Ajker Patrika

শেখ, মণ্ডল ও ব্যাপারীর দ্বন্দ্বে বিধ্বস্ত পাহাড়পুর গ্রামের জনজীবন

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৪: ৫৬
শেখ, মণ্ডল ও ব্যাপারীর দ্বন্দ্বে বিধ্বস্ত পাহাড়পুর গ্রামের জনজীবন

কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম পাহাড়পুর। আগে এই গ্রামের নাম ছিল কাশোডাঙ্গা। তবে আশপাশের এলাকা থেকে উঁচু স্থানে এর অবস্থান হওয়ায় পরে নামকরণ করা হয় পাহাড়পুর। গ্রামটি প্রায় শত বছরের পুরোনো। সেই সঙ্গে এই গ্রামে বেশ পুরোনো শেখ, মণ্ডল ও ব্যাপারী নামের তিন সমাজের নাম। আধিপত্য বিস্তারের জেরে তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনায় দীর্ঘদিন গ্রামছাড়া হয়ে থাকে এই গ্রামের অনেক মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এসব দ্বন্দ্বে অস্বাভাবিক হয়ে গেছে এই গ্রামের জনজীবন। 

এই পাহাড়পুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত তিন বছরে উভয় পক্ষের চারজন খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। উভয় পক্ষের হামলা, মামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটে নিজেরা নিজেরাই সামাজিক, অর্থনৈতিক, শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক, শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে। তবে এখানকার আধিপত্যের অবসানে প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নেই কোনো ভ্রুক্ষেপ। 

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শেখ, মণ্ডল ও ব্যাপারী নামে তিন সমাজে বিভক্ত পাহাড়পুরের মানুষ। একসময় সবাই মিলেমিশে বসবাস করত এখানে। সময়ের সঙ্গে গ্রামে বেড়েছে আধিপত্য বিস্তারের চর্চা। আধিপত্য বিস্তারে বর্তমানে শেখ ও মণ্ডল মিলে গেছে এক সমাজে। আর তাদের প্রতিপক্ষ হয়েছে ব্যাপারী সমাজ। শেখ ও মণ্ডল সমাজের নেতৃত্ব দেন আমিরুল ইসলাম ও ভুট্টো নামের দুই ব্যক্তি। সম্প্রতি প্রতিপক্ষের হামলায় আমিরুল নিহত হয়েছেন। আর ব্যাপারী সমাজের নেতৃত্ব দেন সাদ ব্যাপারী ও ফিরোজ আহমেদ কটা মেম্বার। 

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালে দু-পক্ষের সংঘর্ষে ব্যাপারী গ্রুপের আরিফের মেয়ে রুমি খুন হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও এর বিচার হয়নি। এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় প্রায় অর্ধকোটি টাকার বিনিময়ে মামলার নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু আধিপত্য বিস্তার থামেনি। 
আবার সমাজপতিদের দলাদলি ও উসকানিতে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে নেহেদ আলী (৬৫) ও বকুল আলী (৫৫) নামের আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। 

এ ঘটনার পরদিন নিহত নেহেদ আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে ১ এপ্রিল ২৮ জনকে আসামি করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে আসামিরা ও তাঁদের পরিবার প্রাণভয়ে পালিয়ে যায় গ্রাম ছেড়ে। সেই সুযোগে বাদীপক্ষ ও সুবিধাভোগী একটি দল মিলে এলাকায় ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। কাঁচা-পাকা ঘরবাড়িগুলো ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। কেটে ফেলা হয় সব ধরনের গাছপালা। বিনষ্ট করা হয় মাঠের ফসল। এভাবে চলতে থাকে প্রায় ১৮ মাস। ১৮ মাসে পাহাড়পুর গ্রামের প্রায় অর্ধেক অংশ বিলীন হয়ে যায়। 

এর প্রায় ১৮ মাস পর প্রশাসনের সহযোগিতায় গ্রামছাড়া অর্ধশতাধিক পরিবার ও আসামি জামিনে এলাকায় ফিরে আসে। তবে এলাকায় ফেরার বিষয়ে বাদীপক্ষ বা প্রতিপক্ষের সঙ্গে সামাজিক বা প্রশাসনিক কোনো সমঝোতামূলক পরিবেশ ছিল না। ফলে জান-মালের ঝুঁকি নিয়ে তারা পুনরায় বসতি গড়ে তোলে। কেউ থাকে কাগজের তাঁবু টাঙিয়ে, কেউ তৈরি করেছে শণ-খড়ের ঘর, কেউ আবার তৈরি করেছে টিনের জরাজীর্ণ ঘর। 

কুমারখালীর পাহাড়পুর গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া স্থানে নতুন করে বসতি গড়ে তুলছেন শেখ ও মণ্ডল গ্রুপের লোকজনএভাবেই সময়ের সঙ্গে পাহাড়পুরে পুনরায় বাড়তে শুরু করে জনসমাগম ও জনবসতি। কিন্তু হঠাৎ পুনরায় ফুঁসে ওঠে ক্রোধ। হত্যার বদলা নিতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সকালে জোড়া খুন মামলার প্রধান আসামি ও নয়ন মণ্ডলের ছেলে খোকন মণ্ডলের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বাদীপক্ষ। শুরু হয় আবার রক্তপাত। এ সময় খোকন মণ্ডল নামের এক ব্যক্তির বাম হাতের কবজি প্রায় ৯০ ভাগ আলাদা হয়ে যায়। পরে স্বজনেরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

আরও জানা যায়, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপারী গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। দুটি দলে ভাগ হয় ব্যাপারী সমাজের লোকজন। এমনকি তারা নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় জড়ায়। গত সোমবার (১৭ জানুয়ারি) তাদের মধ্যে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়। এ নিয়ে এলাকা বেশ উত্তেজিত ছিল। এই উত্তেজনার মধ্যে জোড়া খুনের বদলা নিতে মামলার অন্যতম আসামি আমিরুল ইসলামকে গত মঙ্গলবার বিকেলে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী জহুরা বেগম গতকাল শনিবার ৩২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উভয় পক্ষের একাধিক ব্যক্তি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় নিজেরাই বিচার শুরু করেছে। আইন হাতে তুলে নিয়ে রক্তপাত ঘটাচ্ছে। ভাঙচুর, লুটপাট ও খুনোখুনি অব্যাহত রেখেছে। আমরা একটু শান্তি চাই। নিরাপদে বসবাস করতে চাই। আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে ধ্বংসের হাত থেকে গ্রামটাকে রক্ষা করতে চাই।’ 

পাহাড়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক তামান্না ইয়াসমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তারে গ্রামের সঙ্গে বিদ্যালয়টিও ধ্বংসের পথে। দীর্ঘদিনের এই আধিপত্যের পতন ঘটানো দরকার।’ 

তবে পাহাড়পুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দাদের ধারণা, ২০২০ সালের ঘটনায় এক পক্ষের ঘরবাড়ি ও সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। গ্রামের অর্ধেক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এবার প্রতিপক্ষের হামলায় আরেক পক্ষের ঘরবাড়ি ও সম্পদ ধ্বংসলীলায় পরিণত হবে। ধ্বংস ও বিলীন হয়ে যাবে পাহাড়পুর গ্রামটি। 

তবে এ নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিনিধি বা প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। নেই ধ্বংসের হাত থেকে পাহাড়পুর গ্রামবাসীকে বাঁচানোর উদ্যোগ। 

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তারে একের পর এক খুন হচ্ছে। রক্তাক্ত হচ্ছে পাহাড়পুর গ্রাম। উভয় পক্ষ ধ্বংস হচ্ছে। তাদের মধ্যে সামাজিকতা ও মানবিকতা নেই। এভাবে চলতে থাকলে নিজেরা নিজেরাই একদিন বিলীন হয়ে যাবে। তাদের মাঝে রক্ত ও প্রতিহিংসার নেশা কাজ করে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজারে দুই যুবদল কর্মী গুলিবিদ্ধ: পর্যটক সেজে লামায় লুকিয়ে ছিলেন ৫ আসামি

কক্সবাজার প্রতিনিধি
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার শহরে স্থানীয় দুই যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে বান্দরবানের লামা উপজেলার মিরজিরি এলাকায় মাতামুহুরী রিভার ভিউ রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছমি উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কামরুল হাসান বাবু (২৬), ইমরান উদ্দিন খোকা ওরফে আরিয়ান খোকা (২৫), আব্দুল কাইয়ুম (৩৩), মো. সাকিব (২০) এবং আরেকজন ১৭ বছর বয়সী কিশোর। তাঁদের বাড়ি সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।

ওসি ছমি উদ্দিন বলেন, ৯ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কে বাস টার্মিনাল-সংলগ্ন উত্তরণ আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফারুক নামের দুই যুবদল কর্মী। এই ঘটনার পর থেকে পাঁচ আসামি পর্যটকের ছদ্মবেশে বান্দরবানের লামায় আত্মগোপনে ছিলেন। গোপন সংবাদ পেয়ে লামায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের বাইপাস সড়কের উত্তরণ আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন দুই যুবদল কর্মী সাইফুল ইসলাম (৩৫) ও মোহাম্মদ ফারুক (৩৪)। তাঁরা শহরের বাইপাস সড়কের চারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোলায় মৎস্যজীবী লীগের নেতা আটক

ভোলা প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ মৎস্যজীবী লীগের এক নেতাকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে ভোলার কোস্ট গার্ডের সদস্যরা সদর উপজেলার ব্যাংকের হাট-সংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁকে আটক করেন।

আটক ব্যক্তির নাম মো. মোশারফ হোসেন (৬০)। তিনি মৎস্যজীবী লীগের টাস্কফোর্স প্রতিনিধি বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

কোস্ট গার্ড জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাত ১টায় ভোলার কোস্ট গার্ড বিশেষ অভিযান চালিয়ে মোশারফ হোসেনকে আটক করে।

কোস্ট গার্ড ভোলা দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভোলা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সূর্যের দেখা নেই, কনকনে ঠান্ডায় কাবু জনজীবন

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও 
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

আকাশে সূর্যের কোনো দেখা নেই। ঘন কুয়াশায় মোড়া ঠাকুরগাঁও শহর। সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে। কনকনে ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে সড়কের পাশে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা খুঁজছে শীতার্ত লোকজন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা ঘুরে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।

গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ জেলায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। যদিও ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো আবহাওয়া অফিস নেই, তবে জেলার ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, সকাল ৭টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ১০টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে বাতাসের কারণে অনুভূত তাপমাত্রা ছিল প্রায় ১০ ডিগ্রির মতো।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানপাট তখন বন্ধ। পশ্চিম দিক থেকে আসা হিমেল বাতাস শীতের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্য দিনের তুলনায় সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও কম। জীবিকার তাগিদে শ্রমজীবী মানুষ বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হলেও পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় ফুটপাতে আশ্রয় নেওয়া দরিদ্র লোকজন আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র মানুষ। তাদের অনেকেরই গরম কাপড় নেই। তাই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে কাগজ, পলিথিন ও ছেঁড়া কাপড় জ্বালিয়ে রাত ও সকাল পার করছে তারা।

সকালে সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক হাসান রাব্বির সঙ্গে। সড়কের পাশে কাগজ ও পলিথিন জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে পোহাতে তিনি বলেন, ‘আগে সকাল ৭টায় রিকশা নিয়ে বের হতাম। কিন্তু এখন ঠান্ডা এত বেড়েছে যে আজ ১০টার আগে বের হতে পারিনি। কুয়াশা একটু কমার অপেক্ষা করছি।’ শীতের কারণে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে বলে জানান শহরের কালীবাড়ি এলাকার কলা বিক্রেতা ভূষণ রায়। তিনি বলেন, ‘সোয়েটার, টুপি, মাফলার পরেও শরীর বাঁচে না। শীত কিছুতেই মানছে না।’

এদিকে শীত মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকায় ৮ হাজার ৫০০ কম্বল কেনা হয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, এ বছর ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে কম্বল কেনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ৭ হাজার কম্বল এবং বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে আরও দেড় হাজার কম্বল পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

জাবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

‘আগামীকাল বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে’ এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক ও প্রতিবাদ মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাকসু, শাখা ছাত্রশিবির, শাখা ছাত্রশক্তি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে ‘আগামীকালকে (শুক্রবার) বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

সমাবেশে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক লড়াই করে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের লড়াই শুরু হবে শহীদ ওসমান হাদির ইনকিলাব মঞ্চের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। আগামীকালকে বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এই খুনি হাসিনার দল হাজার হাজার নিষ্পাপ বাংলাদেশের দামাল ছেলেদেরকে হত্যা করেও ওর রক্ত পিপাসা মেটেনি। বিদেশে বসে এখনো বিপ্লবীদের হত্যা করার ছক করছে। আমরা আজ এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে স্পষ্ট করে বলতে চাই শহীদ ওসমান হাদির রক্তের ওপর দিয়ে, শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। যে সমস্ত ভারতীয়রা বাংলাদেশে বৈধভাবে অবৈধভাবে বাংলাদেশে চাকরি করছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ভারতে পুশব্যাক করতে হবে। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা ওসমান হাদির খুনিকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।’

মোস্তাফিজুর রহমানের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা।

এরপর আজ শুক্রবার দুপুরেও মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে একই ধরনের বক্তব্য লিখে পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, শুধু রাজনৈতিক লড়াইয়ে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয় না। শহীদ ওসমান হাদি ভাই ইনকিলাব মঞ্চের মাধ্যমে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী প্রক্সি উদীচী, ছায়ানটের কালচারাল হেজেমনির বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু করেছিল, সেই লড়াই জারি রাখতে হবে। তাদের সকল আধিপত্যবাদী বয়ানকে তছনছ করে দিতে হবে। ইট, পাথরের দেয়াল ভেঙে আধিপত্যবাদকে মোকাবিলা করা যায় না, সেটা হাদি আমাদের শিখিয়েছে।’

অন্য আরেকটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘গতকাল শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ভাইয়ের মৃত্যু-পরবর্তী প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে প্রদত্ত আমার বক্তব্যের কিছু শব্দ নিয়ে এই স্পষ্টীকরণ প্রদান করছি। বক্তব্যে ব্যবহৃত “তছনছ” শব্দটির মাধ্যমে ভাঙচুরকে বোঝানো হয়নি। বরং এর অর্থ ছিল শহীদ হাদির যে স্বপ্ন নিয়মতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে বিকল্প কাঠামো গড়ে তুলে, সর্বদা সচেতন থেকে ফ্যাসিবাদী বয়ানকে মোকাবিলা করা।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এ প্রসঙ্গে আরও যুক্ত করা প্রয়োজন যে, উদীচীসহ উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রেখে আসছে। তারা বাংলাদেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। তবে ফ্যাসিবাদের আদর্শিক ভিত্তিকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবেই মোকাবিলা করব, ইনশা আল্লাহ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত