Ajker Patrika

বোরো কাটার মৌসুমে মনিরামপুরে জমজমাট শ্রমিকের হাট

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ১৬: ০৯
বোরো কাটার মৌসুমে মনিরামপুরে জমজমাট শ্রমিকের হাট

যশোরের মনিরামপুরে প্রতিবছর বোরো ধান কাটার মৌসুমে বসে ‘জন বেচার হাট’। মূলত এই হাটে আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিকেরা ও জমির মালিকেরা এসে জড়ো হন। এরপর সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী দিন ও টাকার চুক্তিতে শ্রমিকদের একরকম কিনে নিয়ে যান জমির মালিকেরা। 

আজ বুধবার ভোরেও মনিরামপুর উপজেলার পুলেরহাট-রাজগঞ্জ সড়কের হানুয়ার বটতলা মোড়ে বসেছে এ মৌসুমে শ্রমিকের হাট। 

সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল এমনকি অন্য উপজেলা থেকে ধান কাটার সরঞ্জাম নিয়ে দলে দলে শ্রমিকেরা এখানে এসে জড়ো হয়েছেন। রাজগঞ্জ অঞ্চলসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ধানচাষি বা জমির মালিকেরা ভোর থেকে জড়ো হয়েছেন শ্রমিক কিনতে। চলছে দুই পক্ষের দর-কষাকষি। হিসাব মিললে খেতের মালিকেরা ভ্যান, অটোরিকশা বা মোটরসাইকেলে শ্রমিক তুলে নিয়ে রওনা হচ্ছেন মাঠে। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হানুয়ার বটতলা মোড়ে শ্রমিক কেনাবেচার হাট বসে বহু বছর ধরে। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘জন বেচার হাট’ নামে পরিচিত। মৌসুমে প্রতিদিন ভোরে এভাবে মানুষের কোলাহলে জমে ওঠে হানুয়ার বটতলার শ্রমিকের হাট। এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে বেচাকেনা শেষে ফাঁকা হয়ে যায় এই হাট। 

জমিরা মালিক বা ধানচাষিরা বলেন, এখানকার শ্রমিকেরা বেশ শৌখিন। বেলা ১০টার পর আর কেউ কাজ করতে চান না। কাজ শেষে মালিকের বাড়িতে গরম ভাত খেয়ে মজুরি নিয়ে তাঁরা বেরিয়ে পড়েন। অনেক শ্রমিক আবার ডাল-তরকারি খেতে চান না। এ জন্য কাজে লাগার আগে তাঁরা মালিকের সঙ্গে মাংস ভাতের চুক্তি পাকা করে নেন। 

হানুয়ার বটতলা মোড়ের সাইকেল গ্যারেজের প্রবীণ মিস্ত্রি আব্দুল মমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছোট্টকাল থেকে দেখছি এ মোড়ে জন কেনার হাট বসে। ধান কাটার সিজন (মৌসুম) আসলি আশপাশের শাহানুর, রত্নেশ্বরপুর, হায়াতপুর, নেংগুড়া, চালুয়াহাটি, রামপুর, রসুলপুর, হরিসপুর, শয়লা, মশ্মিমনগর, কাশিপুর এমনকি কেশবপুরসহ ১৫-২০ গ্রামের লোকজন কাজের জন্যি এখানে এসে ভিড় করে। ফজরের আজান দিলে লোক আসা শুরু হয়। এরপর আশপাশের খেতের মালিকেরা এমনকি পাঁচ-সাত মাইল দূর থেকে লোক এসে তাঁদের কিনে নেয়। গোয়ালদাহ, রোহিতা, খেদাপাড়া, খাটুরা, দশআনিকোলা, এনায়েতপুর থেকেও লোকজনকে শ্রমিক কেনার জন্য এখানে আসতে দেখেছি।’ 

ঝাঁপা গ্রামের ধানচাষি শাহিনুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তিন বিঘা জমির ধান কাটতে ঈদের আগে হানুয়ার মোড় থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা করে ছয়জন শ্রমিক কিনেছি। এলাকার লোক দিয়ে ১ হাজার ১০০ টাকা মজুরিতে সেই ধান বাঁধার কাজ করিয়েছি। পরে ধান বাড়ি নিতে এলাকায় শ্রমিক না পেয়ে গত রোববার ভোরে আবার হানুয়ার মোড়ে গিছি। সেখানে শ্রমিকের চেয়ে খেতের মালিক বেশি। শ্রমিক কিনতে না পেরে রাজগঞ্জ বাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে আটজন শ্রমিক কিনেছি। সকাল সাড়ে ৬টায় কাজে যোগ দিয়ে বেলা ১০টায় সবাই কাজ ছেড়ে দেছে। এরপর মাংস-ভাত খেয়ে টাকা নিয়ে তাঁরা চলে গেছে।’ 

শাহিনুর রহমান আরও বলেন, ‘এলাকার মাঠে ধান কাটার কাজ একসঙ্গে শুরু হওয়ায় বেশি দামে লোক কিনতে হয়েছে। অনেক শ্রমিক আবার ভালো থাকার আশায় বিদেশে চলে গেছে। এ জন্য শ্রমিকের সংকট দেখা দেছে। ঈদের পরের দিন রাত থেকে আকাশে মেঘ ছিল। ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কায় দেড় হাজার টাকা হাজিরা দিয়ে কাটা ধান বাড়ি তুলেছি।’

মনিরামপুরের হানুয়ার বটতলা মোড়ে ধান কাটার শ্রমিকের ভিড়বিল্লাল হোসেন নামে এক শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কেশবপুর মূলগ্রাম থেকে তিনজন এসেছি। ১২ কাঠা জমির ধান বওয়ার কাজ দুই হাজার টাকায় নিছি।’

কাশিপুর গ্রামের শ্রমিক রোস্তম হোসেন বলেন, ‘তিন দিন ধরে এখানে কাজের জন্যি আইছি। প্রথম দিন ৭৫০ টাকা, মাঝের দিন ৬৫০ টাকা হাজিরা পাইছি। আজ ৭০০ টাকায় কাজ ঠিক হয়েছে।’ 

দীঘিরপাড় গ্রামের চাষি রুবেল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক বিঘা ধান কাটার জন্য দুজন শ্রমিক নিছি। দুজনকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দিতে হবে।’ 

এদিকে শয়লা গ্রামের নবম শ্রেণি পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থী হানুয়ার বটতলায় কাজের খোঁজে এসেছে বুধবার সকাল ৬টায়। এর আধঘণ্টা পর শ্রমিক কেনাবেচার হাট ভেঙে গেছে। তখনো এ দুই শিক্ষার্থী কাজ পায়নি। 

উপজেলার দীঘিরপাড় গ্রামের আবু মুসা বলেন, ‘দুদিন আগে ১ হাজার টাকায় জন কিনে ধান কাটাইছি। আজ বান্ধার জন্যি লোক কিনতে আইছি। দামে না পড়ায় লোক নিতে পারিনি।’ 

গত দুই বছর ধরে রাজগঞ্জ বাজারের চৌরাস্তা মোড়েও শ্রমিক কেনাবেচার হাট বসছে। যাঁরা হানুয়ার মোড়ে শ্রমিক কিনতে ব্যর্থ হন তাঁরা রাজগঞ্জ মোড় থেকে শ্রমিক কেনেন। আমন ধান কাটার সময়ও কিছু শ্রমিক বাইরে থেকে এখানে আসেন। তবে বোরো মৌসুমে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। 

রাজগঞ্জ অঞ্চলে এবার শ্রমিকের দর খুব চড়া। ধান কাটার মৌসুমের শুরু থেকে এখানে ৬৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় শ্রমিক বিক্রি হয়েছে। গত বোরো মৌসুমে শ্রমিকের দর ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা। একেক মালিক একেক দরে এখান থেকে শ্রমিক কেনেন। যেদিন শ্রমিক কম আসে, সেদিন দাম বেড়ে যায়। আবার অনেকে কাজ না পেয়ে বা শ্রমিক না পেয়ে ফিরে যান। 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মমিন (৭০) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের পাশাপাশি নতুন করে দুই বছর হবে রাজগঞ্জ বাজারে শ্রমিক কেনার হাট বসছে। হানুয়ার মোড়ে ভোরবেলায় শ্রমিক ও মালিকপক্ষের এত ভিড় থাকে যে একটা মোটরসাইকেলও পার হতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত