যশোরে বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা আজ রোববারের হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। হরতালে যশোর থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। শ্রমিকদের দাবি, ১৮ রুটেই বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। 

এদিকে বাস বন্ধ থাকলেও তিন চাকার যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকার বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। হরতালে বেনাপোল বন্দরেও কোনো প্রভাব পড়েনি। আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম ছিল স্বাভাবিক। সকালে ট্রাক চলাচল না করায় ব্যবসায়ীরা বিকেলের পর বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করিয়েছেন। ব্যাংক-বিমা খোলা ছিল। 

এদিকে হরতালের সমর্থনে আজ সকালে মিছিল করে বিএনপির নেতা–কর্মীরা। তাঁরা দড়াটানায় পৌঁছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। নেতাদের দাবি, পুলিশ মিছিল থেকে তাদের ৫০ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। এরপর আর বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। একই সঙ্গে জামায়াতের কোনো কর্মকাণ্ড ছিল না হরতালে। 

গতকাল শনিবার রাতে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বাড়িতে গিয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। গতকাল রাত ও আজ মোট ১৭০ জন নেতা-কর্মীকে আটক করে আদালতে চালান দিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে কোতোয়ালি থানায় আটক হয়েছে ৮০ জন। বাকিরা বিভিন্ন উপজেলার। এসব কারণে নেতা-কর্মীদের হরতালের মাঠে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন একাধিক বিএনপি নেতা। 

শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক ষষ্টি কুমার দত্ত বলেন, ‘যশোরের ১৮ রুটেই বাস চলাচল বন্ধ ছিল আজ। সকাল থেকে কোনো বাস চলাচল করেনি। এতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। তবে অনেকেই ছোট যানবাহন যেমন ইজিবাইক বা বিকল্প যানে যাতায়াত করছেন।’ 

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘গতকাল শনিবার থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা, জেলা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক কামরুল ইসলাম, যুবদল নেতা পলাশ হোসেন ও নগর বিএনপি নেতা খলিলসহ ৫০ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শহরের দড়াটানা থেকে তাদের আটক করা হয়। একই সঙ্গে গতকাল রাতে ও আজ পুরো জেলা থেকে আমাদের মোট ১৭০ জনকে আটক করে পেন্ডিং মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। দ্রুত তাঁদের মুক্তি দাবি করেন তিনি।’ 

এদিকে বিএনপির হরতালের প্রতিবাদে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এদিন বিকেলে শহরের ভৈরব চত্বরে শান্তি সমাবেশ করে জেলা আওয়ামী লীগ। 

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, ‘হরতালে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় যাতে প্রভাব না পড়ে এ দিকটিই দেখেছি আমরা। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছিল তাঁদেরকে আটক করা হয়েছে।’ 

হরতালে বেনাপোল বন্দরে কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রেজাউল করিম। সব ধরনের কার্যক্রম ছিল স্বাভাবিক। যশোর শহরের একাধিক বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, ‘আমাদের শাখাগুলো খোলা থাকলেও লেনদেন তেমন হয়নি।’