আসামির বাড়িতে ‘বিরিয়ানি’ খাওয়ার অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ২০: ৫১

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় মামলা তদন্ত করতে গিয়ে মামলার আসামির বাড়িতে ‘বিরিয়ানি’ খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এতে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে শঙ্কায় প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী, সাক্ষীসহ শিক্ষার্থীর অভিভাবক। 

তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তার দাবি, আসামির বাড়িতে নয়, তৃতীয়পক্ষের বাড়িতে খেয়েছেন তিনি। 

অভিযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তার নাম—মোহাম্মদ আব্দুল গফুর খান। তিনি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়াও উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে চলতি দায়িত্বে রয়েছেন। 

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার চরগোয়ালিনী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি বেদখলের ঘটনায় আদালতে দায়ের করা একটি মামলা তদন্তে গিয়ে এ ঘটনাটি ঘটে। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি বেদখলসহ জমিতে রোপণকৃত মূল্যবান গাছ কেটে আত্মসাতের অভিযোগে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩ এর ধারায় মামলা করা হয়। গত ২৮ মার্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. ইমরান বাদী হয়ে জামালপুরের ইসলামপুর আমলি আদালতে সিআর ১৩৮ (১) নম্বর একটি মামলা দায়ের করেন। 

মামলায় আসামিরা হলেন—চরগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আশরাফ আলী, তাঁর স্ত্রী জাহানারা বেগম, ছেলে মো. জীবন, মিজান রহমান বাবু, জাহাঙ্গীর আলম এবং তাঁর বোন পরিতন বেওয়া। 

মামলার সাক্ষী ও চরগোয়ালিনী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. চাঁন মিয়া বলেন, ‘মামলা তদন্ত করাকালে মামলার প্রধান আসামি আশরাফ আলীর বাড়িতে দুপুরে বাহারি বিরিয়ানি খেয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল গফুর খান। এতে সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’ 

বিদ্যালয়ের জমি বেদখল করে স্থাপনা নির্মাণমামলার বাদী ও লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. ইমরান বলেন, ‘জমি বেদখলসহ মূল্যবান গাছ আত্মসাৎ করায় বিদ্যালয়ের পক্ষে আমি বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করি। মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট বিচারক আদেশ দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার মামলার প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য তারিখ ছিল। কিন্তু এ দিন দুপুরে তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল গফুর খান আসামি আশরাফ আলীর ঘরে ‘বিরিয়ানি’ খেয়েছেন। এ ছাড়া আসামিদের সঙ্গে তাঁর সখ্য রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত না হলে, সরকারি সম্পদ বিদ্যালয়ের বেদখল থাকবে।’ 

স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাজমা বেগম, হেলাল মিয়া, বিলকিস, সোহেল মিয়াসহ আরও কয়েকজন জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামির ঘরে খাবার খাওয়ায় তারা হতবাক হয়েছেন। যেখানে বিদ্যালয়ের সরকারি সম্পদ জমি বেদখলের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেখানে যদি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামির বাড়িতে খাবার খায়, তাহলে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা চলতি দায়িত্বে) মোহাম্মদ আব্দুল গফুর খান মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসামির বাড়িতে খাওয়া হয়নি। তৃতীয়পক্ষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের বাড়িতে খেয়েছি। আসামি এবং ওই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের বাড়ি একই স্থানে হওয়ায় বিষয়টি ভিন্নভাবে কেউ ভেবে থাকতে পারেন। তবে মামলার তদন্তকাজ আইন অনুসারেই করা হবে।’ 

লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুল্লাহ আকন্দ বলেন, ‘ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের কিছু জমি বেদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের জমিতে রোপণকৃত বেশ কিছু মূলবান গাছ কেটে আত্মসাতের ঘটনাও ঘটেছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত