খননের ৩ বছরেই ভরাট সালতা টিআরএম বাস্তবায়নের তাগিদ

  • তিন জেলার ২৫ লক্ষাধিক মানুষ এ নদীর ওপর নির্ভরশীল।
  • ২০১৯ সালের জুনে খনন শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২১ সালের জুনে।
আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা 
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১: ৪৩
২০২১ সালে খনন করা হয় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সালতা নদী। খননের তিন বছরের মাথায় আবারও ভরাট হয়ে এটি সরু খালে পরিণত হয়েছে। এতে পানিপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

সাতক্ষীরার সালতা নদী সেখানকার ভূপ্রকৃতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর জেলার বর্ষার পানি নেমে যায় এ নদী দিয়ে। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে সেচকাজেও ব্যবহার করা হয় এর পানি। অর্থাৎ জেলাগুলোর ২৫ লক্ষাধিক মানুষ এ নদীর ওপর নির্ভরশীল। গুরুত্ব বিবেচনায় বছর তিনেক আগে খনন করা হয় সালতা নদী। কিন্তু তা আবারও ভরাট হয়ে গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ফলে কোনো সুফল মিলছে না। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য নতুন করে খনন ও টাইডাল রিভারাইন ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, তালা উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ডুমুরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বর্ষার পানি প্রবাহিত হয় সালতা নদী দিয়ে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ নদী ২০১৯ সালের জুনে খননের উদ্যোগ নেয় পাউবো। খননের কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের জুনে। তালার কাঠবুনিয়া থেকে খলিলনগর পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার খননে ব্যয় হয় ১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সাতক্ষীরায় কিছুটা বেশি বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সালতা ভরাট হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে পানি নামতে না পারায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। শিগগির খননের ব্যবস্থা ও টিআরএম বাস্তবায়ন না করা হলে আগামী বর্ষায় এমন বৃষ্টিতে একইভাবে দুর্ভোগে পড়তে হবে সালতাপারের বাসিন্দাদের।

উপজেলার কাঠবুনিয়া গ্রামের জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘দু-তিন বছর আগে এই নদী খনন করা হয়েছিল, কিন্তু ভরে গেছে। নদী খনন করা জরুরি।’

জহিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা বর্ষার সময় তলিয়ে যাই, আর শুকনোর সময় পানি পাই না। নদী ও খাল খনন জরুরি। আর ঘেরওয়ালারা পানি আটকে রাখে। এতে পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়।’

একই গ্রামের রুহুল আমীন বলেন, ‘যারা ঘের করে, তারা পানি ধরে রাখে। তাই পলি জমে সংযোগ খাল ভরাট হয়ে গেছে। জোয়ার-ভাটার খেলা না থাকলে এই নদীর নাব্যতা বজায় থাকবে না। ফলে বর্ষার সময় আমাদের ডুবে মরতে হবে, আর শুকনোর সময় শুকিয়ে মরতে হবে।’

কপোতাক্ষ নদ বেঁচে আছে পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়নের ফলে উল্লেখ করে উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সালতা নদী দুই জেলায়। সাতক্ষীরার তালার ওপর দিয়ে খুলনার পাইকগাছা হয়ে শিপসা নদীতে মিশেছে। আর ওদিকে ডুমুরিয়ার ওপর দিয়ে চলে গেছে। চার বছর আগে তালতলা অংশ পর্যন্ত কাটা হয়েছে। দুঃখজনক হলো, নদী কেটে দুপাশে মাটি ফেলে তারা চলে গেছে। এখন ভরাট হওয়ায় গরু-ছাগল চরাচ্ছে লোকজন।’

জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়ন করে অবাধ জোয়ার-ভাটা নিশ্চিত করা গেলে সরকারের টাকা অপচয় হতো না; পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষা হতো; ফসল রক্ষা পেত। কিন্তু পাউবো চায়, খননের বছর তিনেকের মধ্যে আবারও ভরাট হবে, আবারও তারা প্রকল্প পাবে।’

তবে টিআরএম বাস্তবায়ন নিয়ে সাতক্ষীরা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘টিআরএম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। টেকনিক্যালি দৃশ্যমান কি না, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য কি না, সবদিক দেখে এটার ভিজিবিলিটি স্টাডি ছাড়া এটা বলা সম্ভব নয়, সালতা বা অন্য কোনো নদীতে টিআরএম বাস্তবায়ন করা যাবে কি না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত