Ajker Patrika

শেরপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ, হাসপাতালে সিট, ওষুধ ও স্যালাইন সংকট

শেরপুর প্রতিনিধি
শেরপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ, হাসপাতালে সিট, ওষুধ ও স্যালাইন সংকট

শেরপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। ধারণক্ষমতার অনেক বেশি রোগী প্রতিদিন হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে মেঝেতে। গত এক সপ্তাহে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্বল্প জনবল নিয়ে এত রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া এত রোগীর কারণে হাসপাতালে দেখা দিয়েছে ওষুধ ও স্যালাইন সংকট। তাই পাশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ময়মনসিংহ থেকে স্যালাইন এনে সেবা দেওয়া হচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরপুর পৌরসভা এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আক্রান্তদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু রয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও পল্লি চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিয়ে কিছু লোক সুস্থ হলেও অনেককেই আসতে হচ্ছে হাসপাতালে। 

এদিকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মাত্র আটটি সিট রয়েছে। সব মিলিয়ে ১৫ জন রোগী চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু হঠাৎ করে রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সিট তো দূরের কথা, কোনো জায়গাই খালি নেই। হাসপাতালের মেঝেতে ও চলাচলের রাস্তায়, বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও সিঁড়ির নিচে রেখে ডায়রিয়ার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে এত রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

শেরপুর শহরের মোবারকপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, ‘ছয় দিন ধরে আমার বমি ও ডায়রিয়া। জেলা সদর হাসপাতালে আমাকে নিয়ে আসেন স্বজনেরা। সিট পাইনি। তাই হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছি। 

সজবরখিলা এলাকার বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল মিয়া জানান, ‘আমার পরিবারের তিনজনের ডায়রিয়া। হাসপাতালে তিন দিন ধরে চিকিৎসা নিয়ে আজ ছুটি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। 

সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের মুন্সীরচর গ্রামের মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের গ্রামে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একটি শিশু মারা গেছে। আমার ছেলেরও ডায়রিয়া। ভয়ে ছেলেকে হাসপাতালে এনেছি।’ 

ঝিনাইগাতী উপজেলার মোছা হুজুরা বেগম বলেন, ‘ভর্তির পর আমার রোগী সিট পায়নি। বাধ্য হয়ে ফ্লোরে বিছানা পেতে আছি। দুইটা স্যালাইন হাসপাতাল থেকে ফ্রি দিয়েছে। এখন বাকিগুলো কিনতে বলছে।’ 

শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘গত বুধবার সারা দিনে রোগী ভর্তি ছিল ১২৮ জন এবং গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ২টা পর্যন্ত ১১০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ডায়রিয়ার চিকিৎসায় ২ থেকে ৩ মাসে যে ওষুধ লাগত, এখন একদিনেই তা লাগছে। এত রোগীকে চিকিৎসা দিতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হচ্ছে।’ 

শেরপুরের ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘গত কয়েক দিনে অন্তত ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়েছে। এতে ওষুধ ও স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা পাশের উপজেলা ও ময়মনসিংহ থেকে ওষুধ এবং স্যালাইন নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছি। খাবার নিয়ে জনগণের অসচেতনতা ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এমন হতে পারে। আশা করছি, দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।’ 

এ নিয়ে জানকে চাইলে সিভিল সার্জন অনুপম ভট্টাচার্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ, সেসব এলাকায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক দল গিয়ে পরামর্শ ও সেবা দিচ্ছেন। আশা করি খুব দ্রুত ডায়রিয়া এই প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আসবে। ডায়রিয়া শুরু হলেই খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বেশি বেশি তরল খাবার খেতে হবে।’ ৩

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত