‘সুনামে তো পেট ভরে না’

মো. মাহবুব-উল-আহসান উল্লাস, খোকসা (কুষ্টিয়া) 
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২১, ০৯: ০০

কুষ্টিয়ার খোকসা পৌর এলাকায় ১০টি পরিবার বাঁশের চাটাই তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বংশ পরম্পরায় চাটাই শিল্পকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছেন তাঁরা। তবে অদূর ভবিষ্যতে এ শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন তাঁরা।

বাঁশ দিয়ে তৈরি চাটাই শিল্পই এই পরিবারগুলোর একমাত্র পেশা। ওই পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এ কাজে বাড়ির বউ-ঝি থেকে শুরু করে, স্কুল, কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়েরাও লেখাপড়ার পাশাপাশি বড়দের কাজে সহযোগিতা করে থাকে।

বছরের পর বছর তারা বাঁশের তৈরি চাটাইয়ের পাশাপাশি ডালি, কুলা, ধান রাখার ডোল ও মাছ ধরার উপকরণ তৈরি করছেন।

চাটাই তৈরির কারিগর ষাটোর্ধ্ব আয়নাল হোসেন বলেন, ‘চাটাই তৈরির বাঁশ আমরা চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসি। এক ট্রাক বাঁশের মূল্য দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। চাটাইয়ের মানভেদে প্রতি বর্গফুট ৬০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে আগের মতো এখন আর তেমন একটা লাভ হয় না। শুধুমাত্র জীবিকার তাগিদে এসব কাজ করছি। কেউ কেউ অন্য পেশায় চলে গেছেন।’

চাটাই তৈরির অপর কারিগর মো. খোকন (৩০) বলেন, ‘এ পেশা আমরা পেয়েছি বংশপরম্পরায়। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের কাছ থেকে বাঁশ দিয়ে এসব পণ্য তৈরির কৌশল শিখেছি। এই কুটির শিল্পে আমাদের অনেক সুনাম ছিল। কিন্তু সুনামে তো পেট ভরে না। দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে সকাল-সন্ধ্যা খাটতে হয়। অভাবের কারণে ছেলে-মেয়েদেরও লেখাপড়া করানো সম্ভব হয় না।’

অপর চাটাই কারিগর জাহিদুল ইসলাম জাহিদ (৪৫) বলেন, বর্তমানে বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাটাই তৈরিতে খরচ কিছুটা বেশি হচ্ছে। সেই সঙ্গে অর্থের অভাবে তারা চাহিদা মাফিক বাঁশ কিনতে পারছেন না। সরকারি অথবা বেসরকারি সহায়তা পেলে চাটাই শিল্প রক্ষা ও প্রসার করা সম্ভব।

কথা হয় কলেজছাত্রী নুর এ তাবাসুমের (১৭) সঙ্গে। তিনি জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি বড়দের এ কাজে সহযোগিতা করছেন তিনি। তাবাসুমের মতো রেহানা, মাজেদা ও দিশা জানান, দিনের অধিকাংশ সময় তাঁরা দল বেঁধে বাড়ির আঙিনায় বসে চাটাই তৈরি করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহউদ্দিন বলেন, ‘বাঁশ ও বেত শিল্প বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটি অংশ। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত