ঈদের ছুটিতে বেনাপোল বন্দরে রেকর্ড সংখ্যক যাত্রীর যাতায়াত, সেবা নিয়ে ক্ষোভ

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৪, ১৫: ০৩
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ২০: ৩৪

ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আজ থেকে রোববার পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনের সরকারি ছুটিতে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত ভ্রমণে বেড়েছে পাসপোর্টধারীদের চাপ। স্বাভাবিক সময়ে দিনে সাড়ে তিন হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার যাত্রী যাতায়াত করলেও আজ বুধবার যাত্রীর সংখ্যা সাড়ে ছয় হাজার ছাড়িয়েছে।

তবে এই যাতায়াতের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সেবার মান বাড়াতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

এবার ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ১০ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এতে টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকছে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানও সরকারি ছুটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বন্ধ রেখেছে। এতে লম্বা ছুটি পেয়ে চিকিৎসা, ব্যবসা, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে বাংলাদেশ থেকে অনেকে যাচ্ছেন ভারতে। আবার অনেকে আসছেন বাংলাদেশে। 

এতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেড়েছে যাত্রীদের চাপ। যাত্রী নিরাপত্তায় বন্দরে কাজ করছে বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরের নিরাপত্তাকর্মীরা। 

ভারত ভ্রমণে বাংলাদেশ সরকার নিচ্ছে ১ হাজার ৫৫ টাকা ভ্রমণ কর এবং ভিসা ফি বাবদ ভারতীয় দূতাবাসগুলো নিচ্ছে ৮৫০ টাকা। ভ্রমণের ক্ষেত্রে বছরে বছরে এ অর্থের পরিমাণ দুই দেশ বাড়ালেও সেবার বাড়ানোর দিকে তাদের লক্ষ্য নেই। এতে নানা দুর্ভোগ শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়ছেন পাসপোর্টধারীরা। তবে বাংলাদেশ অংশের কার্যক্রম কোনো রকমে শেষ হলেও ভারত অংশে জনবলসংকটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাঁদের। 

ভারতগামী পাসপোর্টধারী কয়েকজন জানান, লম্বা ছুটি পেয়ে ভারতে যাচ্ছেন। তবে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন এ অবস্থা বিরাজ করলেও সেবা বাড়াতে নজর নেই কর্তৃপক্ষের। 

ভারত যেতে বেনাপোল বন্দরে যাত্রীদের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকাবরিশালের পাসপোর্টধারী রোকেয়া বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগে ভ্রমণ কর বড়দের ৫০০ (পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে), ছোটদের (পাঁচ বছরের নিচে) ২৫০ টাকা ছিল। এখন তা বেড়ে বড়দের ১০০০ টাকা ও ছোটদের ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্দর ৫৫ টাকা কর নিচ্ছে। আর ভিসা ফি বাবদ ভারতীয় দূতাবাসগুলো ৮৫০ টাকা নিচ্ছে। দিন দিন ভ্রমণ করের টাকা বাড়ানো হলেও সেবা বাড়ায়নি কর্তৃপক্ষ।’ 

পাসপোর্টধারী চট্টগ্রামের রবিন বিশ্বাস বলেন, এবার চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছেন। তাই ভারত যেতে পদ্মা সেতু দিয়ে অল্প সময়ে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছেছেন। তবে শূন্য রেখায় লম্বা লাইনে যে ভিড়, তাতে ইমিগ্রেশন সারতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে আছেন। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে জনবলসংকট থাকায় তাঁদের এ দুর্ভোগ বেড়েছে। 

পাসপোর্টধারী যাত্রী যশোরের মফিজুর রহমান জানান, অফিস ছুটি, তাই ভ্রমণ ভিসায় যাচ্ছেন ভারত। জানান, রাত ৩টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। সকাল সাড়ে ৬টায় ইমিগ্রেশন খুলেছে। বন্দরে যাত্রীছাউনি না থাকায় রাস্তায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে কষ্ট করতে হয়েছে। 

পাসপোর্টধারী ঢাকার রফিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা-কলকাতা বাসযাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে আগে তাদের পার করে দিচ্ছে বন্দর ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। আর যারা ঘুষ দিচ্ছে না, তারা বন্দরে লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়াতে হচ্ছে। 

বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের উপপরিদর্শক শংকর কুমার বিশ্বাস জানান, ঈদের ছুটিতে যাত্রী যাতায়াত বেড়েছে। তারা যেন হয়রানির শিকার না হয়, নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। 

বেনাপোল বন্দর। ছবি: আজকের পত্রিকাবেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক রেজাউল করিম জানান, যাত্রীসেবা বাড়াতে সম্প্রতি কলকাতায় দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সেখানে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

বেনাপোল আমদানি, রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ পাসপোর্টধারী যাতায়াত করে থাকে। ভ্রমণ কর বাবদ বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা এবং ভিসা ফি বাবদ ভারত সরকারের ১৫০ কোটি টাকা আয় হয়। তবে কাঙ্ক্ষিত সেবা বাড়েনি।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বিশ্বাস জানান, ১০ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৩২ হাজার ২৮৩ যাত্রী পারাপার হয়েছেন। স্বাভাবিক সময়ে এ সংখ্যা ৫ হাজার থেকে ৬ হাজারের মধ্যে থাকে। এবার রেকর্ডসংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করেছেন।

ঈদ ও নববর্ষ উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটি থাকায় মানুষ ঘুরতে ও চিকিৎসার জন্য ভারতে যান বলে জানান ওসি। তিনি বলেন, যাত্রীদের দ্রুত পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সারতে সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

পেট্রাপোলে ভোগান্তির বিষয়ে বেনাপোলের ওসি বলেন, পেট্রাপোলের ওসির সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ হচ্ছে। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে তাঁদের তাগিদ দেওয়া হয়। সেখান থেকে জানানো হয়েছে, ইমিগ্রেশনে দেরি হচ্ছে না। দেরি হওয়ার মূল কারণ বিএসএফের তল্লাশি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত