Ajker Patrika

ছয় বছরেই স্বপ্ন ম্লান: কমিউনিটি সেন্টার হয়ে উঠছে যশোর আইটি পার্ক

জাহিদ হাসান, যশোর
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫: ১৫
ছয় বছরেই স্বপ্ন ম্লান: কমিউনিটি সেন্টার হয়ে উঠছে যশোর আইটি পার্ক

যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক উদ্বোধনের ছয় বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল রোববার। একটিমাত্র বিদেশি কোম্পানি এই পার্কে জায়গা বরাদ্দ নিলেও দুবছর আগে সেটিও পার্ক ছেড়ে চলে গেছে। এমনকি বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রথমদিকে চুক্তিবদ্ধ ৩৩টির মধ্যে ২৬টি কোম্পানি পার্ক ছেড়ে চলে গেছে। অবশিষ্ট যে সাতটি কোম্পানি রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই রুগ্ন।

এদিকে, আইসিটি শিল্পের বিকাশ ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে পার্কটি পথচলা শুরু হলেও সেই মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে গেছে পার্কটির দায়িত্বে থাকা কোম্পানি টেকসিটি। পার্কটিতে চাকরি মেলা, বিয়ে–বৌভাতের মতো অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। লোকসান ঠেকাতে পার্কের তিন তারকা মানের ডরমিটরিটিতে চালু হয়েছে ‘হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট’।

২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই পার্ক উদ্বোধন করেন। এরপর সরকার টেকসিটি নামের একটি কোম্পানিকে পার্কটি দেখভালের দায়িত্ব দেয়। শিগগিরই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে টেকসিটি কর্তৃপক্ষের বিরোধ বাড়তে থাকে।

নতুন করে টেকসিটি অন্তত ৩০টি কোম্পানিকে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু জায়গা ভাড়ার বিষয়ে কোনো নীতিমালা অনুসরণ না করার অভিযোগ রয়েছে। একই পার্কে ১৭ টাকা ২৬ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ২৯ টাকা পর্যন্ত প্রতি বর্গফুটের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। একেক কোম্পানির কাছ থেকে একেক ধরনের ভাড়া আদায় করায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।

এছাড়া বিদ্যুৎ বিলের বিষয়েও উদ্যোক্তাদের অভিযোগ রয়েছে, গড়ে ১৫ টাকা ইউনিট হিসাবে বিল আদায় করছে টেকসিটি। অথচ বিদ্যুৎ বিলের সরকারি ব্যবসায়িক রেট সর্বোচ্চ ১০ টাকা বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পার্কে গিয়ে উদ্যোক্তা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কোম্পানি টেকসিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পার্ক স্থাপনের শুরুতে উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে জায়গা বরাদ্দ নেন। ওই চুক্তিতে পার্ক ব্যবস্থাপনার জন্য তৃতীয় কোনো কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে—এমন কথা বলা নেই।

চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরই উদ্যোক্তারা জানতে পারেন টেকসিটি নামের একটি কোম্পানিকে পার্কের জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার এখতিয়ারসহ ব্যবস্থাপনার পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যে চুক্তির মাধ্যমে টেকসিটিকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই চুক্তিটিও অসম। কারণ, জনগণের টাকায় স্থাপিত পার্কের আয়ের মাত্র ১৮ শতাংশ পাচ্ছে সরকার, ৮২ শতাংশ নিচ্ছে টেকসিটি কর্তৃপক্ষ। অথচ শুরুতে এই পার্কে টেকসিটির কোনো বিনিয়োগই নেই।

শেখ হাসিনা সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক।পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, ৪০টির মতো কোম্পানি বর্তমানে অপারেশনে রয়েছে। যদিও টেকসিটি কর্তৃপক্ষের দাবি, ৫৭টি কেম্পানি জায়গা বরাদ্দ নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে মাত্র ১০টি কোম্পানি সফটওয়্যার তৈরি বা বিপণন নিয়ে কাজ করে। অবশিষ্ট কোম্পানিগুলো ই–কমার্স, কল সেন্টার, ইন্টারনেট সেবাদানকারী, ডিজিটাল মার্কেটিংসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকসিটির মহাব্যবস্থাপক (জেনারেল ম্যানেজার) শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী তিন ধরনের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেগুলো হলো—তথ্য প্রযুক্তি, তথ্য প্রযুক্তির (ইএস) ওপরে নির্ভর করে এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউট সোর্সিং)। বর্তমানে পার্কে ১০টি সফটওয়ার কোম্পানি রয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে কোনো বেশি ভাড়া বা বিদ্যুৎ বিল নেওয়া হয় না। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি দুই বছর পর ভাড়া বৃদ্ধি করে এই পর্যায়ে এসেছে। আইটি পার্কের সমস্যা ও বিনিযোগকারীদের সব অভিযোগ বাংলাদেশ হাই–টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ জানে।’

হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানিগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ২৬টি কোম্পানি ব্যবসা গুটিয়ে পার্ক ছেড়ে চলে গেছে।

কেন ব্যবসায়ীরা চলে গেলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ীরা বলেন, দক্ষ জনশক্তির অভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া এই পার্কে যে ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, বাস্তবে তার কিছুই নেই। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবার একাধিক লাইন থাকার কথা ছিল, কিন্তু তা নেই। বিদ্যুৎ বিল মাত্রাতিরিক্ত। শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে বাইরে আইটি পার্ক স্থাপিত হলেও সেই তুলনায় ভাড়া বেশি।

হাই–টেক পার্কের ভেতর খালি জায়গা।বিনিয়োকারীরা জানান, এই পার্কে ৬০০–৭০০ মানুষের কর্মস্থান হয়েছে। তবে ছয় বছরের অধিক সময় চাকরিরত কর্মীর সংখ্যা ১৫০ জনের বেশি না। বেশির ভাগ কর্মী আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকেন। ই–কমার্স ও কল সেন্টারে বেশি কর্মী কাজ করেন। তাঁদের বেতন ১০ হাজারের নিচে। যে কারণে তিন থেকে ছয় মাসের বেশি ওই কর্মীরা টিকছে না। ফলে আইটি খাতের দক্ষ জনশক্তিও এখানে তৈরি হচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন উদ্যোক্তা বলেন, পার্কের ক্যাফেটেরিয়া ভবনে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত মিলনায়তন রয়েছে। সেখানে প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মশালা–সেমিনারের বদলে বিয়ে–বউ ভাতের অনুষ্ঠান বেশি হয়। যে কারণে পার্কের প্রযুক্তি ভিত্তিক পরিবেশ থাকছে না।

টেকসিটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের অত্যন্ত ৫০টি অনুষ্ঠান হয়েছে। এর মধ্যে বিয়ে–বউ ভাতের মতো অনুষ্ঠান, এছাড়া চাকরি মেলাসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানও হয়েছে। 

 ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সফটওয়্যার, অ্যানিমেশন, গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করার জন্য অ্যানিমেক্স অ্যানিমেশন স্টুডিও নামের একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান পার্কটির ১৩ তলায় সাড়ে ৭শ বর্গফুট জায়গা নেয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের কারণে জায়গা ছেড়ে দেয়। এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে যশোরের একটি ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শেখ মেহেদী হাসান শুভ বলেন, ‘পার্কটির প্রধান সমস্যা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল। অযৌক্তিক বিল চাপিয়ে দিত। পার্কটিতে যে ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল নিয়ে কাজ করেছি; তারচেয়ে অনেক কম ভাড়া–বিলে শহরের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভালোভাবে কাজ করা যায়। আইটি পার্কটি বর্তমানে টিকে আছে বিভিন্ন কল সেন্টারে ওপর। ওখানে দু–একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ সফটওয়্যার ভিত্তিক কাজ করে না। পার্কটি সরকারের একটি নান্দনিক বিন্ডিং ছাড়া ওখানে কিছুই নাই।’

হাই–টেক পার্কের ভেতর খালি জায়গা।ফ্রিডম ফাইটার আইটির ডিজিএম মিকাইল হোসেন বলেন, ‘দেড় বছরের মতো কাজ করার পরে ঢাকাতে চলে যেতে হয়েছে। মূলত যে কাজে পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছিল; সেটি ওখানে হয় না। ওখানে পরিবেশের কারণে ভালো কোনো ডেভেলপার যেতে চায় না। নেওয়ার আগে কর্তৃপক্ষ যেসব অঙ্গীকার করেছিল সেটি তারা রাখতে পারেনি। তাই দিনকে দিন লোকসানের মুখে পড়ে পার্কটি ছেড়ে যেতে হয়েছে।’

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, পার্কের ভেতর সরকারি ডিজাস্টার রিকোভারি ডেটা সেন্টার নামের একটি স্থাপনা রয়েছে। ওই সেন্টারের বিদ্যুৎ বিল নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, ওই সেন্টারটির বিদ্যুৎ বিল উদ্যোক্তাদের ঘাড়ে চাপানো হয়।

এসব বিষয়ে পার্কটির ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসান কবির বলেন, ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে তুলনামূলক ভাড়া বেশি। এছাড়া আমরা সর্বোচ্চ রেটে বিদ্যুৎ বিল দিয়ে থাকি। বিদ্যুৎ বিল কমানো বা বিলটা বিশেষ শিল্প জোনের আওতায় আনার জন্য পার্ক কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এটি দেশের প্রথম আইটি পার্ক। ফলে সবকিছুতেই মডেল হতে পারত এটি। কিন্তু সরকার এটিতে সেভাবে মনোযোগ দেয়নি। মনোযোগ দেয়নি বলেই সিলিকন ভ্যালির স্বপ্ন ম্লান হয়েছে। দেশের প্রথম আইটি পার্কের লক্ষ্য বাস্তবায়ন না হওয়াতে নতুন করে এই সেক্টরে বিমুখ হচ্ছে তরুণ উদ্যোক্তারা।’

টিকে থাকতে হোটেল–রিসোর্ট
দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে আইসিটি শিল্পের বিকাশ ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে, যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু সেই মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে গেছে পার্কটির দায়িত্বে থাকা কোম্পানি টেকসিটি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে পার্কটিতে চাকরি মেলা, বিয়ে–বৌভাতের মতো অনুষ্ঠান করছে।

লোকসান ঠেকাতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে পার্কের তিন তারকা মানের ডরমিটরিটিতে চালু হয়েছে ‘হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট’। খান প্রোপার্টিস নামের একটি কোম্পানি ১০ বছরের চুক্তিতে এই হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট খুলেছে। 

খান প্রোপার্টিসের প্রজেক্ট ম্যানেজার আল বাকি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যশোর একটি হাব। পার্কটিতে সুন্দর একটা বিল্ডিং থাকলেও, আধুনিক সুযোগ সুবিধা এখানে ছিল না। একই সঙ্গে ম্যানেজমেন্টটাও। ফলে এটা আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। হাইটেক পার্কে ডরমিটরিটিতে এখন আমরা হোটেল ও রিসোর্ট করছি। পার্কের বিভিন্ন পরিবেশ ও পুকুরটি সংস্কার করে রিসোর্ট করা হয়েছে। আপাতত ১০ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক অংশীদারির মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করা হবে।’

এ বিষয়ে টেকসিটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, ‘ডরমিটরিটি বাইরের লোকদের ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত ভাড়া। কিন্তু এখানকার উদ্যোক্তাদের কাছে থেকে হাইটেকের নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হয়। এছাড়া অডিটরিয়ামসহ সব সুবিধা পান উদ্যোক্তারা।’

তবে লক্ষ্য অনেকখানি অর্জিত হয়েছে বলে দাবি করেন বাংলাদেশ হাই–টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিএসএম জাফরুল্লাহ। হোয়াটসঅ্যাপে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পার্কটিতে ৫৯টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫০০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এখানে ১২টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। কাজেই বলা যায় সরকার যে লক্ষ্য নিয়ে এই পার্ক স্থাপন করেছে, বিগত ছয় বছরে তা অনেকাংশেই বাস্তবায়ন হয়েছে।’

তবে আইসিটি ইকোসিস্টেম পরিপূর্ণরূপে কার্যকর হতে আরও সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের ভাড়া নিয়ে উদ্যোক্তাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এখানে মাসিক ভাড়া প্রতি বর্গফুটে মাত্র ১৬ টাকা এবং সার্ভিস চার্জ ৪ টাকা। এই ভাড়াকে কোনোভাবেই বেশি বলে মনে করে না কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিভিন্ন সময় উদ্যোক্তাদের ভাড়া মওকুফ করা হয়। সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দেশে–বিদেশে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও ভাড়া বেশি বলার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। আর বিদ্যুৎ বিল হাই–টেক পার্ক নির্ধারণ করে না। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্ধারিত বিল ব্যবহার অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে পরিশোধ করতে হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাণিজ্য থমকে আছে রেললাইনের অভাবে

  • ২০১৩ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয় অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি
  • সম্ভাব্যতা ম্যাপে ৯৮ কিলোমিটার রেললাইনে ৮টি স্টেশনের প্রস্তাব রাখা হয়
আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার বহুল প্রতীক্ষিত রেললাইনের নির্মাণকাজ এগোচ্ছে কচ্ছপগতিতে। এক যুগ আগে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর গেল মাসে যশোরের নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরাবাসী বলছে, শত বছরের প্রতীক্ষিত রেললাইন নির্মিত হলে একদিকে যেমন সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন বিকশিত হবে, অন্যদিকে পণ্য পরিবহনে খরচ কমায় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ ভাইসরয় সাতক্ষীরাকে রেললাইনে সংযুক্ত করে সুন্দরবন পর্যন্ত সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৫৮ সালে সাতক্ষীরা-ভেটখালি সড়ক নির্মাণের সময় জমি অধিগ্রহণ করেও নির্মিত হয়নি রেললাইন।

দীর্ঘকাল পরে ২০১০ সালে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক জনসভায় তৎকালীন সরকারপ্রধান নাভারণ-সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ রেললাইন নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০১৩ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয় অস্ট্রেলিয়ার ক্যানারেইল কোম্পানি লিমিটেড। সম্ভাব্যতা যাচাই করতে খরচ হয় ১১ কোটি টাকা। সম্ভাব্যতা ম্যাপে ৯৮ কিলোমিটার রেললাইনে ৮টি স্টেশনের প্রস্তাব রাখা হয়।

এরপর আবারও থেমে যায় রেললাইন নির্মাণের উদোগ। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রেললাইন স্থাপনের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাভারণ-সাতক্ষীরা রেললাইন স্থাপনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে যশোর রেলওয়ের পক্ষ থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। এরপর গত মাসে যশোরের নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ৫টি স্টেশনযুক্ত ৪২ কিলোমিটার রেললাইনের ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র।

সাতক্ষীরার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শেষ জেলা সাতক্ষীরায় ২২ লাখের বেশি মানুষের বাস। এ জেলা থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। সুন্দরবন, চিংড়ি, আম ও ভোমরা বন্দরের কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।

জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম বাবলা বলেন, নৌপথ ও আকাশপথে যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই জেলাবাসীর। রেললাইন নির্মিত হলে মৎস্য খাতের নতুন দিকের সূচনা হবে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নূর খান বাবুল বলেন, ‘সাতক্ষীরা থেকে আমরা যে পরিমাণ রাজস্ব সরকারকে দিই, সে ধরনের উন্নয়ন চোখে পড়ে না।’

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, কলকাতা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। তাই রেললাইন হলে ভোমরায় ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্র পাল্টে যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আফরোজা আখতার বলেন, ‘জিআই পণ্য আম, চিংড়ি এবং ভোমরা স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহনের জন্য সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ জরুরি। আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেললাইন নির্মাণের জন্য যত প্রচেষ্টা রয়েছে, সেটা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া:সেতুর খুঁটি নির্মাণেই মেয়াদ শেষ

  • আমুয়া ইউনিয়নে ধোপাবাড়ির খালের ওপর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালে মে মাসে
  • প্রথম দফায় ৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ এবং ওই বছরে ২০২৩ সালের অক্টোবরে কাজ শেষ করার কথা ছিল
  • নকশা পরিবর্তনের কারণে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা করা হয় এবং মেয়াদ শেষ হয় গত জুনে
  • ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা জেলহাজতে এবং তাঁদের সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত রয়েছে
আরিফ রহমান, ঝালকাঠি
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার আমুয়া ইউনিয়নে ধোপাবাড়ির খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতু। খুঁটি নির্মাণের পর কাজ বন্ধ রয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার আমুয়া ইউনিয়নে ধোপাবাড়ির খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতু। খুঁটি নির্মাণের পর কাজ বন্ধ রয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া ইউনিয়নে হাসপাতালসংলগ্ন ধোপাবাড়ির খালের ওপর সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হয়নি। দুই পাড়ে খুঁটি (পিলার) নির্মাণ করে বন্ধ রয়েছে কাজ। এতে পাশের ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতু ব্যবহার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নড়বড়ে ও ভাঙাচোরা ওই সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থী, নারী, শিশু ও হাসপাতালে আসা রোগীরা।

উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্তি কনস্ট্রাকশন এবং কবির ট্রেডার্স যৌথভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায়। সেতুটি নির্মাণে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ১৯ হাজার ৬৮০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নির্মাণকাজ ২০২২ সালের মে মাসে শুরু হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেতুর নকশা পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৬ কোটি ১৩ লাখ ২৫ হাজার ৪৪৭ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ জন্য মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু প্রায় ছয় মাস আগে মেয়াদ শেষ হলেও নির্মাণকাজ খুঁটি পর্যন্তই আটকে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা জেলহাজতে থাকা এবং তাঁদের সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত রয়েছে। এ কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রকল্প প্রকৌশলী মিলন ঘরামি ও ব্যবস্থাপক মো. বাহাদুর হাওলাদার জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ পুনরায় শুরু করা হবে এবং তিন থেকে চার মাসের মধ্যে শেষ করা হবে।

প্রকল্পের অগ্রিম কোনো বিল তোলা হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জিয়াউর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অগ্রিম কোনো বিল তোলেনি। তবে কাজের বেশ কয়েকটি মেমো তাঁদের কাছে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ধোপাবাড়ির খাল অনেক প্রশস্ত। এ জন্য স্থানীয়দের কাছে এটি নদী হিসেবে পরিচিত। খালটি বিষখালী নদীর সঙ্গে যুক্ত। খালের ওপর দীর্ঘদিন ধরে একটি কাঠের সেতু রয়েছে। এটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। নড়বড়ে হওয়ায় পথচারীরাও অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। সেতুটি শুধু আমুয়া ইউনিয়নের নয়, বরং পুরো কাঁঠালিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগমাধ্যম। সেতুটিকে কেন্দ্র করে রয়েছে ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপজেলার একমাত্র আমুয়া হাসপাতাল, আমুয়া বন্দর ও তিনটি বড় বাজার। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই সেতু ব্যবহার করছে, যার মধ্যে শিক্ষার্থী, রোগী, ব্যবসায়ী, নারী ও শিশু রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বাড়লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। স্কুলশিক্ষার্থীরা আতঙ্ক নিয়ে কাঠের সেতু পার হয়। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে গিয়ে পরিবারগুলোর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

আমুয়ার জনপ্রতিনিধি নকিরুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুটি আমাদের এলাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বছরের পর বছর কাজ বন্ধ হয়ে আছে।’

শেখ ফজিলাতুন্নেছা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ভাঙাচোরা কাঠের সেতু দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দ্রুত কাজ শেষ করা প্রয়োজন।’

কাঁঠালিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য নিয়মিত তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় কাজ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঝালকাঠির জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম সরকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহের নান্দাইল: নদীর জায়গা দখল করে আ.লীগ নেতার মার্কেট

  • নরসুন্দা নদীর পাড় দখলের অভিযোগ
  • কর্তৃপক্ষ বলছে, সওজের জমি। নিজস্ব সম্পত্তি দাবি বাচ্চুর
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
নরসুন্দা নদীর পাড় দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে দ্বিতল ভবন। ময়মনসিংহের নান্দাইলের তারের ঘাট বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসুন্দা নদীর পাড় দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে দ্বিতল ভবন। ময়মনসিংহের নান্দাইলের তারের ঘাট বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের নান্দাইলে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা হাবিবুর রহমান বাচ্চুর বিরুদ্ধে নরসুন্দা নদীর পাড় দখল করে পাকা ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। মুশুল্লি ইউনিয়নের তারের ঘাট বাজারসংলগ্ন নদীর জায়গা দখল করে দোতলা মার্কেট নির্মাণ করছেন তিনি।

হাবিবুর রহমান বাচ্চু মুশুল্লি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনি তারের ঘাট বাজার পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

সরেজমিনে দেখা যায়, তারের ঘাট বাজারে নরসুন্দা নদীর ওপর সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি সেতু রয়েছে। সেতুর পশ্চিম পাশে নদীর উপরে নির্মাণ হচ্ছে পাকা ভবন। সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে গেলে হাবিবুর রহমান বাচ্চুর ছেলে মো. ফয়সাল ছবি তোলার কারণ জানতে যান। এ সময় তিনি দাবি করেন, নদীর ওপর কোনো মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে না। নিজেদের জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ আমলে সাবেক এমপি তুহিনের প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছেন হাবিবুর রহমান বাচ্চু। অবৈধভাবে পাথর ব্যবসার পাশাপাশি দখল করেছেন সরকারি জায়গা। ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন। তবে সরকার পতনের পর ভোল বদলে ফেলেন।

নদীর জায়গায় ভবন নির্মাণের বিষয়ে হাবিবুর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘এই জমি আমার নিজস্ব সম্পত্তি। নদীর পাড়ের ভেতরে আমার আরও প্রায় ৫০ ফুট জমি আছে।’ তবে মুশুল্লি ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘নির্মাণাধীন স্থাপনাটি কোনো ব্যক্তিগত জমিতে নয়। এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যে পড়ে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বিজয় চন্দ্র বসাক বলেন, ‘সড়ক ও সেতুর দুই পাশে সওজের নিজস্ব জমি রয়েছে। সওজের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করা হলে তদন্তের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে।’

নান্দাইলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা জান্নাত বলেন, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আপাতত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোন্দল, তবু আশাবাদী বিএনপি

  • চার আসনের দুটিতে বিভক্ত বিএনপি
  • ভোটারদের কাছে ছুটছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীরা
  • তৎপর এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন
  • এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ
হাসান মাতুব্বর, ফরিদপুর
কোন্দল, তবু আশাবাদী বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুরের চারটি আসনের সব কটিতে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন উভয় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তৎপর এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মতো দলগুলোও। আগামী নির্বাচনে জেলায় অন্তত ৩০ জন প্রার্থী হবেন। তাঁদের মধ্যে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদসহ অন্তত ছয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।

চার আসনের দুটিতেই বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। তবে চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন। তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভোটে প্রভাব ফেলবে না। বিভেদ ভুলে

সবাই ধানের শীষের পক্ষেই কাজ করবে।’ জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির মুহাম্মাদ বদরুদ্দীন বলেন, ‘চার আসনেই আমাদের ভালো অবস্থান রয়েছে। এখন ইসলামি সমমনা ৮ দলের বিষয়ে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটি মেনে নেওয়া হবে।’

ফরিদপুর-১

আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-১ আসন। তিন উপজেলার মধ্যে বোয়ালমারী ও মধুখালীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভোট প্রায় সমান। আলফাডাঙ্গায় প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগ সমর্থক। ৫ আগস্টের পর বিএনপির প্রভাব বাড়লেও দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সঙ্গে কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের বিবাদে নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। গত ৭ নভেম্বর উপজেলা সদরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। এর মধ্যে ৪ ডিসেম্বর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে খন্দকার নাসিরুল ইসলামের নাম ঘোষণা করে বিএনপি। এ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থকেরা।

খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বহুদিন পরে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ এসেছে। এটি কাজে লাগাতে দলে কোনো ভেদাভেদ না রেখে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি।’ শামসুদ্দীন মিয়া বলেন, ‘খন্দকার নাসিরকে মনোনয়ন দিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করা হয়েছে। তাঁর কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, এলাকায় তাঁর কোনো ভোট নেই। যারা দলকে আজকের পর্যায়ে এনেছে, তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। সমর্থকদের নিয়ে বসে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. ইলিয়াস মোল্যা। নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দলের জেলা আমির মুহাম্মদ বদরুদ্দীন বলেন, একজন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এলাকায় ইলিয়াস মোল্যার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলছে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে মুফতি মো. জাকির হুসাইন কাসেমী, খেলাফত মজলিস থেকে মুফতি শারাফাত হুসাইন ও ইসলামী আন্দোলন থেকে ওয়ালিউর রহমান প্রার্থী হতে পারেন। এনসিপির মনোনয়ন পেতে পারেন হাসিবুর রহমান অপু। সাবেক ছাত্রদল নেতা আবুল বাসার খান ও সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ফরিদপুর-২

সালথা ও নগরকান্দা উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-২ আসন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এখান থেকে নির্বাচিত হন বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমান। এবার বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন তাঁর মেয়ে শামা ওবায়েদ। নির্বাচনী প্রচারে বাবার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী নগরকান্দা উপজেলা আমির সোহরাব হোসেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন শাহ আকরাম আলী। ফরিদপুরে তিনি সর্বজনশ্রদ্ধেয় মুরব্বি হিসেবে পরিচিত। ইসলামি বক্তা হিসেবেও তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। শাহ আকরাম আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আলেম-ওলামাদের সমর্থক বেশি। সেই হিসেবে চেষ্টা করছি ইসলামি দলগুলোর একক প্রার্থী হতে। সভা-সমাবেশে যেভাবে সাড়া পাচ্ছি, তাতে আমি বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’

ফরিদপুর-৩

ফরিদপুর সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে ফরিদপুর-৩ আসন। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আসনটি ছিল বিএনপির সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের দখলে। এবার এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তাঁর মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। তবে তাঁকে মেনে নিতে রাজি নন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোদাররেছ আলী ইছার অনুসারীরা। চৌধুরী নায়াব ইউসুফের প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সমাবেশও করেছেন তাঁরা। চৌধুরী নায়াব ইউসুফ বলেন, ‘আমার বাবা এখান থেকে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। এটা প্রমাণিত যে ফরিদপুর সদরের মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে। মানুষ গত ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি। তারা আবার বিএনপির শাসন ফেরাতে চায়।’

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী আবদুত তাওয়াব নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারে দখল বাণিজ্য ও চাঁদাবাজিমুক্ত একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ। স্বতন্ত্র হলেও তাঁকে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। তবে গত ১৯ অক্টোবর তাঁর গণসংযোগে বিএনপি সমর্থকদের হামলার পর তাঁকে আর মাঠে দেখা যায়নি।

খেলাফত মজলিস থেকে আমজাদ হোসাইন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে কামরুজ্জামান ও ইসলামী আন্দোলন থেকে কে এম সারোয়ার মনোনয়ন পেতে পারেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন মোর্শেদুল ইসলাম আসিফ নামের এক তরুণ। হাতেনাতে চাঁদাবাজ ধরে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকায় আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। ফরিদপুর পৌরসভায় নিজ উদ্যোগে মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

ফরিদপুর-৪

ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন। এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবলু। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ফরিদপুর-২ আসনে হলেও দল তাঁকে এখানে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে। তাঁর বিভিন্ন সমাবেশ ও উঠান বৈঠকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের দেখা গেছে। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ভাঙ্গা উপজেলা আমির সরোয়ার হোসেন। সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন তিনি। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন মো. মিজানুর রহমান মোল্যা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন স্থপতি মুজাহিদ বেগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত