গেমে আসক্তি থেকে মানসিক সমস্যা, সড়কে ২০ গাড়ি ভাঙল তরুণ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৯: ১৪
Thumbnail image

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে মোবাইলে ফ্রি-ফায়ার গেমে আসক্তি থেকে মানসিক ভারসাম্য হারানো এক তরুণ সড়কে থাকা অন্তত ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে মোহনগঞ্জ পৌর শহরের বসুন্ধরা মোড়ে ভাঙচুরের এ ঘটনা ঘটে।

ওই তরুণের নাম হারেছ রাকিব (২০)। তিনি উপজেলার বাহাম গ্রামের ফজল হকের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাকিব নামের ওই তরুণ শহরের হাসপাতাল রোডের শৌখিন কমিউনিটি সেন্টারের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। পরে সড়ক দিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে বসুন্ধরা মোড় পর্যন্ত মোটরসাইকেল, অটোরিকশাসহ সামনে যে গাড়ি পড়েছে সবগুলোতে আঘাত করেছেন। একপর্যায়ে বসুন্ধরা মোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির চালক ও মালিকেরা রাকিবকে আটক করে তাঁর দুই হাত বেঁধে রাখেন।

খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সেখানে হাজির হয়। পরে মানসিক ভারসাম্যহীন রাকিবকে তাঁর বাবার হাতে বুঝিয়ে দিয়ে পুলিশ চলে যায়। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোহাম্মদ আলী বিষয়টি সুরাহা করবেন বলে আশ্বাস দিলে ক্ষতিগ্রস্তরা রাকিবকে ছেড়ে দেন। পরে রাকিবকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তরুণের ভাঙচুর করা সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ছবি: আজকের পত্রিকাঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার দুই পাশে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, মাইক্রোসহ অসংখ্য গাড়ি ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। লাঠির আঘাতে কোনোটার ট্যাংক চ্যাপ্টা হয়েছে। কোনো গাড়ির কাচ ভেঙেছে। রাস্তার পাশেই পড়ে আছে কাচের ভাঙা টুকরো। ভাঙচুরের ঘটনায় কিছু সময়ের জন্য রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসব দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে যায়।

বসুন্ধরা প্লাজার দোকানি প্রত্যক্ষদর্শী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ছেলেটা অস্বাভাবিক আচরণ করছিল। হয়তো পাগল নয়তো অতিরিক্ত নেশা করেছে। হাতে থাকা লাঠি দিয়ে সড়কে থামানো সব গাড়ি ভেঙে দিয়েছে। লোকজন নিরুপায় হয়ে তাকে বেঁধে রেখেছে। ভাগ্য ভালো যে কোনো মানুষকে পেটায়নি। শুনেছি, গতকাল বারহাট্টা এলাকায় একজন মানুষকে পিটিয়ে চলে এসেছে রাকিব।’

ক্ষতিগ্রস্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক শহরের বাসিন্দা শফিক মিয়া বলেন, ‘চাকার টায়ার পরিবর্তন করে রাস্তার পাশে সিএনজিটা রেখে বাসায় গিয়েছিলাম। এসে দেখি লাঠি দিয়ে আঘাত করে সামনের কাচ ভেঙে দিয়েছে। এই কাচের দাম ১২ হাজার টাকা। ছেলেটা পাগল বা নেশাখোর মনে হচ্ছে। মেম্বার সাহেব বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন। তাতে আর কী হবে। যদি পাগল হয় ক্ষতিপূরণ তো যথাযথ পাব না। আমারই কপাল খারাপ। নিজেই কিনে নিতে হবে। সে অসুস্থ হলে অভিভাবকদের উচিত বাসায় রাখা। রাস্তায় ছাড়লে তো এভাবে আমাদের মতো গরিবের ক্ষতি করবে। আর নেশাগ্রস্ত হলে পুলিশে দেওয়া দরকার।’

ভাঙচুর করা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। ছবি: আজকের পত্রিকাবাহাম গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘প্রায় দুই বছর আগে মোবাইলে অতিরিক্ত মাত্রায় ফ্রি-ফায়ার গেম খেলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে রাকিব। পরে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর পর কিছুটা ভালো হয়েছিল। ছয় মাস ধরে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে আবার রাকিবের মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। গাড়ি ভাঙার বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে রাতে বসব। আলোচনা করে এটি সমাধান করে দেব।’

এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মজিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে ওই তরুণকে তার বাবার হাতে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। ছেলেটাকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয়েছে। কী কারণে এমন অবস্থা তার এ বিষয়ে জানা নেই। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির কোনো মালিক এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত