জামায়াতের সমাবেশে গিয়ে শেখ হাসিনাকে জাসদ নেতার বিষোদগার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ১৩
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮: ০০
Thumbnail image
কুষ্টিয়ায় জামায়াতের সমাবেশে জাসদ নেতা। ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমির অডিটরিয়ামে জামায়াতের আয়োজনে গতকাল শুক্রবার রাতে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। সমাবেশে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কুমারখালী উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়দেব বিশ্বাস। এ সময় তিনি শেখ হাসিনা সরকারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরে বক্তব্য দেন।

এদিকে জামায়াতের সুধী সমাবেশে জাসদ নেতার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সেই বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। ভিডিওটি ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে।

৫ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে জয়দেব বিশ্বাসকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রধান অতিথি যেখান থেকে শেষ করেছিলেন আবার সেখান থেকে শুরুটা হয়েছিল। আবার শেষটা কবে হবে, কীভাবে হবে তা আমি জানি না। উনি যথাসময়ে শেষটা করেছিলেন বলেই আজকে সারা বাংলাদেশের মজলুম জনগণ ও নিবেদিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করার সুযোগটা পেয়েছেন। এখানে আপনারা আছেন। আপনাদের ওপরেও যেভাবে অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুম হয়েছে।’

জয়দেব বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা অনেক সময় চায়ের দোকানে বসে গল্প করি। যাঁর বয়স ৮০ বছর, ৮৫ বছর। অপরাধ যদি হয়েও থাকে, সেই লোকটাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করতে হবে এমনটা কি সারা পৃথিবীর কোথাও আছে? অতএব আজকের যে এই অবস্থা, এই অবস্থা তৈরি হওয়ার পেছনেও বিষয়গুলো এখানে চলে আসছে। ঘা হলে তো, ফোঁড়া হলে তো তখনই বাস্ট হবে না। সাঈদী সাহেবের যখন ফাঁসির আদেশ হলো, আমাকে বলেন তো, যারা আওয়ামী লীগ করত তাদের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ কেউ চায়নি যে সাঈদী সাহেবের ফাঁসি হোক। আর সাধারণ মানুষ, জনগণ বিভিন্ন দল, আপনারা তো চানইনি।’

জাসদের এই নেতা বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা নেই। ব্যাংকের টাকা লুট হয় সারা পৃথিবীর কোথায় আছে। হ্যাঁ, ঘুষ কম-বেশি সব জায়গায় আছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সম্পদ যেটা নিরাপদে রাখা হয় ব্যাংকে। সেই ব্যাংকে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা নেই। সেখানে আবার স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, চেতনা।’

জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি ৫ আগস্টের পর ভারতে গিয়েছিলাম। আপনারা জানেন, সেখানে একটি হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে হত্যার প্রতিবাদে বড় আন্দোলন হয়েছিল। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে ধাক্কাইছে। কিন্তু পুলিশ একটা ধাক্কাও কাউকে দেয়নি। আর আমাদের কী হলো?’

সমাবেশে উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক বলেন, আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত জামায়াতের কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে কুষ্টিয়ায় আসেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি শুক্রবার রাত ৬টা ৪৪ মিনিটে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমির অডিটরিয়ামে পৌঁছান। সেখানে তিনি পূর্বনির্ধারিত দুর্নীতি ও শোষণ মুক্ত বৈষম্যহীন দেশ গড়ার লক্ষ্যে আয়োজিত সুধী সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশে বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই মঞ্চে জয়দেব বিশ্বাস জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের প্রতিনিধি হয়ে বক্তব্য দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের এক নেতা বলেন, সুধী সমাবেশে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। জয়দেব বিশ্বাসের নেতৃত্বে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিলয় কুমার সরকার, রবীন্দ্রনাথ সেনসহ আটজন মতবিনিময় সভায় যান।

আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদ। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা চালিয়ে হত্যার অভিযোগে দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসানুল হক ইনু কারাগারে। এ সময় একজন জাসদ নেতার জামায়াতের মঞ্চে বক্তব্য দেওয়াটাকে অনেকে ভালো চোখে দেখছেন না। খোদ জাসদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অসিত সিংহ রায় তাঁকে আত্মঘাতী নেতা মন্তব্য করে বলেন, ‘এ বড় লজ্জার।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি অনুপ নন্দী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর একাধিক হত্যা মামলার আসামি হয়ে পলাতক রয়েছেন তিনি। এদিকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়দেব বিশ্বাস কুমারখালী উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক। ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় তাঁর বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এরপর থেকে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদকে পুঁজি করে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করে কৌশলে নিজেকে নিরাপদ রেখেছেন।

কুষ্টিয়ায় জামায়াতের সমাবেশে জাসদ নেতা। ছবি: সংগৃহীত
কুষ্টিয়ায় জামায়াতের সমাবেশে জাসদ নেতা। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা জাসদের সভাপতি আব্দুল হান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁর কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়দেব বিশ্বাস। কিন্তু সংগঠনের কোনো কার্যক্রম নেই। জামায়াতে সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি তিনিও জেনেছেন। তিনি বলেন, ‘সুধী সমাবেশে যাওয়া নিয়ে আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। সে তার ব্যক্তি ইচ্ছায় বক্তব্য দিয়েছে।’

এ ব্যাপারে জয়দেব বিশ্বাস বলেন, “পূজা উদ্‌যাপন পরিষদকে মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তাঁরা ‘যেতে পারো’ বলেছিলেন। সঙ্গে আরও আটজন ছিল। প্রতিনিধি হিসেবে আমি বক্তব্য দিয়েছি।” তবে জাসদ নেতা হয়ে জামায়াতের মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে কথা বলতে কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত