শেরপুরে নতুন করে প্লাবিত ৬ ইউনিয়ন, জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

শেরপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৮: ১৮
Thumbnail image

টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও নতুন করে সদর ও নকলা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীসহ জেলায় আমন ধান-সবজি আবাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

প্রায় ৪৭ হাজার হেক্টর জমির আমন আবাদ এবং এক হাজার হেক্টর জমির সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ভেসে গেছে ২ হাজারেরও বেশি পুকুর ও মৎস্য খামার। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার প্রায় পৌনে দুই লাখ কৃষক। 

কৃষি বিভাগ বলছে, পানি পুরোপুরি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হবে। 

এদিকে গত তিন দিনে বন্যার পানিতে ডুবে নালিতাবাড়ীতে দুই সহোদরসহ পাঁচজন এবং নকলায় প্লাবিত এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ঢলের পানিতে ভেসে এসেছে একজনের মরদেহ। 

পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান। বাকি দুজনের বিষয়ে তিনি বলেন, একজনের লাশ ঝিনাইগাতীতে ঢলের পানিতে উজান থেকে ভেসে এসেছে। আরেকজন নকলায় বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছেন। 

পাহাড়ি ঢলে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে শেরপুর সদর উপজেলার খড়খড়িয়া-গাজীরখামার সড়কগত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের পানি কিছুটা নেমে গেলেও নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। এতে সদর ও নকলা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। আমন আবাদ, মাছের ঘের ও সবজি আবাদের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

ফসলের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে শেরপুর খামারবাড়ীর উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, পাহাড়ি ঢলে ৩ উপজেলার আমন ধান ও সবজি আবাদ নষ্ট হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি কমবেশি নির্ভর করবে পানি নেমে যাওয়ার ওপর। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হবে। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কর্মকার বলেন, পাহাড়ি ঢলে ও বাঁধ ভেঙে জেলার ৬ হাজার ৮৬টি পুকুর ভেসে গেছে। এতে সব মাছ বের হয়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাছচাষিরা। টাকার অঙ্কে প্রায় ৫৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। 

ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধ পরিদর্শন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামতের আশ্বাস দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, মহারশি নদীর বাঁধ উঁচু করার সুযোগ নেই। তবে ভাঙনকবলিত স্থান দ্রুত মেরামত করে দেওয়া হবে। 

এদিকে বন্যার্তদের জন্য জেলার বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে প্রশাসন। বন্যাকবলিত বেশ কিছু এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় রাতভর পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধারকাজ পরিচালনা করেছেন।

বন্যা পরিস্থিতি ও সরকারি ত্রাণ বিতরণ সম্পর্কে শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, অবিরাম বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তিনটি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করছে। আমাদের সংগ্রহে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট পানিবন্দী পরিবারগুলোর মাঝে সরবরাহ করা হয়েছে। আরও ২৫ হাজার প্যাকেট ত্রাণের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পরবর্তীতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত