নিজ উদ্যোগে গুচ্ছগ্রামে ওয়্যারিং করে ইউএনওর কাছে মালামাল চাচ্ছেন পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ২২: ১০
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ২২: ৩৭

নেত্রকোনার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গুচ্ছগ্রামের ৫০ ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগের ওয়্যারিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে ওয়্যারিং করতে ইলেকট্রিশিয়ানকে মৌখিক নির্দেশ দেন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. ফিরোজ হোসেন। কাজে শেষে মজুরি ও মালামালের টাকা পরিশোধ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর আজ-কাল বলে দুই বছর পার করেছেন ডিজিএম। সম্প্রতি টাকা চাইতে গেলে ডিজিএম ফিরোজ পিয়ন দিয়ে গলা ধাক্কা দিয়ে ইলেকট্রিশিয়ানকে অফিস থেকে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

শেষে বাধ্য হয়ে প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজীনা শাহরীন ও পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ইলেকট্রিশিয়ান। ভুক্তভোগী ইলেকট্রিশিয়ানের নাম মো. মাসুদ ইয়ার খান। তিনি মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের বাসিন্দা। মাসুদ ইয়ার খান নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অনুমোদিত ইলেকট্রিশিয়ান। 

আজ মঙ্গলবার ইউএনও তানজীনা শাহরীন অভিযোগপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ৩ এপ্রিল অভিযোগটি করেন ওই ইলেকট্রিশিয়ান। নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী বিপ্লব কুমার অভিযোগটি তদন্ত করতে কেন্দুয়ার জোনাল অফিসের ডিজিএম মজিবুর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছেন। 

ঘটনা তদন্তে গতকাল সোমবার সরেজমিন গোবিন্দশ্রী গুচ্ছগ্রাম পরিদর্শন করেন কেন্দুয়ার ডিজিএম মজিবুর রহমান। পরে তিনি অভিযোগকারী ইলেকট্রিশিয়ানকে মদন জোনাল অফিসে ডেকে কথা বলেন। 

তবে অভিযোগকারী ইলেকট্রিশিয়ান মাসুদ ইয়ার খান বলছেন, ‘মদনের ডিজিএম আমাকে দিয়ে মালামাল ক্রয় করিয়ে কাজের বিল ও মালামালের টাকা কিছুই দিচ্ছেন না। দুই বছর ঘুরিয়ে এখন ঘাড় ধাক্কা দিয়েছেন। এটা অনেক বড় প্রতারণা। বিচার চেয়ে অভিযোগ দিয়েছি। এখন তদন্তের নামে কেন্দুয়ার ডিজিএম মজিবুর রহমান তাঁকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন। কেন অভিযোগ করলাম সে জন্যও নানা হুমকি দিচ্ছেন।’ 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে উপজেলার গোবিন্দশ্রী গুচ্ছগ্রামের হতদরিদ্র ৫০টি পরিবারের ঘরে ওয়্যারিং করার জন্য ইলেকট্রিশিয়ান মো. মাসুদ ইয়ার খানকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন মদন জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. ফিরোজ হোসেন। মাসুদ ওয়্যারিংয়ের কাজ শেষ করার পর সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু ইলেকট্রিশিয়ানের মালপত্র ও মজুরি বাবদ ৯০ হাজার টাকা পরিশোধ করেননি ডিজিএম ফিরোজ হোসেন। 

টাকা চাইতে গেলে ‘আজ নয় কাল দিচ্ছি’ বলে মাসুদকে দুই বছর ধরে ঘোরাচ্ছেন তিনি। এতে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি উল্লেখ করে ডিজিএম ফিরোজ হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ইলেকট্রিশিয়ান মাসুদ ইয়ার খান। ওই অভিযোগটির প্রাথমিক তদন্ত করার জন্য গতকাল সোমবার গুচ্ছগ্রাম পরিদর্শন করেন কেন্দুয়া জোনাল অফিসের ডিজিএম মজিবুর রহমান। পরে অভিযোগকারী মাসুদ ইয়ার খানকে মদন জোনাল অফিসে ডেকে নিয়ে কথা বলেন। 

মদন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে ইউএনও সাহেব কাজ করছেন। পরে এ বিষয়ে মতামত দেওয়া হবে।’ এদিকে তদন্ত কর্মকর্তা ও কেন্দুয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মজিবুর রহমান ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে পরে জানানো হবে। সরেজমিন কী পেলেন এমন প্রশ্নের জবাব তিনি দিতে চাননি। 

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজীনা শাহরীন বলেন, ‘আমাদের অফিসের নির্দেশ ছাড়াই নিজ উদ্যোগে গোবিন্দশ্রী গুচ্ছগ্রামের ওয়্যারিংয়ের কাজ করেছেন একজন ইলেকট্রিশিয়ান। তাঁকে ডিজিএম নির্দেশ দিয়েছিলেন কি না জানি না। এখন গুচ্ছগ্রামের ওয়্যারিংয়ের জন্য সরকারি মালামাল এসেছে। সরকারি মালামাল দেওয়ার জন্য ডিজিএম আমাকে একটি চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু সরকারি মালামাল তো আমরা বাইরে বিক্রি করতে পারব না, অথবা কাউকে দেওয়া আইনগতভাবে ঠিক না। যে মালপত্র গুচ্ছগ্রামে লাগানো হয়েছে, সেই মালামাল সরকারি মালামালের সমতুল্য কি না সেটা যাচাই করবে কে?’ 

নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম বিপ্লব কুমার জানান, অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে তদন্ত করার জন্য কেন্দুয়ার ডিজিএমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মদনের ডিজিএম টাকা আত্মসাৎ করেছেন কি না তা তদন্ত করে দেখা হবে। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত