শ্রমিকনেতা বিপ্লবের পেটে ইউনিয়নের শতকোটি টাকা

খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ৪৭

২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত শ্রমিক দল খুলনা জেলার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জাকির হোসেন বিপ্লব। ২০০৬ সালে তিনি খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তবে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে বদলে ফেলেন রাজনৈতিক পরিচয়ও।

২০০৯ সালে বিপ্লব হয়ে যান শ্রমিক লীগ নগর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বহাল তবিয়তে থাকেন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদে। পদ ও ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে বছরের পর বছর নিয়ন্ত্রণ করেন খুলনার সোনাডাঙ্গা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। বিপ্লবের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সাম্প্রতিক অডিটে দেখা গেছে, দীর্ঘ বছর একই পদে থেকে তিনি আত্মসাৎ করেছে প্রায় শতকোটি টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা সিটি করপোরেশনের বিতর্কিত গত নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তবে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন প্রভাবশালী এই শ্রমিকনেতা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোনাডাঙ্গা থানার একটি ছিনতাই ও চাঁদাবাজি মামলায় জামিন নিতে গেলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন সাধারণ শ্রমিকেরা।

শ্রমিকেরা জানান, সোনাডাঙ্গা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন আড়াই লাখ টাকা আয় হয়। এই আয়ের সিংহভাগ চলে যায় মালিক-শ্রমিক সংগঠনের কতিপয় নেতার পকেটে। তাঁদের অন্যতম ভাগীদার এই বিপ্লব।

মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা পান্নু আলী শেখ বলেন, বিপ্লবের বিরুদ্ধে ৯৪ কোটি ৫৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক অডিটে এ চিত্র উঠে এসেছে। এগুলোর মধ্যে তিন বছরে ইউনিয়নের সব শ্রমিকের রিনিউ কার্ডের আয়ের ২৬ কোটি ৯০ লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ টাকা, ১৭ বছরে একই খাতে ১ কোটি ৫৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা, নতুন কার্ড দিয়ে আয় ১ কোটি ৩৪ লাখ ৭৩ হাজার ২৮০ টাকা, ইউনিয়নের জায়গায় দুটি পরিবহন কাউন্টার ভাড়া বাবদ ছয় বছরে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, ইউনিয়নের নিজস্ব ৪টি বাসের পাঁচ বছরে আয় ৯ লাখ টাকা, চারটি গাড়ি বিক্রি বাবদ ৪০ লাখ, ইউনিয়নের নিজস্ব জমি বিক্রি ১৮ লাখ, চারটি রুট বিক্রি বাবদ ২০ লাখ, ইউনিয়নের প্রতিদিনের চাঁদা হিসেবে ১৭ বছরে ৩১ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ইউনিয়নের ১০টি শাখা থেকে আয় ২০ লাখ ৪০ হাজার, সাধারণ সম্পাদকের মাসোহারা বাবদ ১৭ বছরে ৩১ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সাবেক সাধারণ সম্পাদকের রেখে যাওয়া ৪ লাখ টাকা, ইউনিয়নের সব রুটে নতুন গাড়ির বাড়তি চাঁদা ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া মৃত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়ার বিধান থাকলেও এক টাকাও দেওয়া হয়নি। এ পর্যন্ত ৬৫ জন শ্রমিক মারা গেছেন। এসব শ্রমিক পরিবারের টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৩০ সেপ্টেম্বর সোনাডাঙ্গা থানার একটি ছিনতাই ও চাঁদাবাজি মামলায় জামিন নিতে গেলে খুলনা মহানগর হাকিম-২ আদালতের বিচারক জামিন বাতিল করে বিপ্লবকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সম্প্রতি বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে আরও ৩টি মামলা হয়েছে।

কারাগারে থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে বিপ্লবের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি জাহিদ খান বলেন, ‘কোনো অনিয়ম হলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শ্রমিকেরা। গত মঙ্গলবার খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান তাঁরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত