ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ত তাঁত শ্রমিকেরা, বেড়েছে শাড়ি তৈরির খরচ

শরীফুল ইসলাম ইন্না, সিরাজগঞ্জ 
Thumbnail image

ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লিগুলোতে। বিভিন্ন নকশার শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করছেন তাঁত শ্রমিকেরা। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার কাপড়ের চাহিদা কম। এ ছাড়া রং, সুতা ও বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বাড়ায় শাড়ি-লুঙ্গি তৈরির খরচ বেড়েছে। 

তাঁত মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন থেকে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের ৯ উপজেলার মধ্যে বেশি কারখানা রয়েছে বেলকুচি, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, জেলার সদর ও কামারখন্দে। জেলায় ইঞ্জিন ও হাতে চালিত প্রায় সাড়ে তিন লাখের বেশি তাঁত রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। পয়লা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জেলায় তাঁতের শাড়ি-লুঙ্গির জমজমাট ব্যবসা হয়। এখন তৈরি হচ্ছে তোষা, জামদানি, কটন জামদানি, হাফ সিল্ক, কাতানসহ বিভিন্ন নকশার শাড়ি ও লুঙ্গি। প্রতিটি শাড়ি ৭০০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

জেলার তাঁতপল্লিতে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করেন নারী শ্রমিকেরা। তাঁরা নলি ভরা, সুতা প্রস্তুত করা, মাড় দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেন। এই অঞ্চলের উৎপাদিত শাড়ি ও লুঙ্গি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হয় ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। ঢাকার বিভিন্ন বুটিক হাউস এসব শাড়ি-লুঙ্গি রপ্তানি করছে বলে জানান তাঁত মালিকেরা। 

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে লুঙ্গি তৈরি করছেন এক শ্রমিক। ছবি: আজকের পত্রিকাবেলকুচি উপজেলার বেলকুচি গ্রামের তাঁত মালিক রহমত আলী বলেন, ‘গত বছর ব্যবসা মোটামুটি ভালো হয়েছে। এবারও চাহিদা রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনাই কম। শ্রমিকেরা দিন রাত পরিশ্রম করছেন। তারা বাহারী রঙ্গের শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করছেন। রং ও সুতাসহ কাঁচামালের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এ জন্য খুব একটা লাভবান হতে পারছি না।’ 

রং-সুতার দাম বেশি হওয়ায় কাপড়ের বাজারে প্রভাব পড়েছে বলে জানান বেলকুচি উপজেলার তামাই এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম। তিনি বলেন, ‘অবস্থা ভালো না। ঋণ করে ব্যবসা করতে হয়। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। বেচা-কেনা তুলনামূলক কম। শ্রমিক ও সংকট রয়েছে। কামকাজের অবস্থা ঈদের আগে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না।’ একই কথা জানান কামারখন্দ উপজেলার হায়দারপুর গ্রামের ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, ‘এবার কাপড়ের চাহিদা কম।’ 

বেলকুচি উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের শ্রমিক ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমরা যেভাবে কাজ করি সেভাবে আমাদের বেতন নাই। ছয় দিন কাজ করলে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। মজুরি কম হওয়ায় শ্রমিকেরা আসে না। আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই।’ 

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে তাঁতের তৈরি শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিক। ছবি: আজকের পত্রিকাসিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্প অনেক পুরোনো বলে জানান বেলকুচি হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ার লুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বৈদ্যনাথ রায়। তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো শাড়ি তৈরি করি। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের বেলকুচির তাঁতের শাড়ি পরেন। আমরা চাচ্ছি এই শাড়ির ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য। এ জন্য সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করি।’ 

সিরাজগঞ্জ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ার লুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বদিউজ্জামান মণ্ডল বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ জেলায় সাড়ে তিন লাখের ওপরে তাঁত রয়েছে। এসব তাঁতে যে কাপড় উৎপাদন হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে তিন হাজার কোটি টাকা কাপড় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা সেই অনুপাতে কম সাড়া পাচ্ছি। শাড়ি-লুঙ্গি বিক্রির যে রমরমা ভাব সেটা নেই। রং, সুতা সহ বিভিন্ন কাঁচা মালের দাম বাড়ায় কাপড়ের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। গত বছরের তুলনাই এবার চাহিদা একটু কম। রয়েছে শ্রমিক সংকট।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত