করেন। এ সময় অনলাইনে নিজেদের হিসাবে টাকা দেখতে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।

গ্রাহকেরা জানান, ইসলামী ব্যাংকের সুনাম থাকায় তারা এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে টাকা ডিপোজিট করেছিলেন। ব্যাংক থেকে জমা রসিদও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামান হাদি এই টাকা মূল শাখায় জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। তাকে আটক করে টাকা আদায় করার দাবি জানান তাঁরা।

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বাগেরহাট শাখার ব্যবস্থাপক (অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট) শেখ তরিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা বাগেরহাট মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’

শেখ তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই শাখায় জমা স্লিপ দিয়ে লেনদেন করার কোনো সুযোগ নেই। এখানে ফিংগার প্রিন্টের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন করতে হয়। এ বিষয়টি ব্যাংক উদ্বোধনের সময় আমরা বলেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া বিভিন্ন সময় পরিদর্শনে গিয়ে ব্যাংক অফিসাররা গ্রাহকদের জানিয়েছেন। তারপরও উদ্যোক্তা প্রতারণার মাধ্যমে জমা স্লিপ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। গ্রাহকদেরও মধ্যেও কেউ কেউ অতিরিক্ত লাভে তাকে টাকা দিয়েছেন।’ ভবিষ্যতে এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকদের এই ধরনের লেনদেন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।

সাবানা বেগম নামে গ্রাহক বলেন, ‘সাড়ে চার লাখ টাকা রেখেছিলাম ব্যাংকে। এই টাকার লাভে আমার সংসারের খরচ চলত। কিন্তু ব্যাংকে এসে জানলাম আমার হিসাবে কোনো টাকা জমা নেই। আমাদের কোনো আয় নেই, স্বামী পঙ্গু হাটতে পারেন না। এখন আমাদের কীভাবে চলবে।’

যাত্রাপুর এলাকার মনোয়ারা বেগম নামে এক নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘চাচা, ফুপু ও আমার মিলে ২৩ লাখ টাকা আছে এই ব্যাংকে। হিসাবে দেখছি কোনো টাকা নেই। এত টাকা হারিয়ে পরিবারের সবাই এখন খুবই চিন্তিত। কী হবে জানি না।’

বাগদিয়া এলাকার কৃষক আজিজুল হক বলেন, ‘৫০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। এখন শুনছি টাকা নেই। এভাবে হলে কীভাবে আমরা টাকা পয়সা সঞ্চয় করব।’

চাপাতলা এলাকার মিনারা বেগম বলেন, ‘এক লাখ ১০ টাকা রেখেছিলাম। কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। এভাবে আমাদের টাকা উদ্যোক্তা আত্মসাৎ করছেন। এ বিষয়টি ব্যাংকের ইনচার্জ বা ক্যাশিয়ার কখনো আমাদের জানাননি। এটা আমাদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।’

এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ইনচার্জ মো. আব্দুল হালিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই শাখা পাঁচ বছর ধরে চলছে। আমাদের ২ হাজার ৬০০ এর মতো গ্রাহক আছে। যাদের ডিপোজিটের পরিমাণ ৬ কোটি টাকার ওপরে। এসব গ্রাহকের জমা দেওয়া টাকা আমরা নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকে জমা দিয়েছি। কিন্তু কিছু সংখ্যক গ্রাহকদের টাকা উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামান হাদি নিজে নিয়ে অন্য খাতে ব্যয় করেছেন। এই টাকার বিপরীতে উদ্যোক্তা নিজে এবং আমাদের দিয়ে গ্রাহকদের ব্যাংকের স্লিপ দিয়েছেন। উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামানের নেওয়া গ্রাহকদের টাকার পরিমাণ দেড় কোটির মতো হতে পারে।’

মো. আব্দুল হালিম আরও বলেন, ‘হাদিউজ্জামান প্রায় দুই মাস ধরে ব্যাংকে আসেন না। গ্রাহকেরা টাকা নিতে আসলে অন্য গ্রাহকদের টাকা দিয়ে সমন্বয় করতে বলেন। আমরা সেভাবেই করেছি। সর্বশেষ কয়েক দিন আগে অনেক চেষ্টা করে তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব জমি বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করে দেবেন।’

আব্দুল হালিম বলেন, ‘কিছু গ্রাহক আছেন যারা অতিরিক্ত লাভের আশায় ব্যাংকে টাকা না রেখে উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামানের সঙ্গে চুক্তি করে টাকা রেখেছেন। লাভও নিয়েছেন। এসব গ্রাহকের বিষয়ে আমরা ঠিকঠাক জানি না। এখন লাপাত্তার খবর শুনে তারা এসেছেন।’

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থানায় বিষয়টি অবহিত করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।’ এ বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের উদ্যোক্তার হাদিউজ্জামান হাদির বক্তব্য জানার জন্য কল দিলে তার মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত