২ কোটি টাকার সেতু এখন কাপড় শুকানোর জায়গা

ফয়সাল পারভেজ (মাগুরা) 
Thumbnail image
মাগুরা পৌরসভার নবগঙ্গা নদীর ওপরে নির্মিত সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাগুরা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামপুর পাড়ায় নবগঙ্গা নদীর ওপরে নির্মিত ২ কোটি টাকার আরসিসি গার্ডার সেতুটি কাজে আসছে না। সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সেতু নির্মাণের স্থান নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতু নির্মাণের স্থান নির্বাচন সঠিক স্থানেও হয়নি। কবে সেতুর এই সমস্যা সমাধান হবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।

মাগুরা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট মাগুরা শহরের ইসলামপুর পাড়ার পূর্বাশা ঘাট এলাকায় নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। শহরের সঙ্গে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পারনান্দুয়ালী চরপাড়া গ্রামের সংযোগ স্থাপনের জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং সংযোগ সড়ক নির্মাণে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। সেতুর দৈর্ঘ্য ৪০ মিটার এবং প্রস্থ ৬ দশমিক ৭ মিটার। এর মধ্যে ফুটপাতও রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো হলেও ২০২৩ সালের নভেম্বরেই সেতুটির উদ্বোধন হয়, কিন্তু সংযোগ সড়ক এখনো তৈরি হয়নি।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর সেতুটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাউফুজ্জামান শিখর এবং মাগুরা পৌরসভার মেয়র খুরশীদ হায়দার টুটুল। উদ্বোধনকালে তাঁরা জানান, শিগগিরই সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। তবে সরকার পরিবর্তনের পর পৌরসভায় নতুন নেতৃত্ব আসায় প্রকল্পের কাজ ধীর গতিতে এগোচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ করে জানান, সেতু নির্মাণকাজ পায় মেসার্স সৌরভ নিশিত জেবি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেতু নির্মাণের পর প্রতিষ্ঠানটি পুরো বিলের টাকা তুলে নিয়েছে। তবে ১০ শতাংশ টাকা জামানত হিসেবে মাগুরা পৌরসভার কাছে রাখা হয়েছে। এই টাকা কিছুদিনের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি তুলে নিতে পারবে। তবে সংযোগ সড়ক কীভাবে নির্মিত হবে সে বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি।

তাঁরা আরও জানান, সেতু উদ্বোধনের পর থেকে স্থানীয়রা বাধ্য হয়ে সেতু পার হতে সমস্যা অনুভব করছেন। সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক না থাকায়, তারা চলাচলের জন্য ঝুঁকি নিচ্ছেন। সেতুর দুপাশে কিছু স্থানীয়রা মাটি ও বালু ভরাট করলেও, তা দ্রুতই নদীতে ধসে গেছে। সেতু পার হওয়ার জন্য বয়স্কদের জন্য এটি বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া, সেতুর দুপাশে ব্যক্তিগত সম্পত্তির বাড়িঘর রয়েছে, যার কারণে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয়রা আদালতে মামলা করেছেন।

সরেজমিন আজ মঙ্গলবার দেখা গেছে, স্থানীয়রা সেতু পার হচ্ছে দুপাশে সংযোগ সড়ক ছাড়াই। সেতুর দুপাশে স্থানীয়দের উদ্যোগে সামান্য বালু ও মাটি ভরাট থাকলেও তা এখন ধসে গেছে নবগঙ্গা নদীতে। উঁচু জায়গা পারি দিয়ে সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে বয়স্কদের। সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়কের জায়গাতে রয়েছে ব্যক্তিগত জমিতে করা বাড়ি-ঘর। সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য ব্যক্তিগত জমি ব্যবহার না করা নিয়ে একটি মামলাও করেছে স্থানীয়রা।

স্থানীয় আমির হোসেন বলেন, ‘এই সেতুটি কোনো দরকার ছিল না। কারণ এর ২০ মিটার দূরেই একটি বড় সেতু ছিল। খুব অল্প কিছু মানুষের বসবাস এই সেতুকে ঘিরে। এখানে অল্প টাকায় একটি হালকা সেতু বানালে হয়তো এই সংযোগ সড়ক করতে সমস্যা হতো না। একদিকে সেতু নির্মাণে উচ্চ ব্যয় অন্যদিকে সড়ক না থাকায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে আমাদের। এখন মানুষ এর ওপরে কাপড় শুকায়। এ ছাড়া তো কোন কাজে আসছে বলে মনে হচ্ছে না।’

মাগুরা পৌরসভার নবগঙ্গা নদীর ওপরে নির্মিত সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাগুরা পৌরসভার নবগঙ্গা নদীর ওপরে নির্মিত সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেতুর পাশেই বাড়ি নওশের আলী। তিনি বলেন, ‘সেতুটি পার হতে গেলে খুব সতর্কতা নিয়ে পার হতে হবে। কারণ সড়ক নেই সেতুর দুপাশে। অনেকে সেতু পার হতে গিয়ে কোমরে ব্যথা পেয়েছেন। কেউ ছোট দুর্ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। বেশি সমস্যা হয়েছে এ এলাকার শিক্ষার্থীদের চলাচলে। আগে বাঁশের সাঁকো ছিল সেটাই ভালো ছিল। এত বড় সেতু নির্মাণ অর্থের অপচয় ছাড়া কিছু নয়।’

জানতে চাইলে মাগুরা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান বারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে স্থানীয়দের ওপরে ছেড়ে দিয়েছি। সেতুর সংযোগ সড়ক যে জায়গাগুলোতে হওয়ার কথা এর প্রায় অংশ সরকারি জায়গায়। কিছু ব্যক্তিগতও রয়েছে। বাড়ি-ঘরের মালিকেদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে এটা মীমাংসা করবে বলেছে। তাহলে সংযোগ সড়ক হয়ে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত