মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায় আনন্দবাস গ্রামে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রফেসর আব্দুল মান্নানের কর্মী-সমর্থকেরা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নৌকার ১৮ কর্মী-সমর্থক আহত হন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক কর্মীকে চড় মারার কারণে হামলাটি হয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। 

গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন বিশ্বাসের আনন্দবাস গ্রামের বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস এ ঘটনায় তাঁদের তিন কর্মী-সমর্থকও আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। 

নৌকার আহত কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে আছেন আনন্দবাস গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ফেরদৌস আলী (৫০), আকাশ (২৫), টুকু বিশ্বাস (৪০), হাসিব (১৩), অন্তর (১৬), আব্দুল হামিদ (৩২), আশরাফুল ইসলাম (৪৫), আয়াত আলী (৪৫), নাহিদুল ইসলাম (৫৯), নাহিদুল ইসলাম (৩৫), পিয়াস (২৫), আলী ইয়াছিন (৫০) প্রমুখ। 
 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে আনন্দবাস গ্রামে মেহেরপুর-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ফরহাদ হোসেনের কর্মী-সমর্থকেরা বিজয় মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দীন বিশ্বাসের বাড়ির সামনে পৌঁছালে মিছিলের মধ্য থেকে কেউ একজন পরাজিত স্বতন্ত্রী প্রার্থীর এক কর্মীকে চড় মারেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকেরা ছাদের ওপর থেকে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। ঘটনার একপর্যায়ে তাঁরা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালান। এতে নৌকার পক্ষের ১৮ কর্মী-সমর্থক আহত হন। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। 

মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তৌফিক আহম্মেদ বলেন, এ পর্যন্ত হাসপাতালে ১৮ জনকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর হলে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জ্বল কুমার দত্ত বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় মুজিবনগর থানা-পুলিশের একটি দল। তারা উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কেউ মামলা করলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। 

মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তোতা বলেন, ‘বিজয় মিছিল করার সময় জিয়াউদ্দিন বিশ্বাসের সমর্থকেরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। আমাদের অনেক কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাঁরা। এ ব্যাপারে মুজিবনগর থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ 
 
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘বিজয় মিছিল করার সময় আমার কর্মীকে চড়-থাপ্পড় না মারলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। শুধু আজই নয়, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই আমাদের নেতা-কর্মীর ওপর হামলা ও বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। গতকাল আমাদের তিনজন সমর্থকও আহত হয়েছেন। আমরাও থানায় মামলা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’