শুল্ক বাড়ানোর প্রতিবাদে বেনাপোল বন্দরে ৩ দিন ধরে পণ্য খালাস বন্ধ

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৪, ১৬: ০০
আপডেট : ২৯ জুন ২০২৪, ১৬: ৪৩

মাছ, ফল ও সবজিজাতীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর প্রতিবাদে বেনাপোল বন্দরে তিন দিন ধরে অর্ধশতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক খালাস বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। তাতে সরকার যেমন রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি আটকে থাকা পণ্য পচে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এদিকে এনবিআরের নতুন নির্দেশনায় বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং দেশের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষোভ জানিয়ে নতুন নীতিমালা বাতিলের দাবিতে ইতিমধ্যে বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, এনবিআরের আদেশ তারা পালন করছে কেবল। ব্যবসায়ীদের দাবি নিয়ে আগামীকাল রোববার আলোচনায় বসবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয়, তার বড় একটি অংশ ফল, মাছ ও সবজিজাতীয় পণ্য। সাধারণত পণ্যের পরিমাপ ও সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে আমদানি শুল্ককর আদায় করা হয়ে থাকে। কিন্তু এনবিআর ফল, সবজি ও মাছের ক্ষেত্রে কত চাকার ট্রাকের পণ্য আসছে তার ওপর ভিত্তি করে পণ্যের শুল্ককর আদায় করে। গত ২৩ জুন আবার নতুন করে ট্রাকের চাকা অনুপাতে পণ্যের ওজন বাড়িয়ে শুল্ককর নির্ধারণ করে চিঠি দেয় এনবিআর। তাতে প্রতি ট্রাকে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা গুনতে হয়। তাতে লোকসানে পড়ে পণ্য খালাস বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া নতুন করে চাপিয়ে দেওয়া শুল্ককর প্রত্যাহারে কাস্টমসের সামনে বিক্ষোভ করা হয়। তবে কোনো সমাধান না হওয়ায় চালান আটকে থেকে গরমে পণ্য নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এ নিয়মে পণ্য আমদানি যেমন কমবে, তেমনি সরকার রাজস্বও হারাবে।

আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে শতাধিক ট্রাক মাছ, ফল ও সবজিজাতীয় পণ্য আমদানি হয়। খালাস বন্ধ থাকায় তিন দিনে সরকারের ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় কমেছে। তিনি আরও বলেন, এনবিআরের নির্দেশনাপত্রে বলা হয়েছে, ছয় চাকার ট্রাকে কমলা, মালটার জন্য ১৮ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১০ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যে ২০ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১২ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যের জন্য ২২ টনের ডিউটি দিতে হবে। ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ২৫ টনের ডিউটি এবং ১৬ বা তার বেশি চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যে ২৬ টনের শুল্ককর দিতে হবে।

ছয় চাকার ট্রাকে থাকা আঙুরের জন্য ১৯ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১০ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যে ২০ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১২ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যের জন্য ২২ টনের ডিউটি দিতে হবে। ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ২৪ টনের ডিউটি এবং ১৬ বা তার বেশি চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যের জন্য ২৬ টনের শুল্ককর দিতে হবে।

ছয় চাকার ট্রাকে থাকা আনারের জন্য ২৩ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১০ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যে ২৬ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১২ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যের জন্য ২৭ টনের ডিউটি দিতে হবে। ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ২৮ টনের ডিউটি এবং ১৬ বা তার বেশি চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যে ২৯ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ছয় চাকার ট্রাকে থাকা আপেলের জন্য ২১ টনের শুল্ককর, ১০ চাকার ট্রাকের জন্য ২২ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১২ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যের জন্য দিতে হবে ২৩ টনের ডিউটি। ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ২৫ টনের ডিউটি এবং ১৬ বা তার বেশি চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যের জন্য ২৬ টনের শুল্ককর দিতে হবে।

এ ছাড়া ছয় চাকার ট্রাকে থাকা হিমায়িত মাছের জন্য ছয় টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১০ চাকার ট্রাকের জন্য ১০ টনের শুল্ককর, ১২ চাকার ট্রাকের জন্য ১৩ টনের শুল্ককর। ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ১৮ টনের ডিউটি এবং ১৬ বা তার বেশি চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যের জন্য ২০ টনের শুল্ককর দিতে হবে।

বেনাপোল বন্দরে আটকে থাকা পণ্য। ছবি: আজকের পত্রিকাবরফ ছাড়া মাছের ছয় চাকার ট্রাকের ১৫ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১০ চাকার ট্রাকের ১৮ টনের শুল্ককর; ১২ চাকার ট্রাকে ২০ টনের শুল্ককর; ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ২১ টনের এবং ১৬ বা তার বেশি চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যে ২২ টনের শুল্ককর দিতে হবে।

শুঁটকি মাছের ক্ষেত্রে ছয় চাকার ট্রাকের জন্য ১৬ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১০ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যের জন্য ১৮ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১২ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যের জন্য ২০ টনের ডিউটি দিতে হবে। ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ২২ টনের ডিউটি এবং ১৬ বা তার বেশি চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যের জন্য ২৪ টনের শুল্ককর দিতে হবে।

টমেটোয় ছয় চাকার ট্রাকের জন্য ১৮ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১০ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যের জন্য ২০ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১২ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যের জন্য ২৪ টনের ডিউটি দিতে হবে। ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ২৮ টনের ডিউটি এবং ১৬ বা তার বেশি চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যের জন্য ৩০ টনের শুল্ককর দিতে হবে।

পানের ক্ষেত্রে ছয় চাকার ট্রাকের জন্য ছয় টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১০ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যের ৯ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১২ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যের জন্য ১১ টনের ডিউটি দিতে হবে। ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ১২ টনের ডিউটি এবং ১৬ বা তার বেশি চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যের জন্য ১৩ টনের শুল্ককর দিতে হবে।

বন্দরে মাছ নিয়ে আটকে থাকা ট্রাকচালক মহিদুর রহমান বলেন, কাস্টমস ছাড়পত্র না দেওয়ায় তিন দিন আটকে থেকে পণ্য নষ্ট হচ্ছে। একই কথা বলেন সবজি বহনকারী ভারতীয় ট্রাকচালক উত্তম।

আমদানি-রপ্তানিকারক উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, এনবিআর নির্দেশনায় বলেছে, কোনো পণ্যবাহী ট্রাকে পণ্যের ওজন কম-বেশি হলে তা শতভাগ ওজন করে খালাস দেওয়া যাবে। তবে কাস্টমস এই শর্ত মানছে না।

আমদানিকারক আবুল হোসেন বলেন, পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় কেবল ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েনি, তাতে আমদানি কমে যাওয়ায় সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা জাহিদ হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এনবিআরের নতুন আদেশ তাঁরা কার্যকর করছেন কেবল। তবে কয়েকজন আমদানিকারক অভিযোগ জানিয়ে পণ্য খালাস নিচ্ছেন না, আবার কেউ খালাস নিয়েছেন। তবে যাঁরা পণ্য খালাস নেননি, তাঁদের বিষয়ে আগামীকাল রোববার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত