রুয়েটে নিয়োগ-পদোন্নতিতে অনিয়ম: কাল্পনিক পদে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ০৬ মে ২০২৪, ১১: ৩৮
Thumbnail image

চাকরি ও পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে বিশেষ খাতির করে আসছে। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তিনি রুয়েটে দুবার চাকরি পেয়েছেন। প্রথমবার নেওয়া চাকরি ছেড়ে দিয়ে দ্বিতীয়বার যোগ্যতা ছাড়াই বাগিয়ে নিয়েছেন বড় পদে চাকরি। আবার দ্বিতীয়বার নিয়োগ পেয়ে অনুমোদনহীন কাল্পনিক পদে তাঁকে পদোন্নতিও দেওয়া হয়েছে।

মুফতি মাহমুদ রনি নামের এই কর্মকর্তা রুয়েটে অতিরিক্ত পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) পদে কর্মরত। চাকরির নথি থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি), রাজশাহীর যন্ত্রকৌশল বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। এই প্রতিষ্ঠানটিই পরে রুয়েট হয়।

নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর রুয়েটে দুটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তখন সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরির জন্য আবেদন করেন রনি। ২০১১ সালের ৩০ মে রুয়েটের তৎকালীন রেজিস্ট্রার রনির নিয়োগাদেশ জারি করা হয়। এতে বলা হয়, প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়োগ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এই নিয়োগ দেওয়া হলো। রুয়েট সূত্র বলছে, ওই সময় রুয়েট প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে নিয়োগ পান রনি।

তবে পরে নতুন নীতিমালা হয়। এই নীতিমালা অনুসারে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরির জন্য সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসনিক/ একাডেমিক/পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। তবে রনির ওই অভিজ্ঞতা ছিল না।  

এরপর ২০১৬ সালে উপপরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এই বিজ্ঞপ্তির শর্ত ছিল, সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে গবেষণা ও সম্প্রসারণ কিংবা প্রশাসনিক কাজে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা। তবে রনির এই অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি সেই এস এম এন্টারপ্রাইজে ৬ বছর ৫ মাস ১১ দিন ও রুয়েটে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে ৪ বছর ৮ মাস চাকরির অভিজ্ঞতা দেখান। অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ না হলেও বিশেষ খাতিরে রনিকে আবার চাকরি দেওয়া হয়।

রনির যখন প্রথম চাকরি হয় তখন রুয়েটের উপাচার্য (ভিসি) ছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল করিম চৌধুরী। অনিয়মের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘১৩ বছর আগের কথা। এখন এসব মনে নেই। তবে নিয়োগে চাপ তো ছিলই। স্থানীয় নেতারা নিয়োগের সময় অনবরত ফোন করতেই থাকেন।’

রুয়েট সূত্র জানায়, চাকরি পেয়েই প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করতে শুরু করেন রনি। হয়ে যান রুয়েট কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক। এরপর নিজের পদোন্নতির জন্য চাপ দিতে থাকেন রুয়েট প্রশাসনকে। শেষে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর রনিকে উপপরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) পদ থেকে পদোন্নতি দিয়ে একই দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক করা হয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদিত রুয়েটের যে জনবলকাঠামো রয়েছে, তাতে অতিরিক্ত পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) নামে কোনো পদই নেই।

অনিয়ম করে রনিকে উপপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে তৎকালীন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অনেক আগের বিষয়। ফাইল না দেখে তো বলতে পারব না।’

রনি যখন অতিরিক্ত পরিচালকের কাল্পনিক পদে পদোন্নতি পান, তখন ভিসি ছিলেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। আর রেজিস্ট্রার ছিলেন অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন। তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিকবার মোবাইলে কল দেওয়া হলেও সাড়া দেননি।

রনির নথিপত্রে আরও দেখা গেছে, তিনি ২০০৮-০৯ সেশনে রুয়েটের এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলেন। তাঁর এই ডিগ্রি চলমান অবস্থায় ২০১২ সালে তিনি অবৈধভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং বিভাগে এমবিএ করেছেন। শিক্ষা সনদের বিধি ভঙ্গ করে একই সঙ্গে চলমান দুটি ডিগ্রি তিনি তাঁর চাকরি ফাইলেও নথিভুক্ত করেছেন। এত সব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে মুফতি মাহমুদ রনি বলেন, ‘আমার যোগ্যতা ছিল বলেই কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দিয়েছে। এমন তো নয় যে নিয়োগ বোর্ডে আমার কোনো আত্মীয় ছিলেন।’

এ বিষয়ে রুয়েটের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আরিফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘তৎকালীন প্রশাসন তাকে (রনি) কোন ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে চাকরি দিয়েছে, তা আমার জানার কথা নয়। ফাইল দেখতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত