লিবিয়ায় হাত-পা বেঁধে যুবককে নির্যাতন, ভিডিও পাঠিয়ে ১০ লাখ মুক্তিপণ দাবি

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৬: ১৪
Thumbnail image

লিবিয়ায় শামীম হোসেন নামের এক ব্যক্তির হাত-পা বেঁধে ও মুখে কাপড় গুঁজে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানায় মানব পাচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

গতকাল সোমবার লিবিয়ায় নির্যাতনের শিকার শামীম হোসেনের বাবা আফজাল হোসেন বাদী হয়ে থানায় তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নয়ন হোসেন। 

ওই মামলার আসামি করা হয়েছে আক্কেলপুর উপজেলার তেমারিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান, তাঁর স্ত্রী রোজিনা, ছোট ভাই শাহিনুর রহমানকে। তবে পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মামলার এজাহারে লিবিয়ায় থাকা মিজানুরের বিরুদ্ধে শামীমকে আটকে রেখে নির্যাতন করে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ আনা হয়। 

মামলার বাদী আফজাল হোসেনের বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়নের মিঠাপুর পালপাড়া গ্রামে। তিনি পেশায় একজন কৃষক। 

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর পালপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে শামীম হোসেন লিবিয়ায় তাঁকে মিজানুর আটকে রেখে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছেন বলে তাঁর স্বজনের মোবাইল ফোনের ইমোতে ভয়েস বার্তা পাঠান। 

এদিকে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার আমেশ্বপুর নিশিপাড়া গ্রামের রুবেল হোসেন নামে আরও এক যুবককে একই কায়দায় আটকে রেখে নির্যাতনের ভিডিও স্বজনদের মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দশ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তিনিও দালাল মিজানুর রহমানের মাধ্যমে দুই মাস আগে লিবিয়ায় গিয়েছিলেন। মামলার বাদী আফজাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

লিবিয়ায় থাকা শামীম হোসেনের স্বজনেরা জানান, শামীম হোসেন গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ঢাকার সাভারের দালাল নাজমুলের মাধ্যমে লিবিয়ায় গিয়েছিলেন। লিবিয়ার আলতাদিয়া শহরের একটি হোটেলে কাজ করতেন। ঘটনার ১৩ দিন আগে শামীম হোসেন মিজানুর রহমানের কাছে চলে যান। মিজানুরের কাছে পৌঁছার পর শামীম বাড়িতে কল করে তাঁর মা-বাবাকে জানান। এরপর থেকে তাঁরা শামীমের মোবাইল ফোন বন্ধ পান।

গত ২৫ মার্চ সকাল ৮টার দিকে শামীমের বাবার মোবাইল ফোনের ইমোতে ৪০ সেকেন্ডের ভয়েস বার্তা দেন। ওই ভয়েস বার্তায় শামীম বলেন, মিজানুর রহমান তাঁকে আটকে রেখেছে। দশ লাখ টাকা দিতে হবে। পরে ইমোতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কক্সবাজারের চকরিয়া শাখার কুশার জান্নাত জেমি নামের এক ব্যক্তির সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর দেন। 

এমন বার্তা পাওয়ার পর শামীমের বাবা আক্কেলপুর থানায় একটি অভিযোগ দেন। তবে সেই সময় পুলিশ বিষয়টি আমলে নেয়নি। এরপর গতকাল সোমবার থানা-পুলিশ শামীমের বাবাকে থানায় ডেকে নিয়ে এজাহার নেন। 

শামীমের বাবা আফজাল হোসেন বলেন, ‘ভয়েস বার্তা পাঠানোর পর ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। ছেলের চিন্তায় ভেঙে পড়েছি। এ ঘটনার মূল হোতা মিজানুর রহমান। সে লিবিয়ায় আরও ১০-১২ জন যুবককে নির্যাতন করছে। তাঁদের সবাইকে মিজানুর ভালো বেতন ও কর্মঘণ্টার প্রলোভন দেখিয়েছিলেন। এখন প্রত্যেক পরিবারের কাছে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করছেন।’ 

আফজাল হোসেন আরও জানান, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার আমেশ্বপুর নিশিপাড়া গ্রামের রুবেল হোসেন দুই মাস আগে দালাল মিজানুরের মাধ্যমে লিবিয়ায় যান। তাঁকেও আটকে রেখে হাত-পা বেঁধে ও মুখে কাপড় গুঁজে নির্যাতনের ভিডিও আক্তারুনের (রুবেলের স্ত্রীর বড় বোন) মোবাইল ফোনে পাঠানো হয়। এরপর কল করে দশ লাখ টাকা দাবি করা হয়। 

আক্তারুনের বরাত দিয়ে আফজাল হোসেন জানান, তাঁর ভগ্নিপতি এখন কেমন আছেন স্বজনেরা জানেন না। গরিব মানুষ হওয়ায় তাঁদের পক্ষে ১০ লাখ টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। মিজানুর রহমান প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর ভগ্নিপতিকে নিয়ে গিয়েছিল। এ ঘটনার জন্য মিজানুরই দায়ী। গত তিন ধরে আর ফোনে আসছে না।

এদিকে মিজানুর রহমানের বাড়ির মূল ফটকে তালা ঝুলছে। পরিবারের সবাই আত্মগোপনে রয়েছেন। এ কারণে মিজানুরের পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। 

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নয়ন হোসেন বলেন, লিবিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মানব পাচার আইনে মিজানুর রহমান, তাঁর স্ত্রী রোজিনা ও ছোট ভাই শাহিনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন নির্যাতনের স্বীকার শামীম হোসেনের বাবা আফজাল হোসেন। দেশে থাকা আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত