‘৫০০ টাহা ভাতা দিয়ে চাল কেনব, নাকি ওষুধ আনব’

তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৩, ১০: ৪৯
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৩, ১১: ০৬

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জাতপুর গ্রামের বিধবা কমলা দাসী (৬৫)। ১৯৮৮ সালে বন্যার সময় স্বামী হারানো এই নারী সতিনের ঘরের দুই সন্তানসহ ছয় ছেলে-মেয়েকে নানা কষ্টেশিষ্টে বড় করেছেন, বিয়েও দিয়েছেন। এখন অভাবের সংসারে তিনি একা। আয় বলতে বিধবা ভাতার মাসিক ৫০০ টাকা। এই দিয়ে কখনো আধপেটা, কখনো বা না খেয়েই দিন পার করছেন কমলা দাসী। 

আজকের পত্রিকার কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বাড়ির উঠানে কপালে হাত দিয়ে বসে ছিলেন তিনি। কমলা দাসী জানালেন, খুব কষ্ট হলে ছেলে-মেয়েরা মাঝে মাঝে কিছু টাকা বা খাবার কিনে দেন তাঁকে। 

কমলা দাসী বলেন, ‘সরকার আমারে বিধবা ভাতা দেয় মাসে ৫০০ টাহা করি। তিন মাস পরপর এই টাহা তুলতি পারি। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। শুনি সবারই নাকি বেতন বাড়ছে, কিন্তু আমার ভাতা তো বাড়তাছে না।’ 

বয়সের সঙ্গে কমলা দাসীর শরীরে বাসা বেঁধেছে বেশ কিছু রোগ। প্রায়ই একদম কাবু হয়ে পড়েন। তখন দিনের খাবারের সংকট ছাপিয়েও তীব্র হয়ে ওঠে আরেকটি মৌলিক চাহিদা। 

ষাটোর্ধ্ব এই নারী বলেন, ‘৫০০ টাহা দিয়া এখন ১০ কেজি চালও পাওয়া যায় না। একখান ভাঙা ঘরে থাই। ছাবালগুলার অবস্থা ভালো না, তাগির দিনও ঠিকমতো চলে না। মাঝে মাঝে অনেক অসুস্থ হইয়ে পড়ি, কয়দিন পরপর ওষুধ লাগে। এই টাহা দিয়ে চাল কেনব নাকি ওষুধ আনব।’ 

ভাতা পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভাতার পরিমাণটা বাড়ানোর আবেদন জানান তিনি। 

এ বিষয়টি নিয়ে কথা হয় তালা নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীরা মাসে ৫০০ টাকা ভাতা পান। কয়েক বছর ধরে একই পরিমাণ ভাতা পাচ্ছেন তারা।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে তাঁরা যে ভাতা পান, ১০ কেজি চাল কিনতেই তা শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ, একজনের ১০ দিনের চালের খরচও হয় না এই টাকা দিয়ে। যাদের অন্য কোনো আয় নেই, কাজ করতে পারেন না, তাদের এই অল্প টাকা দিয়ে আসলে কিছুই হয় না। এসব ভাতার পরিমাণ কমপক্ষে ১ হাজার টাকা হলেও কিছুটা চলত তাদের সংসার।’ 

এ বিষয়ে তালা সদর ইউপি চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেনের সঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে বিধবা ভাতা পান কমলা দাসী। তবে দরিদ্র কমলার পক্ষে মাসে ৫০০ টাকায় সংসার চালানো বেশ কষ্ট হয়ে যায়। সামনে কোনো সুযোগ থাকলে তাঁকে সাহায্য করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত