ঈশ্বরগঞ্জে মাদ্রাসার উপবৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার অভিযোগ

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৩, ১২: ৫৪
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৩, ১৩: ৪২

টাকা দিলেই মিলবে সরকারি উপবৃত্তি—শিক্ষার্থীদের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন অফিস সহকারী (কেরানি)। পরে উপবৃত্তির তালিকায় নাম না থাকায় টাকা ফেরত চাইতে গেলে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের হুমকি দেন ওই অফিস সহকারী। এমন অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ডিএস কামিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী (কেরানি) ফয়জুর রহমানের বিরুদ্ধে।

আজ রোববার ওই অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ ডিএস কামিল মাদ্রাসার ফাজিল প্রথম বর্ষের ৪৪ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য আবেদন করেন। অফিস সহকারী ফয়জুর রহমান শিক্ষার্থীদের জানান, তাঁকে ১ হাজার টাকা করে দিলে সবাইকে উপবৃত্তি পাইয়ে দেবেন। উপবৃত্তি পাওয়ার আশায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই তাঁকে ১ হাজার টাকা করে দেন, কিন্তু উপবৃত্তির তালিকায় নাম আসে হাতেগোনা কয়েকজনের।

এদিকে টাকা দিয়েও উপবৃত্তির তালিকায় নাম না আসায় ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। তালিকায় নাম না থাকায় টাকা ফেরত চাইতে গেলে অফিস সহকারী ফয়জুর রহমান তাঁদের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের হুমকি-ধমকি দেন। এই ভয়ে উপবৃত্তির জন্য টাকা দেওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী চুপ হয়ে গেলেও জেসমিন আক্তার ও মারজিনা আক্তার নামে দুই শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আমি নিম্ন পরিবারের সন্তান। ফয়জুর রহমান আমাদের উপবৃত্তি পাইয়ে দিবে বলে ১ হাজার টাকা এবং উপবৃত্তির ফরম বাবদ আরও ২০০ টাকা নেয়। কিন্তু তালিকায় নাম না আসায় টাকা ফেরত চাইতে গেলে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দিব।’

ভুক্তভোগী অপর শিক্ষার্থী মারজিনা বলেন, ‘বিষয়টি আমরা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে জানানোর পর তিনি বলেন, তোমরা যা করার তাই করো, আমার কিছু করার নাই।’

ফাজিল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাইদুলও ভুক্তভোগী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ফয়জু কেরানি আমার কাছে উপবৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১ হাজার টাকা দাবি করছিলেন। পরে আমি তাকে ৭০০ টাকা এবং আবেদনের জন্য আরও ২০০ টাকা দেই। কিন্তু উপবৃত্তির তালিকায় আমার নাম আসেনি। পরে তাঁর কাছে টাকা ফেরত চাইতে গেলে উনি আমাকে হুমকি-ধমকি দেন।’

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত অফিস সহকারী ফয়জুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ উঠেছে, সবই ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।’

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ডিএস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. শহীদুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এলে তাদের বলেছি, উপবৃত্তির তালিকা তো আর আমরা করি না। এটা ওপর থেকে হয়। তোমাদের এ বিষয়টা বারবার অবগত করার পরও কেন কেরানিকে টাকা দিলা। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপবৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার নামে তাঁর টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি তিনি এমনটি করে থাকেন, তাহলে তাঁর (অফিস সহকারী) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. হাফিজা জেসমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপবৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অফিস সহকারীর টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের কপি জেলা প্রশাসক বরাবরও পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করার জন্য। অভিযোগের সত্যতা মিললে ওই কেরানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।’ 

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এবং ঈশ্বরগঞ্জ ডিএস কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মো. মেহেদী হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার যেখানে বিনা মূল্যে উপবৃত্তি দিচ্ছে, সেখানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার দুঃসাহস তিনি কীভাবে পান! যেহেতু শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।’

তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগের সত্যতা মিললে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত