Ajker Patrika

সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো

কৌশিক হাসান মামুন, বারহাট্টা (নেত্রকোনা)
সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো

নেত্রকোনার বারহাট্টার রায়পুর ইউনিয়নের চাকুয়া বিলের সেতুটি নব্বইয়ের দশকে নির্মাণ করা হয়। ২০০৪ সালের বন্যায় সেতুর দুই পাশের মাটি সরে যায়। তারপর ১৮ বছর চলে গেলেও দুপাশে আর মাটি কাটা হয়নি। এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ নিয়ে দিনের পর দিন সেতুটি ব্যবহার করছেন। সেতুর দুপাশে মাটি না দিয়ে ইউনিয়ন অফিস থেকে দেওয়া হতো লিজ। লিজ নিয়ে সেতুর মাটি সরে যাওয়া অংশে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। এত বছর দশ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তি নিয়ে বাঁশের সাঁকোর সাহায্যে পার হয় সেতুটি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর মাটি সরে যাওয়া দুই পাশেই বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। এর ওপর দিয়ে লোকজন চলাচল করছে। সেতুর পূর্বদিকে যাওয়াইল, শিমুলিয়া, নকদাপাড়া, চাকুয়া, হাপানিয়া, কৈলাটি ও পশ্চিম দিকে ফকিরের বাজারসহ বেশ কিছু গ্রাম অবস্থিত। এসব গ্রামের মানুষ সেতুটি পার হয়ে জেলা সদর, হাসপাতাল, ইউনিয়ন পরিষদ ও হাটবাজারে যাতায়াত করেন।

ফকির বাজারের চল্লিশ কাহনিয়া হাফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে চাকুয়া বিলের এই সেতুতে বাঁশের সাঁকো দেখছি। এটা আমাদের কাছে মনে হয় যেন সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো। এটাতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে অনেক সময়ই এই রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় পানিতে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমাদের ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা যদি চাইতেন তাহলে এত দিনে সেতুটির দুপাশে মাটি দেওয়া হতো। তাঁরা তা না করে লিজ দিয়ে দেন। যারা লিজ নেয় তাঁরা আমাদের এলাকাবাসীর কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করেন। এতে তাঁরা লাভবান হলেও আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের কষ্ট হচ্ছে।

মোজাম্মেল নামে একজন বলেন, আমার বাড়ি কলমাকান্দার কৈলাটি ইউনিয়নে। রায়পুর ইউনিয়নের ফকিরের বাজারে যাচ্ছি। এটি একটি বিখ্যাত বাজার। তাই সবাই এখানে বাজার করতে আসেন। সেতুটি ভালো না থাকায় কৃষিপণ্য নিয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে ব্যয় ও ভোগান্তি বাড়ে।

বাজার নিয়ে সেতু দিয়ে পার হতে কষ্ট হয় না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের ইচ্ছা। তাঁরা চাইলেই সেতুর দুই পাশে মাটি কাটতে পারত। কিন্তু বছর বছর লিজের বর্ধিত মুনাফার আশায় তাঁরা তা করেননি। এতে আমরা যারা বাজার করতে আসি তাঁদের দুর্ভোগ শতগুণ বৃদ্ধি পায়।

ফকির বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, স্থানীয় গ্রামগুলোর মানুষ সেতুটি দিয়ে যাতায়াত ও যানবাহনে পণ্য পরিবহন করত। সেতুটির মাটি সরে যাওয়ায় গ্রাম থেকে শহরে ধান, চাল ও কৃষিপণ্য যানবাহনে নেওয়া যাচ্ছে না। এতে ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। অসুস্থ ব্যক্তি ও রোগীদের সাঁকো পার হয়ে হাসপাতালে যেতে অনেক কষ্ট হয়।

রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রাজুর কাছে মাটি না কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটিতে আগে লিজের মাধ্যমে বাঁশের সাঁকো দেওয়া হতো। এবার নির্বাচনের আগে আমি নিজের টাকায় সাঁকো করে উন্মুক্ত করে দিয়েছি।

এত দিনে মাটি কাটা হয়নি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, এসব নিয়ে কথা বলে আর পত্রিকায় লিখে কি হবে। এত বছর ধরে একটি সেতু পড়ে আছে সেটি কি এলজিইডি দেখে না।

বারহাট্টা উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তেঘুরিয়া বাজার থেকে ফকিরের বাজার পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার রাস্তাই কাঁচা। এক কিলোমিটার রাস্তার টেন্ডার হয়েছে। বাকিটাও দ্রুত হবে। এর মধ্যে চাকুয়া ব্রিজসহ একই রাস্তায় অপর আরেকটি ব্রিজ ‘প্রোগ্রাম ফর সাপোটিং রুরাল ব্রীজেস’ প্রকল্পের আওতায় দেওয়া হয়েছে। এতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। আশা করছি, দ্রুতই এটির কাজ শুরু হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত