Ajker Patrika

মাগুরায় সেতুর নিচের বালু দিয়ে নদ ভরাট করে তৈরি হচ্ছে বাসস্ট্যান্ড

ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৪, ১৩: ৩৮
মাগুরায় সেতুর নিচের বালু দিয়ে নদ ভরাট করে তৈরি হচ্ছে বাসস্ট্যান্ড

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় কুমার নদের সেতুর নিচ থেকে বালু উত্তোলন করে তৈরি হচ্ছে বাসস্ট্যান্ড। সমালোচনার মুখে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে নদ ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের কাজ। পাশেই একটি সরকারি স্কুল থাকলেও সে বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এই বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করায় স্থানীয়দের ক্ষোভটা আরও বেশি।

শ্রীপুর উপজেলার প্রবেশপথেই কুমার নদ। এর ওপরে ১০০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি কয়েক দশক আগে নির্মিত। এখন সামান্য দেড় টনের পিকআপ চলাচল করলেই সেতুটি কাঁপতে থাকে। এ অবস্থায়  সেতুর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করে ভরাট করা হচ্ছে নদের উত্তর পাশে পাড় ঘেঁষে।  এতে সেতুটি দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা এলাকাবাসীর। অন্য দিকে নদ ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণেও রয়েছে স্থানীয়দের ক্ষোভ।

শ্রীপুরে কুমার নদ ভরাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বালু ভরাটের কাজ শেষ। সেখানে একটি পাকা স্থাপনায় লেখা আছে যাত্রীছাউনি। উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পের (ইউজিডিপি) আওতায় এটি করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। সেতুর উত্তর পাশ থেকে সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষে প্রায় ১৫০ মিটার জায়গা বালু ভরাট করা হয়েছে। যার পুরোটাই কুমার নদের অংশ। বিদ্যালয়ের সীমানায় দেওয়া হয়েছে টিনের প্রাচীর।

উপজেলা প্রশাসন এ বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করছে। ছবি: আজকের পত্রিকাস্থানীয় বাসিন্দা জামিরুল মিয়া বলেন, এখানে বাসস্ট্যান্ড হলে রাস্তাটি সরু হয়ে যানজট সৃষ্টি করবে। অন্য কোথাও হলে ভালো হয়। তবে নদ ভরাট করে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করা ঠিক হয়নি। এমনিতেই নদে পানি থাকে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘২০২০ সালের জানুয়ারিতে একইভাবে নদ ভরাট শুরু হয় বাসস্ট্যান্ড করবে বলে। তখন সংবাদ প্রকাশ হলে প্রশাসন পিছিয়ে যায়। চার বছর পর আবার সেই বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করা হচ্ছে। নদের এত পরিমাণ জায়গা ভরাট করা হয়েছে যে মিনি একটি ফুটবল মাঠ হয়ে যাবে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জায়গা দখল করা হয়েছে বলে আমার ধারণা।  প্রশাসন করছে বলে কেউ মুখ খুলছে না।’

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ মহল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি সবার সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেখানে স্থানীয় সাংবাদিক প্রতিনিধিরা সম্মত ছিলেন।’ বালু ভরাটের তথ্য চাইলে তিনি তা দিতে আপত্তি করেন। বলেন, তথ্য অধিকারে আবেদন জমা দিতে।

বালু ভরাটের কাজ শেষে সেখানে একটি  পাকা স্থাপনায় করা হয়েছে যাত্রী ছাউনি। ছবি: আজকের পত্রিকাবাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের মাগুরা জেলার সভাপতি এ বি এম আসাদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসবই প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় হচ্ছে। নদের প্রবাহ যেন পরিবর্তন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার কথা যাদের, তারাই নদ ভরাট করে করছে স্থাপনা। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সরকারি খাসজমি কি নেই এটা করার?

নদ ভরাট করে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণে পাশে থাকা শ্রীপুর মহেশচন্দ্র পাইলট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।  

এ বিষয়ে  প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘শুনেছি বাসস্ট্যান্ড করবে প্রশাসন। যখন চালু হবে, তখন দেখা যাবে পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হয় কি না। আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সময় অনুযায়ী বলা যাবে বিষয়টি।’

তবে নদ-নদী ভরাট করার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান মাগুরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ। তিনি বলেন, ‘নদ-নদী কিংবা জলমহাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। শ্রেণি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশাসনিক অনুমতি প্রয়োজন। শ্রীপুর উপজেলায় একটি বাসস্ট্যান্ড প্রয়োজন এটা ঠিক আছে। তবে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নদ ভরাট করে অবশ্যই নয়। কেন এটা হচ্ছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জাতীয় নির্বাচন: ভোট কমিটির নেতৃত্বে ডিসি–ইউএনওকে না রাখার চিন্তা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিলুপ্তের সিদ্ধান্ত হয়নি, নাহিদের মন্তব্যের জবাবে উমামা

আ.লীগ নেতার গ্রেপ্তার নিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ

মাগুরার শিশুটি এখনো অচেতন, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ঈদে পুলিশের সহযোগী ফোর্স হবে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, পাবে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত