কুষ্টিয়ায় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন অধ্যক্ষের

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৪, ২২: ৩৮

কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী ও তাঁর ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদ চৌধুরীর নির্দেশে দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ তুলেছেন অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান সুমন। এর আগে বিকেল ৪টায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। 

আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের আব্দুর রাজ্জাক মিলনায়তনে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তিনি তার অভিযোগের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। 

অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান সুমন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে কলেজের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। 

লিখিত বক্তব্যে অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান সুমন বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী আ ক ম সরোয়ার জাহানের নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছি। এরই প্রেক্ষিতে বিজয়ী এমপি রেজাউল হক চৌধুরী ও তাঁর ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদ চৌধুরীর আমার প্রতি ক্ষোভ রয়েছে। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর বিভিন্ন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এমপি আমাকে হুমকিও দিয়েছেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এমপির ভাই বুলবুল আহমেদ চৌধুরী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। এরই অংশ হিসেবে তাদের নির্দেশে গতকাল বুধবার দুপুরে দৌলতপুর কলেজ চত্বরে তাদের অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে আমার ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় কলেজের পক্ষ থেকে দৌলতপুর থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’ 

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার দুপুরে দৌলতপুর কলেজ ক্যাম্পাসের আমতলায় অবস্থান নেয় উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত সহকারী রাজু আহম্মেদ, দেহরক্ষী জাফর ইকবাল ও সহকারী লাইব্রেরিয়ান মোমেনুর রহমান মোহনের সঙ্গে তাদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এ সময় তারা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের অধ্যক্ষের লাইসেন্সকৃত শটগান দিয়ে গুলি করে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এরই প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ উত্তেজিত হয়ে তাদের ধাওয়া করলে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। 

উত্তেজিত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। কার্যালয়ের গেটে তালা ঝুলতে দেখে তারা অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত গাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুরে চালায়। পরে পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করে। 

এ দিকে বিকেলে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। সংবাদ সম্মেলনে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কলেজের অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান খান সুমনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তার লাইসেন্সকৃত অস্ত্র দিয়ে গুলি করার হুমকি দেন বলে অভিযোগ তোলা হয়। 

দৌলতপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘অধ্যক্ষ ও তাঁর পোষা গুন্ডারা আমাদের গুলি করে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।’ এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার দাবি করেন তারা। 

এ অভিযোগ প্রসঙ্গে দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. ছাদিকুজ্জামান খান সুমন বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাদের গুলি করে হত্যার হুমকির ঘটনা সঠিক নয়। বর্তমানে কলেজে ফরম পূরণ বা অন্য কোনো কার্যক্রম চলছে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধে এমপি ও তার ভাইয়ের নির্দেশে বহিরাগত ক্যাডাররা কলেজে হামলা চালিয়ে আমার গাড়িসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করেছে।’ 

তবে অধ্যক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করে এমপির ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদ টোকেন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি কিছুই বলব না। আপনারা (সাংবাদিকেরা) যাচাই-বাছাই করলে, আসল ঘটনা জানতে পারবেন।’ 

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত