Ajker Patrika

সন্তান প্রসব করলেন সেই বাকপ্রতিবন্ধী তরুণী, খোঁজ মেলেনি পরিবারের

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ২০: ১৯
সন্তান প্রসব করলেন সেই বাকপ্রতিবন্ধী তরুণী, খোঁজ মেলেনি পরিবারের

মেহেরপুরের গাংনীতে এক দিনমজুরের বাড়িতে আশ্রয় পাওয়া বাকপ্রতিবন্ধী অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন। আজ শনিবার বিকেল তাঁকে আশ্রয়দাতা মোহাসিন আলীর বাড়িতেই নবজাতকের জন্ম হয়। এতে ব্যাপক আনন্দ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রাসহ ওই পরিবারের সবাই। তাঁরা মেয়েশিশুটির নাম রেখেছেন ফাতেমা। 

তবে, এখনো পাওয়া যায়নি ওই তরুণীর পরিবারের সন্ধান। 

স্থানীয়রা বলছে, গতকাল রাতে ওই তরুণীকে স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হলে ২০ দিনের মধ্যে সন্তান প্রসব হতে পারে বলে জানানো হয়। পরে আজ বিকেলে হঠাৎই তাঁর প্রসব ব্যথা শুরু হলে, মোহাসিন আলীর স্ত্রীসহ স্থানীয় ধাত্রীর সহযোগিতায় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নবজাতকের জন্ম হয়। 

স্থানীয় চিকিৎসক জানিয়েছেন, মা ও নবজাতক শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছে। 

মোহাসিন আলীর প্রতিবেশী টুটুল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধী মেয়েটি আজ কন্যাসন্তানের মা হলো, আলহামদুলিল্লাহ। আমরা পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়েছি। মেয়েশিশুটি অনেক সুন্দর হয়েছে। আমরা সবাই দুজনেরই খোঁজখবর রাখছি। আমরা সর্বোচ্চ দিয়েই তাঁর যত্ন করছি। কোনো অবহেলা হবে না ইনশা আল্লাহ।’ 

তরুণীকে বাড়িতে আশ্রয়দাতা মোহাসিন আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মেয়ে হওয়ার সময় যে আনন্দ পেয়েছিলাম, আজও যেন আমার ঘরে সে রকম আনন্দ ফিরে আসল। আল্লাহর রহমতে শিশুটার দিকে তাকালে মন ভরে যাচ্ছে। আমরা তার নাম রেখেছি ফাতেমা।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল যখন তাঁর পেটে যন্ত্রণা করছিল আমরা সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে গেছিলাম। ডাক্তার বলেছিল ২০ থেকে ২১ দিন পর বাচ্চা হবে। কিন্তু আল্লার কী রহমত এক দিন পরেই অপারেশন ছাড়াই নরমালে বাড়িতে বাচ্চা হয়ে গেল। কন্যাসন্তান হওয়ার সংবাদ শুনে দু-তিনজন নিতেও চেয়েছেন, কিন্তু আমি না করেছি। কোনো সময় তাঁর পরিবারের খোঁজ পাওয়া গেলে তাদের হাতে তুলে দেব।’ 

তরুণীর অবস্থা সম্পর্কে মোহাসিন আলী বলেন, ‘মেয়েটার (তরুণী) দিকে তাকালে খুব কষ্ট হচ্ছে! মনে হচ্ছে সে কোনো অজানা কষ্টের কারণে কথা বলছে না। তার সন্তান হয়েছে, কিন্তু সে কিছুই বুঝছে না! অবাক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়েই থাকছে!’ 

মোহাসিন আলীর স্ত্রী জোছনা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি সন্তানের মতো তাকে দেখাশোনা করছি। আমি নানি হলাম! বাচ্চাটার (শিশু) দিকে তাকালে আনন্দে মনটা ভরে যাচ্ছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, যেন দ্রুত তার পরিবারের খোঁজ মিলিয়ে দেন। আমরা চাই সে তার পরিবারের কাছে ফিরে যাক। হয়তো তার পরিবারও তাকে খুঁজছে।’ 

স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক আব্দুল বাকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধী মেয়েটির কন্যাসন্তান হওয়ায় আমরাও অনেক আনন্দিত। আমি তার চিকিৎসার জন্য কোনো টাকা নিইনি। ওষুধপত্র যা লাগবে সব দিয়ে দিয়েছি। মা ও মেয়ে শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছে।’ 

বামন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান কমল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই তরুণীর কোলজুড়ে সুন্দর কন্যাসন্তান আসায় আমরা সবাই আনন্দিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে সহযোগিতা করেছি। মা ও সন্তানের যেন কোনো অবহেলা না হয়, সে কারণে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। আমি বিষয়টি দেখভালের জন্য ইউএনও মহোদয়কে অনুরোধ করছি।’ 

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই বাকপ্রতিবন্ধী তরুণীর সন্তানের খবর শুনে খুশি হয়েছি। আমরা সবখানে তার পরিবারের সন্ধানে খোঁজখবর নিচ্ছি। এখনো কোনো সন্ধান পায়নি।’ 

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আরশেদ আলী বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলব। তিনি যে নির্দেশনা দেবেন, সেই অনুযায়ী করব।’ 

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত