‘প্রেমিকা’র বিয়ে মানতে না পেরে কুপিয়ে হত্যা

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২২, ১৮: ২৫
আপডেট : ৩০ জুন ২০২২, ১৮: ৩৫

এক সপ্তাহ আগে বিয়ে হয় দিতির। হাতে মেহেদির লাল রং এখনো উজ্জ্বল। ঈদের পর দিতিকে শ্বশুর বাড়িতে উঠিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিবেশী মাদকাসক্ত যুবক তাঁকে ভালোবাসতেন। তিনি এ বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। তাই দায়ের কোপে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন শেষ হলো দিতি বেগমের (১৮)। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর কালিনগর মহল্লায় দিতি খুন হন।

দিতি কালিনগর মহল্লার চাতাল শ্রমিক মো. মুছা মিয়ার মেয়ে। বিয়ের পর থেকে দিতি তাঁর বাবার বাড়িতেই ছিলেন। এ ঘটনায় প্রতিবেশী যুবক রহুল আমিন (২৫) পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।

পুলিশ ও দিতির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দিতির সঙ্গে ২৩ জুন উপজেলার চেল্লাখালী গ্রামের খায়রুল ইসলামের (২৬) বিয়ে হয়। খায়রুল কাজের সুবাদে রাজধানীর ডেমরায় বসবাস করেন। ঈদের পর দিতিকে তুলে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিবেশী রহুল দিতিকে ভালোবাসতেন। দিতিকে বিয়ে করতে না পেয়ে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। গতকাল বুধবার রাতে রহুল মাদক সেবন করে ঘর থেকে দা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েন। ঘরে ঢুকে দিতির মাথায় দা দিয়ে কোপ দেন। এ সময় দিতির মা চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তবে এর আগেই রহুল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিতিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মমেক) নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথে দিতি মারা যান।

পরে দিতির বাড়িতে পুলিশ যায়। রহুল পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এবং দিতিকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। বুধবার রাতেই সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আফরোজা নাজনীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এ দিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দিতির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, লাশের জন্য আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী নারী-পুরুষ অপেক্ষা করছেন। দিতির মা মনোয়ারা বেগম মেয়ের শোকে বিলাপ করছেন। নিজের বুকে চাপড়াচ্ছেন। অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘মাইয়াডারে সবাই মিইলা বিয়া দিছি। ঈদের পরে তোইল্যা নেওয়নের কথা। কিন্তু আমার মেয়েরে কী সর্বনাশ করল। আমি এর ফাঁসি চাই।’

বাড়ির আঙিনায় কবর দেওয়ার জন্য বাঁশ কেটে রাখা হয়েছে। দিতির স্বামী খায়রুলসহ সবাই নির্বাক হয়ে পড়েছেন। দিতির স্বামী খায়রুল বলেন, হামলার শিকার হওয়ার ১৫ মিনিট আগেও তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হয় দিতির। রাতে খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে আসেন তিনি। ঈদের পর দিতিকে উঠিয়ে নেওয়ার কথা, কিন্তু সব স্বপ্নই শেষ হয়ে গেল।

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, দিতিকে রহুল ভালোবাসতেন। তাঁকে বিয়ে করতে না পেরে প্রতিহিংসা থেকেই দিতিকে হত্যা করেন রহুল। এ ব্যাপারে আজ মেয়ের বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। অভিযুক্ত যুবককে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত