Ajker Patrika

‘কষ্টের দান আত্তির পেডো যায়, বাইদ্য অইয়া আদা পাহা দান কাডি’

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ মে ২০২৪, ১৫: ৩৫
‘কষ্টের দান আত্তির পেডো যায়, বাইদ্য অইয়া আদা পাহা দান কাডি’

‘এক বছরের পুলাডারে রাইক্যা স্বামী মইরা গেছেগা ১৭ বছর আগে। স্বামীর রাইক্যা যাওয়া জমি আবাদ কইরা সংসার চালাই। পুলাডারেও পড়াইতাছি। পুলা এইবার ইন্টার পরীক্ষা দিব। কিন্তু আত্তির জ্বালায় তো দান না পাকতেই কাইট্টা আনা লাগতাছে। কষ্টের এই দান আত্তির পেডো যায়। তাই বাইদ্য অইয়া দুইডা কামলা লইয়া আমরা মা-পুলা আদা পাহা দানই কাটতাছি।’

আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা নাকুগাঁও গ্রামের জাহানারা বেগম (৪৮)।

জাহানারা একা নন, বন্য হাতির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় আধা পাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন উপজেলার সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও, পানিহাটা, বুরুঙ্গা, কালাপানিসহ সীমান্তবর্তী এলাকার দুই শতাধিক কৃষক। দুই সপ্তাহ ধরে হাতির দল ঠেকাতে তাঁরা ফসল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

বন বিভাগ, কয়েকজন কৃষক-কৃষানি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নে সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও, বুরুঙ্গা, কালাপানি ও পানিহাটা গ্রামে ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা ২৫০ একর জমিতে দুই শতাধিক কৃষক বোরো ধান আবাদ করেছেন। ওই এলাকায় ধান পাকতে আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু বাতকুচি, মৌচাক, চৌকিদার টিলা, ডালুকোনা, নাকুগাঁও ও পানিহাটা সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জঙ্গলে দুই সপ্তাহ ধরে শতাধিক বন্য হাতির দল তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে অবস্থান করছে।

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার রাতে পাহাড় থেকে নাকুগাঁও, বুরুঙ্গা, কালাপানি এলাকায় হাতির পাল ধানখেতে নেমে আসে। এ সময় এলাকাবাসী মশাল জ্বালিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতির দলকে প্রতিরোধ করেন। পরে হাতির পালটি আবার মৌচাক ও চৌকিদার টিলার জঙ্গলে চলে যায়। 

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষক-কৃষানিরা নাকুগাঁও, বুরুঙ্গা, কালাপানি, বাতকুচি ও পানিহাটা এলাকায় তাঁদের জমি থেকে পরিবারের লোকজন ও শ্রমিক দিয়ে আধা পাকা ধান কেটে নিয়ে আসছেন।

গতকাল বিকেলে নাকুগাঁও, বুরুঙ্গা, কালাপানি, বাতকুচি ও পানিহাটা সীমান্তবতী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাতির ভয়ে স্থানীয় কৃষক-কৃষানিরা তাঁদের খেতের আধা পাকা বোরো ধান কেটে নিয়ে আসছেন। কেউ মাথায় করে সেই ধান খেতের পাশে রাস্তায় আবার কেউ সীমান্ত সড়কে নিয়ে ফেলছেন। আবার কেউ সেই ধান সড়কেই মেশিনের মাধ্যমে মাড়াই করে স্তূপ করে রাখছেন।

হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে আধা পাকা ধান কাটা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকাবুরুঙ্গা গ্রামের কৃষক মুক্তার আলী বলেন, ‘আমি ৬০ শতক জমিতে বোরো ধান করেছি। ফসল পাকতে ও কাটতে আরও এক সপ্তাহ সময় দরকার। কিন্তু হাতির আক্রমণের ভয়ে নিরুপায় হয়ে আধা পাকা ফসল কাটতে বাধ্য হচ্ছি। এই ফসল পাহারা দিতে গিয়ে গত এক মাসে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। ফসল নিয়ে এলাকার কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় রয়েছে।’

কালাপানি গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কালাপানি পাহাড়ের ঢালে ৭০ শতক জমিতে ধান চাষ করছি। ফলনও ভালো অইছে। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে আত্তি অত্যাচার করে। সবাই রাত জাইগ্যা খেত পাহারা দেই। তাই নিরুপায় অইয়া আদা পাহা দান কাইট্টা ফালাইছি। দুশ্চিন্তা কিছুডা কমছে।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, হাতির দলটি তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পাহাড়ি জঙ্গলে অবস্থান করছে। প্রতি রাতে ধান খেতে হাতির দল লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। তাই ফসল রক্ষায় স্থানীয় অনেক কৃষক তাঁদের খেত থেকে আধা পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। হাতি প্রতিরোধে একটি দল কাজ করছে। এখন পর্যন্ত হাতি যাদের ফসল নষ্ট করেছে, তাদের বন বিভাগের কাছে ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পন্টিংয়ের আরেকটি রেকর্ড ভাঙলেন কোহলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত