‘যারা আমার বিরোধিতা করবে, তারা আল্লাহর সঙ্গে বিরোধিতা করবে’, আ. লীগ নেতার ভিডিও ভাইরাল

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ মে ২০২৪, ০০: ১৩
Thumbnail image

‘যারা আমার বিরোধিতা করবে, তাঁরা আল্লাহর সঙ্গে বিরোধিতা করবে’ এমন মন্তব্য করে কুষ্টিয়া জেলাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক সদর উদ্দিন খান। খোকসা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছোট ভাইয়ের নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি। 

তাঁর এমন বক্তব্যের ২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর থেকেই উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরাসহ সাধারণ ভোটারেরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। 

গত বুধবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের গোসাইডাঙ্গি গ্রামে তার ছোট ভাই রহিম উদ্দিন খানের নির্বাচনী পথসভায় তিনি এ সব কথা বলেন। 

ওই ভিডিওতে সদর উদ্দিন খানকে বলতে শোনা যায়, ‘আল্লাহ পাক উন্নয়ন করাবে আমাকে দিয়ে। যারা আমার বিরোধিতা করবে, তাঁরা আল্লাহর সঙ্গে বিরোধিতা করবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘শয়তানেরাও মসজিদে আসবে, শয়তানেরাও গোরস্থানে শোবে। শয়তানেরা মসজিদে এসে সুখে থাকতে পারবে না। কোনো ওয়াক্তে যাবে, কোনো ওয়াক্তে যাবে না। আর গোরস্থানে গেলে শয়তানদের যেভাবে মাটি চাপা হবে, আপনারা কল্পনাই করতে পারবেন না।’ 

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘আমি শয়তানের অনুসারীদের বলব-শয়তানের সাথে থেকে এই শাস্তি ভোগ করার দরকার নেই। যারা কয়েকজন শয়তান আছে থাক, তা বাদে সবাই আপনারা একসঙ্গে আসবেন। একসঙ্গে হয়ে জয় সুনিশ্চিত করেন। আল্লাহ পাকের রহমতে আজকে বলে গেলাম, জয় সুনিশ্চিত।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে তিনজন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি নেতারা বিচ্ছিন্নভাবে পক্ষ নেওয়ায়, আওয়ামী লীগের এই তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় বিশ্লেষকেরা। 

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীরা হলেন—উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান বাবুল আখতার, সিনিয়র সহসভাপতি রহিম উদ্দিন খান ও যুগ্ম সম্পাদক আল মাছুম মোর্শেদ। রহিম উদ্দিন খান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক সদর উদ্দিন খানের ভাই। তবে ডামি প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে দাঁড় করিয়েছেন রহিম উদ্দিন খানের ছেলেকে। যদিও তিনি প্রার্থী হলেও বাবার পক্ষে মাঠে ভোট করছেন। 

এ দিকে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদের জয়-পরাজয় নিয়ে নানা সমীকরণ চায়ের দোকান, বাস স্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, নদী পারাপারের ঘাটসহ সর্বত্র চলছে। দিন রাত প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা। 

এদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আখতার মোটরসাইকেল প্রতীকে লড়ছেন, সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর রহিম খান দোয়াত কলম প্রতীকে ও যুগ্ম সম্পাদক আল মাসুম মোর্শেদ ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। 

এ ছাড়া আটজন ভাইস চেয়ারম্যান ও তিনজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিশাল বিশাল বহর নির্বাচনী মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত জেলা মহিলা দলের সিনিয়র সহ সভাপতি ইসরাত জাহান পুনম পুরোদমে প্রচারণায় রয়েছেন। তিনি অবশ্য টানা তিন বারের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত। 

তবে এসবের বাইরে নির্বাচনের সামগ্রিক পরিবেশের বিষয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা শেখ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করা বিএনপি নেতারা দলটির জন্য গলার কাটা হতে পারে। চেয়ারম্যান পদের তিন প্রার্থীর সঙ্গে বিএনপি নেতারা নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছেন। আর এখানেই ঘটেছে বিপত্তি। বিএনপির নেতাদের ভোটে প্রধানপ্রার্থীরা নিজেদের সমানে সমান মনে করছেন। এটা কতটা কার্যকর হবে, তা বলা মুশকিল।’ 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা থাকলেও থাকতে পারে। তবে অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যা বর্তমান সরকার প্রধান প্রত্যাশা করছেন।’ 

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক সদর উদ্দিন খানের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনি কেটে দেন। 

প্রসঙ্গত, খোকসা উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৩ জন। যার মধ্যে ৫৭ হাজার ৩২০ জন পুরুষ এবং ৫৬ হাজার ৬৩৩ জন নারী ভোটার রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত