Ajker Patrika

মহেশপুরে ‘স্বর্ণ পাচার চক্রের বিরোধে’ গুলি, আহত ১

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আহত মতিয়ার রহমান ও অভিযুক্ত তরিকুল ইসলাম আকালে। ছবি: সংগৃহীত
আহত মতিয়ার রহমান ও অভিযুক্ত তরিকুল ইসলাম আকালে। ছবি: সংগৃহীত

ঝিনাইদহের মহেশপুরে গুলিতে মতিয়ার রহমান (৫০) নামের এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার বাঘাডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের দুই পক্ষের বিরোধের জের ধরে এই ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

গুলিতে মতিয়ার রহমানের ডান পায়ের নিচের অংশে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মতিয়ার রহমান ফজরের নামাজ পড়তে বাড়ির পাশের মসজিদে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তরিকুল ইসলাম আকালেসহ চার ব্যক্তি মতিয়ারকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। এ সময় একটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও অপর গুলিতে তাঁর ডান পায়ের নিচের অংশের সামান্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে সকাল ১০টা দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মতিয়ারকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মহেশপুরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন সময় ভারতে স্বর্ণ পাচার হয়ে আসছে। এসব চক্রের নেতৃত্ব দেন জেলার বাইরের মানুষ। স্থানীয় কয়েকটি গ্রুপও রয়েছে। এমন একটি গ্রুপ চালান বাঘাডাঙ্গা এলাকার তরিকুল ইসলাম আকালে। একই এলাকার আরেকটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন শামীম হোসেন, রাফি ও মন্টু মণ্ডল। মতিয়ারকে গুলি চালানোর সময় শামীম হোসেন, রাফি ও মন্টু মণ্ডল ছিলেন। তাঁদের পেছনে ছিলেন অপর এক ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে তরিকুল ইসলাম আকালে ভারতের কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের পক্ষে কাজ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিপক্ষের ব্যক্তিরা আনার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আক্তারুজ্জামান শাহীনের পক্ষে কাজ করতেন।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের আগে প্রায় সময় বিজিবির হাতে অবৈধ স্বর্ণের চালান ধরা পড়ত। এ নিয়ে তাঁদের মদদদাতাসহ স্থানীয় দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। পরে ২০২৪-এর ১৭ জানুয়ারি প্রায় পাঁচ কেজি স্বর্ণ ধরা পড়ে বিজিবির হাতে। এর ঠিক পাঁচ মাস আগে তরিকুল ইসলাম আকালের সহযোগী সেলিম নামের এক ব্যক্তি স্বর্ণসহ ধরা পড়েছিলেন। সর্বশেষ স্বর্ণের চালান আকালে ধরিয়ে দিয়েছেন, এমন সন্দেহে ক্ষিপ্ত হয়ে শামীম হোসেন, মন্টু ও রাফি মণ্ডলের নেতৃত্বে তরিকুল ইসলাম আকালের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। তখন আকালে বাড়ির দেয়ালের ওপর উঠে পিস্তল দিয়ে কয়েকটি গুলি চালান। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান শামীম হোসেন ও মন্টু মণ্ডল। সে ঘটনায় তরিকুল ইসলাম আকালেকে প্রধান করে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মহেশপুর থানায় হত্যা মামলা হয়। সে সময় সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন আকালে। এক মাস পর একটি অস্ত্র মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে হাসখালী থানা-পুলিশ। ওই মামলায় তিনি ভারতে কিছুদিন জেল খাটেন।

সম্প্রতি আকালে ভারত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে গোপনে সীমান্তবর্তী বাঘাডাঙ্গা, নেপাসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছিল বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। তিনি মহেশপুর থানায় দুই হত্যাকাণ্ডের মামলার এজাহারভুক্ত পলাতক আসামি।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, একসময় বাঘাডাঙ্গা এলাকাটিতে স্বর্ণ চোরাচালানে নেতৃত্বে ছিলেন মতিয়ার রহমান। বাড়ির নিচে তাঁর মুদিদোকান আছে। তাঁর অধীনে কাজ করতেন তরিকুল ইসলাম আকালে। পরে তিনি নিজে সরাসরি কাজ বন্ধ করে লোকজন দিয়ে করান। তখন তরিকুল ইসলাম আকালে মতিয়ার গ্রুপ থেকে আলাদা হয়ে যান। তবে শামীম হোসেন, মন্টু ও রাফি মণ্ডল অপ্রকাশ্যে মতিয়ারের পক্ষে কাজ করতেন বলে অভিযোগ ছিল। তাঁরা আগে সীমান্ত দিয়ে গরুও আনা-নেওয়া করতেন। চোরাচালান-সংক্রান্ত তাঁদের মধ্যে (মতিয়ার ও আকালে) ছিল তীব্র বিরোধ। গুলিতে নিহত শামীম হোসেন ও মন্টু মণ্ডল হত্যা মামলায় আকালের বিপক্ষে কথা বলতেন মতিয়ার রহমান। এ সব বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই মঙ্গলবার সকালে মতিয়ার রহমানকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মতিয়ার রহমানের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি কোনো স্বর্ণ চোরাচালান করি না। আমার ভাগনে সেলিম ও তরিকুল ইসলাম আকালে একসঙ্গে স্বর্ণসহ বিভিন্ন পণ্য পাচার করতেন। তাঁদের মধ্যে ঝামেলা ছিল। আবার আকালের গুলিতে নিহত শামীম ও মন্টু মাঝে মাঝে আমার দোকানে বসতেন। ফলে তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের পক্ষে আমি কথা বলতাম। যে কারণে আকালে ক্ষিপ্ত হয়ে সকালে আমাকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। গুলির সময় আকালেসহ দুজনকে চিনতে পেরেছি। আর বাকি দুজনের মুখ ঢাকা থাকায় চিনতে পারিনি।’

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্না বিশ্বাস বলেন, ‘গুলির খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তাঁদের মধ্যে পূর্ববিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে পুলিশ তদন্ত করছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হবে।’

ঝিনাইদহের পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ইমরান জাকারিয়া বলেন, ‘২০২৪ সালের জানুয়ারিতে গুলিতে দুজন নিহতের ঘটনায় পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের সদস্যরা জীবননগর ও ঢাকা থেকে জলিল, চঞ্চল ও মমিনকে গ্রেপ্তার করেছিল। ভারতে পলাতক ছিল তরিকুল ইসলাম আকালে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ মার্কিন ফেডারেল সংস্থার

চীনের আগে ভারত সফরে যেতে চেয়েছিলেন ড. ইউনূস: দ্য হিন্দুকে প্রেস সচিব

কালো টাকা সাদা করেছেন সাবেক প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ

ভারত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রিকশাচালকের সঙ্গে তর্ক, বাংলাদেশিকে ফেরত

চেয়ার দখল করে চাকরি হারালেন বিএমডিএ প্রকৌশলী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত