Ajker Patrika

দখল, দূষণে ৫ খাল নিশ্চিহ্নপ্রায়

  • দখল ও দূষণমুক্ত করতে একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও ভেস্তে গেছে দখলদারদের চাপে।
  • দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় নাব্যতা হারিয়ে খালগুলো ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
  • পানির প্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, বর্ষা মৌসুমে বিপাকে পড়ে পৌরবাসী।
এস এস শোহান, বাগেরহাট 
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৮: ১৩
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

দখল, দূষণে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে বাগেরহাট পৌরসভার অভ্যন্তরের সব খাল। দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় নাব্যতা হারানো খালগুলো এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পানির প্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এতে বর্ষা মৌসুমে রোগবালাইসহ বিভিন্ন ভোগান্তিতে পড়েছে পৌরবাসী।

এদিকে অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরিসহ দখল ও দূষণমুক্ত করতে প্রশাসন একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও দখলদারদের চাপে বারবার ভেস্তে গেছে সেসব উদ্যোগ। সরকারি তফসিলভুক্ত রেকর্ডীয় খালগুলো দখলমুক্ত এবং পুনঃখনন করে ভোগান্তি নিরসনের দাবি পৌরবাসীর। শুধু গতানুগতিক আশ্বাস নয়, বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে তারা।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাট পৌরসভার তফসিলভুক্ত খাল রয়েছে ৫টি। সেগুলো হলো নাগেরবাজার খাল, বাসাবাটি খাল, বাইলের খাল, সরুই ও হাড়িখালি খাল। তালিকাভুক্ত এই পাঁচ খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩ কিলোমিটার। এসব খালের সীমানার মধ্যে ৫ শতাধিক পাকা ইমারত এবং সহস্রাধিক টিন-কাঠের স্থাপনা রয়েছে। ময়লা-আবর্জনায় ভরা প্রতিটি খাল। তফসিলভুক্ত খাল ৫টির বাইরে হরিণখানা এবং ওয়াবদা নামের দুটি খাল রয়েছে। দুটিই এখন মৃতপ্রায়।

সরেজমিনে শহরের নাগেরবাজার খাল ঘুরে দেখা গেছে, শহরের প্রধান সড়কের নাগেরবাজার পোলের দুই পাশে বয়ে চলেছে নাগেরবাজার খাল। এই ব্রিজের এক পাশে খালের অর্ধেকজুড়ে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বশিরুল ইসলামের সুউচ্চ ভবন। পুরো খালের দুই তীরজুড়ে দখলের স্পষ্ট ছাপ। উভয় তীরে রয়েছে এ রকম অসংখ্য কাঁচা-পাকা স্থাপনা। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, খালটি একসময় ২৫-২৫ ফুট চওড়া থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১০-১৫ ফুট। তা-ও প্রতিনিয়ত দখলের চেষ্টা করছে প্রভাবশালীরা। দীর্ঘদিন খনন না করা এবং নিয়মিত ময়লা ফেলায় নাব্যতা নেই বললেই চলে। প্রবহমান খালটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা খাল দখল করে বড় বড় পাকা ভবন তৈরি করেছে। ফলে বর্ষার মৌসুমজুড়েই জলাবদ্ধতা থাকে। ওই সব এলাকার বাসিন্দারা বাসা ভাড়া দিতে পারে না। একবার বৃষ্টি হলে ১৫ দিন হাঁটুপানি থাকে। পানি নিষ্কাশনের কোনো অবস্থা নেই।

শহরের বাসাবাটি-পালপাড়া এলাকার উৎপল মণ্ডল বলেন, পৌরসভার ভেতর দিয়ে প্রবহমান খালগুলো দিয়ে একসময় বড় বড় নৌকা চলাচল করত। খালে গোসল ও সাঁতার কাটা যেত। এখন মরে গিয়ে খাল চেনার উপায় নেই। বর্ষা মৌসুমে পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমার দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

মহিউদ্দিন মিরণ নামের এক ব্যক্তি বলেন, কোথাও দখল, আবার কোথাও যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে খালগুলো মেরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব রেকর্ডীয় খাল দখলমুক্ত করে পুনঃখনন ও সংস্কার করা প্রয়োজন।

বাগেরহাট শহরের নাগেরবাজার এলাকার রুহুল আমিন বলেন, এই পৌরসভার মধ্যে একটা খালেও পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নেই। খালগুলো এখন মৃতপ্রায়। বিভিন্ন সময় মেয়র, ইউএনও, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ডিসি অফিসে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। খালগুলো যদি এভাবে মরে যেতে থাকে, তাহলে পৌরসভা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে।

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বাগেরহাটের সাধারণ সম্পাদক এস কে হাসিব বলেন, বাগেরহাট পৌরসভার খালগুলোর ওপর যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদের জন্য বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হলেও কিছুদিন পরে অজানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এই শহর দিনে দিনে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। শুধু গতানুগতিক আশ্বাস নয়, শহরকে বসবাসের উপযোগী রাখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালগুলো খনন করা প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী রিজভী বলেন, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৫টি খাল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেকটাই অবৈধ দখলে। ৫ শতাধিক স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে খালগুলোর অবস্থা এতটাই খারাপ যে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। সিটিসিএফটি প্রকল্পের মাধ্যমে কোস্টাল টাউনের ভেতরে এই ৫টি খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগির দরপত্র আহ্বান করে পৌরসভার ৫টি খাল সংস্কার করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। এতে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। এই প্রকল্পে সাড়ে সাত কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে দাবি এই কর্মকর্তার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত