Ajker Patrika

ভোটের আগের রাতে আপ্যায়ন: প্রতিমন্ত্রী ও এমপির দুই প্রার্থীই বিজয়ী

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০৯: ৩৭
ভোটের আগের রাতে আপ্যায়ন: প্রতিমন্ত্রী ও এমপির দুই প্রার্থীই বিজয়ী

যশোরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ ওঠা প্রতিমন্ত্রী ও এমপির সেই দুই সদস্য প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এ নিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একাধিকবার দুই উপজেলার ওই দুই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিলেও সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই আজ সোমবার ভোটগ্রহণ হয়েছে এবং দুই প্রার্থী বিজয়ীও হয়েছেন। 

দুই প্রার্থী হলেন—মনিরামপুর উপজেলার সদস্য প্রার্থী গৌতম চক্রবর্তী ও বাঘারপাড়ার সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলা। গৌতম চক্রবর্তীর পক্ষে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছিলেন তাঁর মামা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এমপি। আর সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষে প্রচারণা চালান বাঘারপাড়া-অভয়নগর আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়। 

বাঘারপাড়া ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী রাকিব হাসান শাওন ও মনিরামপুর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী শহিদুল ইসলাম তাঁদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দেন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার রাতে ভোটারদের হোটেলে নিয়ে বিশেষ আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছিলেন যশোর–৪ আসনের সংসদ সদস্য (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) রণজিৎ কুমার রায়। তিনি সন্ধ্যায় বাঘারপাড়ার অর্ধশত ভোটারকে শহরের অভিজাত ওরিয়ন হোটেলে নিয়ে আপ্যায়ন ও রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করেন। আজ সকালে তাঁরা হোটেল থেকে বাঘারপাড়ায় গিয়ে ভোট দিয়েছেন। রাতেই বাঘারপাড়ার ভোট স্থগিতের আবেদন করেন সদস্য প্রার্থী রাকিব হাসান শাওন। তিনি নির্বাচনে তালা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। 

গতকাল রাতে গণমাধ্যমকর্মীরা হোটেলটিতে গেলে ৮ তলার ৭ নম্বর কক্ষে সংসদ সদস্য রণজিৎ রায় সমর্থিত সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষে বৈঠক চলতে দেখা যায়। হোটেলের নিচে এমপি ও পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান বাচ্চুর গাড়ি পার্ক করা দেখা গেছে। এমপি রণজিৎ কুমার রায় দাওয়াত দিয়ে এনেছেন—সে কথা স্বীকারও করেছেন একাধিক ভোটার। 

ওই সময় বাঘারপাড়া পৌরসভার কাউন্সিলর তাসলিমা খাতুন জানিয়েছিলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে বাঘারপাড়ার মোট ভোটার ১৩৩ জন। এর মধ্যে ৫০ জনের বেশি সদস্য হোটেল ওরিয়নে এসেছেন। এমপি রণজিৎ কুমার রায় তাঁর সদস্য প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষে কাজ করার জন্য বলেছেন। 

সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলা বিজয়ী ঘোষিত হলে আজ বিকেলে যশোর সার্কিট হাউসে এমপি রণজিৎ রায়কে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আপ্যায়িত হওয়া ভোটারেরা। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সার্কিট হাউসের সভাকক্ষে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সমালোচনা করছেন ওই ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকেরা। 

পরাজিত সদস্য প্রার্থী রাকিব হাসান শাওন বলেছেন, ‘হোটেল ওরিয়ন থেকে ভোটার জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য তোরাব মোল্লা তাঁকে ফোনে বলেছেন, এমপি রণজিৎ কুমার রায় তাঁদের যশোরের হোটেলে এনে রেখেছেন। তাঁদের সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষে কাজ করতে বলছেন। ভোট বাতিলের দাবিতে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি ভোট বর্জন করেছেন।’ 

গতকাল রাতে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি রণজিৎ কুমার রায় বলেন, ‘আমি কাউকে ডেকে আনিনি। কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘনও করেনি। ভোটারেরা কী জন্য হোটেলে এসেছেন তা তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।’ 

অপরদিকে, গত ৮ অক্টোবর মনিরামপুর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী গৌতম চক্রবর্তীর পক্ষে যশোর সার্কিট হাউসে ইউপি চেয়ারম্যানদের ডেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন তাঁর আপন মামা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য।’ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম মিলন ওই দিনই জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য গৌতম চক্রবর্তীর হয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে ভোটারদের নগদ টাকা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ শহিদুল ইসলামের। 

এ অভিযোগ প্রসঙ্গে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আরেক প্রার্থীর এসব অভিযোগ করেছেন। ভাগনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। জনপ্রিয়তার কারণেই সে বিজয়ী হয়েছে।’ 

ভোটের আগের রাতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষে হোটেলে ভোটারদের আপ্যায়ন করেন এমপি রণজিৎ কুমার রায়এ ছাড়া ঝিকরগাছা উপজেলা আসন থেকে সদস্য পদে তালা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ইমামুল হাবিব জগলুও উপজেলার চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী টিউবওয়েল প্রতীকের রফিকুল ইসলাম বাপ্পীর হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ভোট নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ভোটারদের শাড়ি, লুঙ্গি ও নগদ টাকা বিতরণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইমামুল হাবিব। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যার পক্ষে লড়েছিলেন সেই রফিকুল ইসলাম বাপ্পীও বিজয়ী হয়েছেন। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং অফিসার জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের যে সমস্ত অভিযোগগুলো রয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখেছি। সবগুলো পরীক্ষা করেছি। তথ্যভিত্তিক ভাবে প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’ 

প্রসঙ্গত, আজ যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানের একটি, ৮টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং তিনটি সংরক্ষিত (মহিলা) ওয়ার্ডসহ মোট ১২টি পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। চেয়ারম্যান পদে দুইজনসহ মোট ৫১ প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। জেলার ৮টি কেন্দ্রে ১৬টি ভোট কক্ষে এক হাজার ৩১৮ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজারে দুই যুবদল কর্মী গুলিবিদ্ধ: পর্যটক সেজে লামায় লুকিয়ে ছিলেন ৫ আসামি

কক্সবাজার প্রতিনিধি
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার শহরে স্থানীয় দুই যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে বান্দরবানের লামা উপজেলার মিরজিরি এলাকায় মাতামুহুরী রিভার ভিউ রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছমি উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কামরুল হাসান বাবু (২৬), ইমরান উদ্দিন খোকা ওরফে আরিয়ান খোকা (২৫), আব্দুল কাইয়ুম (৩৩), মো. সাকিব (২০) এবং আরেকজন ১৭ বছর বয়সী কিশোর। তাঁদের বাড়ি সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।

ওসি ছমি উদ্দিন বলেন, ৯ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কে বাস টার্মিনাল-সংলগ্ন উত্তরণ আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফারুক নামের দুই যুবদল কর্মী। এই ঘটনার পর থেকে পাঁচ আসামি পর্যটকের ছদ্মবেশে বান্দরবানের লামায় আত্মগোপনে ছিলেন। গোপন সংবাদ পেয়ে লামায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের বাইপাস সড়কের উত্তরণ আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন দুই যুবদল কর্মী সাইফুল ইসলাম (৩৫) ও মোহাম্মদ ফারুক (৩৪)। তাঁরা শহরের বাইপাস সড়কের চারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোলায় মৎস্যজীবী লীগের নেতা আটক

ভোলা প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ মৎস্যজীবী লীগের এক নেতাকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে ভোলার কোস্ট গার্ডের সদস্যরা সদর উপজেলার ব্যাংকের হাট-সংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁকে আটক করেন।

আটক ব্যক্তির নাম মো. মোশারফ হোসেন (৬০)। তিনি মৎস্যজীবী লীগের টাস্কফোর্স প্রতিনিধি বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

কোস্ট গার্ড জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাত ১টায় ভোলার কোস্ট গার্ড বিশেষ অভিযান চালিয়ে মোশারফ হোসেনকে আটক করে।

কোস্ট গার্ড ভোলা দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভোলা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সূর্যের দেখা নেই, কনকনে ঠান্ডায় কাবু জনজীবন

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও 
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

আকাশে সূর্যের কোনো দেখা নেই। ঘন কুয়াশায় মোড়া ঠাকুরগাঁও শহর। সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে। কনকনে ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে সড়কের পাশে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা খুঁজছে শীতার্ত লোকজন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা ঘুরে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।

গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ জেলায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। যদিও ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো আবহাওয়া অফিস নেই, তবে জেলার ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, সকাল ৭টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ১০টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে বাতাসের কারণে অনুভূত তাপমাত্রা ছিল প্রায় ১০ ডিগ্রির মতো।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানপাট তখন বন্ধ। পশ্চিম দিক থেকে আসা হিমেল বাতাস শীতের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্য দিনের তুলনায় সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও কম। জীবিকার তাগিদে শ্রমজীবী মানুষ বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হলেও পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় ফুটপাতে আশ্রয় নেওয়া দরিদ্র লোকজন আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র মানুষ। তাদের অনেকেরই গরম কাপড় নেই। তাই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে কাগজ, পলিথিন ও ছেঁড়া কাপড় জ্বালিয়ে রাত ও সকাল পার করছে তারা।

সকালে সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক হাসান রাব্বির সঙ্গে। সড়কের পাশে কাগজ ও পলিথিন জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে পোহাতে তিনি বলেন, ‘আগে সকাল ৭টায় রিকশা নিয়ে বের হতাম। কিন্তু এখন ঠান্ডা এত বেড়েছে যে আজ ১০টার আগে বের হতে পারিনি। কুয়াশা একটু কমার অপেক্ষা করছি।’ শীতের কারণে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে বলে জানান শহরের কালীবাড়ি এলাকার কলা বিক্রেতা ভূষণ রায়। তিনি বলেন, ‘সোয়েটার, টুপি, মাফলার পরেও শরীর বাঁচে না। শীত কিছুতেই মানছে না।’

এদিকে শীত মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকায় ৮ হাজার ৫০০ কম্বল কেনা হয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, এ বছর ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে কম্বল কেনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ৭ হাজার কম্বল এবং বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে আরও দেড় হাজার কম্বল পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

জাবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

‘আগামীকাল বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে’ এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক ও প্রতিবাদ মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাকসু, শাখা ছাত্রশিবির, শাখা ছাত্রশক্তি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে ‘আগামীকালকে (শুক্রবার) বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

সমাবেশে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক লড়াই করে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের লড়াই শুরু হবে শহীদ ওসমান হাদির ইনকিলাব মঞ্চের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। আগামীকালকে বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এই খুনি হাসিনার দল হাজার হাজার নিষ্পাপ বাংলাদেশের দামাল ছেলেদেরকে হত্যা করেও ওর রক্ত পিপাসা মেটেনি। বিদেশে বসে এখনো বিপ্লবীদের হত্যা করার ছক করছে। আমরা আজ এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে স্পষ্ট করে বলতে চাই শহীদ ওসমান হাদির রক্তের ওপর দিয়ে, শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। যে সমস্ত ভারতীয়রা বাংলাদেশে বৈধভাবে অবৈধভাবে বাংলাদেশে চাকরি করছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ভারতে পুশব্যাক করতে হবে। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা ওসমান হাদির খুনিকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।’

মোস্তাফিজুর রহমানের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা।

এরপর আজ শুক্রবার দুপুরেও মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে একই ধরনের বক্তব্য লিখে পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, শুধু রাজনৈতিক লড়াইয়ে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয় না। শহীদ ওসমান হাদি ভাই ইনকিলাব মঞ্চের মাধ্যমে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী প্রক্সি উদীচী, ছায়ানটের কালচারাল হেজেমনির বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু করেছিল, সেই লড়াই জারি রাখতে হবে। তাদের সকল আধিপত্যবাদী বয়ানকে তছনছ করে দিতে হবে। ইট, পাথরের দেয়াল ভেঙে আধিপত্যবাদকে মোকাবিলা করা যায় না, সেটা হাদি আমাদের শিখিয়েছে।’

অন্য আরেকটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘গতকাল শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ভাইয়ের মৃত্যু-পরবর্তী প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে প্রদত্ত আমার বক্তব্যের কিছু শব্দ নিয়ে এই স্পষ্টীকরণ প্রদান করছি। বক্তব্যে ব্যবহৃত “তছনছ” শব্দটির মাধ্যমে ভাঙচুরকে বোঝানো হয়নি। বরং এর অর্থ ছিল শহীদ হাদির যে স্বপ্ন নিয়মতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে বিকল্প কাঠামো গড়ে তুলে, সর্বদা সচেতন থেকে ফ্যাসিবাদী বয়ানকে মোকাবিলা করা।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এ প্রসঙ্গে আরও যুক্ত করা প্রয়োজন যে, উদীচীসহ উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রেখে আসছে। তারা বাংলাদেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। তবে ফ্যাসিবাদের আদর্শিক ভিত্তিকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবেই মোকাবিলা করব, ইনশা আল্লাহ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত