Ajker Patrika

খুলনার দিঘলিয়া

শেখ পরিবারকে ১০% কমিশন দিয়ে কাজ বাগাতেন হায়দার আলী

  • সরকারি ও আশ্রয়ণের জমি অধিগ্রহণের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ।
  • টিআর-কাবিটা, গভীর নলকূপসহ উন্নয়ন প্রকল্প থেকেও অর্থ আত্মসাৎ।
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৫৫
হায়দার আলী মোড়ল
হায়দার আলী মোড়ল

একসময় জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে যোগ দেন বিএনপিতে। ক্ষমতার খোলস বদলে পরে হয়ে যান আওয়ামী লীগের নেতা। এ চরিত্র খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হায়দার আলী মোড়লের। অভিযোগ রয়েছে, তিনি স্ট্যাম্পে চুক্তি করে খাসজমির পজিশন বিক্রি করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের টাকা আত্মসাৎ, টিআর-কাবিটা প্রকল্পের কাজে নয়-ছয় করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

শুধু তা-ই না, শেখ পরিবারকে ১০ শতাংশ কমিশন দিয়ে বহু ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে খুলনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সালাম মূর্শেদীর আস্থাভাজন এই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর তাঁর দোসররা দেশ ছেড়ে পালালেও সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, গভীর নলকূপের বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এলজি-এসপি প্রকল্প, হাটবাজার, উন্নয়ন তহবিল, উপজেলা পরিষদের বরাদ্দ, কর্মসৃজন প্রকল্পসহ সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন হায়দার আলী।

জেলা প্রশাসক বরাবর অবরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য খসরুল ইসলামের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দিঘলিয়া গ্রামের খসরুল তাঁর নামীয় বম্রগাতী মৌজার সর্বমোট ০.৭৮৭১ একর জমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য শতকপ্রতি ৭৫ হাজার টাকা করে বিক্রিতে চুক্তিবদ্ধ হন। সে মোতাবেক ২০২২ সালের ২৯ মার্চ জমি রেজিস্ট্রি করার সকল কাজ সম্পন্ন হলে সেই মুহূর্তে ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল বলেন, ‘খসরুলের জমি রেজিস্ট্রি হবে না তাঁর ব্যাংকের ফাঁকা চেক না দেওয়া পর্যন্ত।’

খসরুল জানান, তাৎক্ষণিক তিনি বাসা থেকে তাঁর নামীয় সোনালী ব্যাংক দিঘলিয়া শাখার দুটি চেক তাঁকে দেওয়ার পর দিঘলিয়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসে জমি রেজিস্ট্রি হয়। পরে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম তাঁকে ৫০ লাখ টাকার চেক দেন। তিনি তাৎক্ষণিক দিঘলিয়া সোনালী ব্যাংক শাখায় তাঁর অ্যাকাউন্টে চেক জমা দেন।

খসরুল বলেন, তিনি চেক জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হায়দার একটি চেকে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৭৫০ টাকা এবং আরেকটি চেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে নেন। চেক ফেরত চাইলে টালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে বলেন, ‘জামানত বাবদ টাকা নেওয়া হয়েছে, জমি মিউটিশন হওয়ার পর টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’ পরে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। অপর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দিঘলিয়া উপজেলার ৩৬ নম্বর পানিগাতি মৌজার খাস সরকারি ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত (আরএস ৪৮৪৬ নম্বর দাগ) ১৭ একর জমির ওপর ছিল মাছের বাজার। সেই মাছের বাজারের জমির ৮টি দোকানের পজিশন স্ট্যাম্পে বিক্রি করে দেন হায়দার।

এভাবে আরও অনেক ব্যক্তিগত ও সরকারি জমি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন হায়দার। তাঁর নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পত্তি, যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। পথের বাজারের মাংস ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম শেখ ও মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নতুন মাংসের চান্দিনা (শেড) হয় ২০১২-১৩ সালে। এখানে ১৬টি মাংসের দোকান আছে। প্রতিটি মাংসের দোকান থেকে হায়দার আলী মোড়ল ৫০ হাজার টাকা করে নিয়েছে। এখানে গরু জবাই (কসাইখানা) জায়গাটারও পজিশন বিক্রি করে দেন। বাইরে থেকে গরু জবাই করে এনে বাজারে বিক্রি করা হয়। টাকা দেওয়ার পরই আমরা ব্যবসা শুরু করছি।’

অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে হায়দার আলী বলেন, ‘পথের বাজারে নতুন চান্দিনাতে মাংস ব্যবসায়ীদের পজিশন দিয়ে টাকা নেওয়া হয়েছিল। আর পুরাতন মাছ বাজারে স্ট্যাম্পে পজিশন বিক্রি করা হয়। মাছ ব্যবসায়ীদের নতুন বাজারে পজিশন দেওয়ার কারণে পুরাতন মাছ বাজারে আমার সঙ্গে আদল-বদল হয়। আর এ কারণে পুরাতন বাজারের পজিশন বিক্রি করি। নতুন মাছ বাজার থেকে মঞ্জু, মারুফ ও আনিছ খাঁ আমার কাছ থেকে কিছু পজিশন নিয়ে বিক্রি করেছেন। আমরা কোনো কাজ নেওয়ার সময় শেখ পরিবারকে ১০ শতাংশ কমিশন দিয়েছি। আর গভীর নলকূপ ও টিআর-কাবিখার কাজেও ১০ শতাংশ কমিশন নিয়েছেন সালাম মূর্শেদীর পিএস আকতার।’

দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, খাসজমির পজিশন বিক্রি ও হস্তান্তর করার সুযোগ নেই। অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ‘বাঁচা-মরা’র ম্যাচের আগে ধাক্কা খেল পাকিস্তান

নির্বাচনের আগে জোট নয়, এনসিপির সঙ্গে কাজ করার ইঙ্গিত বিএনপির

জয়পুরে সম্প্রীতির নজির, ঈদগাহে আসা মুসলিমদের ওপর ফুল ছিটালেন হিন্দুরা

বাসা ভাড়ার টাকা নেই, অফিসের টয়লেটেই থাকছেন চীনা তরুণী

ঈদের মোনাজাতে খালেদা জিয়ার নাম না বলায় ইমামকে হেনস্তা, চাকরিচ্যুতির হুমকি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত