স্বামীর মৃত্যুর পর জহুরার ঠাঁই অন্যের বারান্দায়, এখন ঝুপড়িতে

কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪, ১৬: ১৮

জহুরা খাতুনের বয়স ৫৮ বছর। স্থানীয়রা তাঁকে ‘ডুলি পাগলি’ বলে চেনেন। স্বামীর মৃত্যুর পর থাকতেন মানুষের ঘরের বারান্দায়। ভিক্ষা করে জীবিকা চালাতেন। এখন অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁর জায়গা হয়েছে একটি ঝুপড়ি ঘরে। ঝুপড়িটির অবস্থান ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার সলেমানপুর এলাকায় সড়কের পাশে। সরকারের সুযোগ-সুবিধা কখনই জোটেনি তাঁর ভাগ্যে। 

ঝুপড়িতে গিয়ে কথা হলে জহুরা জানান, ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে তাঁর বিয়ে হয়। ওই সংসারে একটি মেয়ে সন্তান আছে তাঁর। ৩০ বছর আগে তাঁর স্বামী খালেক হোসেন মারা যান। স্বামীর সহায়-সম্বল না থাকায় আশ্রয় নেন কোটচাঁদপুরের সলেমানপুর দাস পাড়ায়। থাকতেন মানুষের বারান্দায়। জীবিকার জন্য করতেন ভিক্ষা। তা দিয়ে নিজে খেতেন আর মেয়েকে মানুষ করতেন। এভাবে মেয়েটি বড় করে স্থানীয়দের সহায়তায় বিয়ে দেন। কিন্তু দুই বছর আগে তাঁর মেয়ে মারা যান। মেয়ের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। 

বয়সের ভারে অনেকটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন জহুরা খাতুন। সম্প্রতি শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ তিনি। ভিক্ষা করার সামর্থ্য হারিয়েছেন। ঠাঁই হয়েছে কোটচাঁদপুর পৌরসভার সলেমানপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সড়কের পাশের একটি ঝুপড়িতে। এটি তৈরি করে দিয়েছেন রুমা বেগম, রাহেলা বেগম, সাজেদা বেগম ও পারভিনা বেগম নামের স্থানীয় চারজন নারী। 

জহুরার অবস্থা দেখে মানুষের কাছ থেকে বাঁশ, টিন ও টাকা চেয়ে ওই নারীরা ঝুপড়ি ঘরটি তৈরি করে দিয়েছেন। সামর্থ্য না থাকলেও খাওয়া আর ওষুধ খরচ চালাচ্ছেন চার নারী। এভাবে বেশি দিন চালানো সম্ভব হবে না বলে জানান তাঁরা। 

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার সলেমানপুর এলাকায় ঝুপড়িঘরে জহুরা খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকাএ বিষয়ে রুমা বেগম বলেন, ‘জহুরাকে এলাকার মানুষ ডুলি পাগলি বললেই চিনেন। তাঁর বিয়ে হয়েছিল কালিগঞ্জের কোনো এক গ্রামে। তাঁর স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে কোটচাঁদপুর আসেন। সে প্রথম দিকে আমাদের বাসায় থাকত। এ ছাড়া এই পাড়ার অনেকের বাড়ির বারান্দায় বসবাস করেছেন। তিন-চার মাস ধরে সে আর চলতে পারছিল না।’ 

রুমা বেগম আরও বলেন, ‘যেখানে-সেখানেই প্রস্রব পায়খানা করছিলেন। এই কারণে ঘরে রাখা কষ্টের ব্যাপার ছিল। তাই আমরা কয়জনে মিলে মানুষের কাছ থেকে বাঁশ ও টিন আর কিছু টাকা নিয়ে রাস্তার পাশের ওই জমিতে ঝুপড়ি বানিয়ে দিয়েছি। এখন ওখানেই থাকছেন। খাবার আর ওষুধসহ সব দেখাশোনা করছি আমরাই। এভাবে বেশি দিন চালানো হয়তো আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে যাবে।’ 

জহুরা কোটচাঁদপুরের বাসিন্দা না বলে জানান রুমা বেগম। তবে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে থাকায় ভোটার কার্ড এই এলাকার ঠিকানায় হয়েছে। সে অনুযায়ী জহুরা খাতুনের বাবা হলেন ইপা মণ্ডল ও মা নেছারুন খাতুন। কোটচাঁদপুরের সলেমানপুর দাস পাড়ায় এখন তাঁর ঠিকানা।’ তিনি আরও বলেন, ‘সে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। আর তাঁর স্বামী মারা গেছেন ৩০ বছর হলো। এরপরও সরকারের কোনো সুযোগ-সুবিধা আজও জোটেনি তাঁর কপালে।’ 

কোটচাঁদপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘জহুরার ঘটনা আগেই জেনেছি। ওই ধরনের মানুষ অবশ্যই সরকারি সহযোগিতার যোগ্য। তবে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় অনেককে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি। তেমন কেউ আসেননি তাঁর সহযোগিতায়। এ কারণে তিনি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত