Ajker Patrika

জানালা দিয়ে ঘুমন্ত নারীদের ভিডিও ধারণ, রাত জেগে পাহারায় গ্রামবাসী 

শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ২১: ০২
জানালা দিয়ে ঘুমন্ত নারীদের ভিডিও ধারণ, রাত জেগে পাহারায় গ্রামবাসী 

রাতে ঘুমিয়ে পড়লে জানালা দিয়ে নারীদের নগ্ন, অর্ধনগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করত এক ব্যক্তি। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকলে গায়ে হাতও দিত সে। ঈদুল ফিতরের দিবাগত রাতে ছবি তোলার সময় তাকে ধরতে গেলে সে মোবাইল ফোন ফেলে পালিয়ে যায়। পরে তার মোবাইল ফোনে গ্রামের বিভিন্ন নারীর নগ্ন, অর্ধনগ্ন ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে। 

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের সাফখোলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকেই গ্রামটিতে হইচই পড়ে গেছে। এখন গ্রামবাসী ওই ব্যক্তিকে ধরতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। এখনো সেই যুবক গ্রেপ্তার হয়নি এবং তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে পুলিশ তৎপর হলেও এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি। 

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর ধরে গ্রামটিতে প্রতি রাতেই গভীর রাতে হাজির হতো এক যুবক। নারীরা ঘুমিয়ে পড়লে তাদের ঘুমন্ত অবস্থার আপত্তিকর ছবি তোলা ও ভিডিও করা হতো। এমনকি জানালা দিয়ে গায়ে হাত এবং পাটকাঠি দিয়ে নারীদের শরীরে খোঁচা দিত। 

ঘটনার দিন সাফখোলা গ্রামে রাত ৩টার দিকে ফেরদৌস নামে এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী ঘরে শুয়ে ছিলেন। এ সময় জানালা দিয়ে মোবাইলের ক্যামেরার লাল আলো দেখতে পেয়ে ফেরদৌস কৌশলে ওই ব্যক্তির হাত ধরতে যান। এ সময় সে মোবাইল ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর ওই মোবাইল ফোনে পূর্ব সাফখোলা থেকে পশ্চিম সাফখোলা ও আশুরহাট গ্রামের কমপক্ষে ১৫০ নারীর ঘুমন্ত অবস্থার বিভিন্ন সময়ে ধারণকৃত আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে। 

এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় হইচই পড়ে যাওয়ার পর থেকে এলাকাবাসী নিরাপত্তার জন্য রাত জেগে পাহারা দিতে শুরু করেছে। প্রথম দিকে অতটা কেউ টের না পেলেও মাঝেমধ্যে দু-একটি ঘটনার খবর এলাকাবাসী পেত। তবে অতীতে যেসব রাতে পাহারা দেওয়া হতো, সেসব রাতের কোনো ভিডিও পাওয়া যায়নি। 

উপজেলার সাফখোলা গ্রামের বাসিন্দা ফেরদৌস বলেন, ‘ঈদের দিন রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ৩টার দিকে আমার ঘুম ভেঙে গেলে ঘরের জানালা দিয়ে এক যুবককে মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তুলতে দেখি। আমি তাঁর হাত ধরার চেষ্টা করলে সে মোবাইল ফোন ফেলে যায়। পরে ওই মোবাইল ফোনে ধারণকৃত এলাকার বিভিন্ন নারীর নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি পাওয়া গেছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দোষী যুবককে খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।’ 

সাফখোলা গ্রামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘আমরা যদি নিরাপদে রাতে ঘরে শুয়ে না থাকতে পারি, এর থেকে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে! এভাবে রাতের অন্ধকারে মোবাইল ফোনে ছবি তোলা ঠিক না। আমরা এর শাস্তি দাবি করছি।’ 

এদিকে ওই মোবাইল ফোনে গ্রামের এক তরুণীর সিমকার্ড পাওয়া গেছে। তবে সেই সিমকার্ড কিছুদিন আগে তিনি এক কলেজপড়ুয়াকে দিয়ে দেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ওই তরুণী বলেন, ‘ওই মোবাইল ফোনে পাওয়া সিমকার্ডটা আমার। গ্রামের এক কলেজপড়ুয়া কিছুদিন আগে আমার থেকে নেয় এবং সে এ কথা কাউকে বলতে বারণ করে। এরপর থেকে সিমকার্ডটি তার কাছেই ছিল।’ 

এদিকে ঝিনাইদহের ডিবি পুলিশ ওই কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে সে পলাতক রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে ওই কলেজপড়ুয়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তার পরিবারের সদস্যরাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। 

নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আবু তাহের বলেন, ‘সাফখোলা গ্রামটিতে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাতে মা-মেয়েরা ইচ্ছামতো ঘুমিয়ে থাকে। তাদের ছবি তোলা মোটেও ঠিক না। এ ঘটনার পর থেকে এলাকার কেউ ঠিকমতো রাতে ঘুমায় না। আমি শৈলকুপা থানাকে অবহিত করেছি, এমন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির শাস্তি হওয়া উচিত।’ 

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঘটনা শুনেছি। বিষয়টি খুবই আপত্তিজনক। আমরা প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। তবে এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ভিসা নীতি দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে: বলছেন কূটনীতিকেরা

ফাইনালে ভারতের ‘যম’কে খেলানো নিয়ে দোটানায় নিউজিল্যান্ড

বিকেলে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ছাত্রদল ও এনসিপি

নিষিদ্ধ হিযবুত তাহ্‌রীরের মিছিল, পুলিশের টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে ছত্রভঙ্গ

ভারত ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত