ছেলেকে দেওয়া সুদের টাকা আদায়ে বৃদ্ধা মায়ের ঘরে কারবারিদের তালা 

শাহীন রহমান, পাবনা 
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ২২: ০৯

তাঁত ব্যবসায় সুদে কারবারিদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা সুদে ধার নেন এক ব্যক্তি। সুদের টাকা দিতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। আর সেই টাকা আদায়ে ইদ্রিস মল্লিক (৫৫) নামের ওই ব্যক্তির ঘরে থাকা বৃদ্ধা মা রমেছা বেগমকে (৯০) জোরপূর্বক বের করে দিয়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয় সুদে কারবারিরা। 

এ ঘটনা ঘটেছে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের তারাবাড়িয়া কারিগরপাড়া গ্রামে। 

আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তালা ভেঙে ওই বৃদ্ধাকে তাঁর ঘরে তুলে দেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বাসিন্দা মৃত রায়হান মল্লিকের স্ত্রী বৃদ্ধা রমেছা বেগম তাঁর ছেলে ইদ্রিসের ঘরের দরজার সামনে বসে আছেন। টিনের ঘরটিতে তিনটি কক্ষ। দুটি কক্ষ তাঁর ছেলের। আর একটি কক্ষে থাকেন বৃদ্ধা রমেছা। তিনটি কক্ষে তালা ঝোলানো। ছেলে ইদ্রিস বা তাঁর স্ত্রী-সন্তান কেউ বাড়িতে নেই।

জানতে চাইলে বৃদ্ধা রমেছা বেগম বলেন, ‘ইদ্রিস তিনজনের কাছ থেকে সুদে টেকা নিছিলো। সেই টেকা দেয় না। ছাওয়াল কোনে পলাইছে জানি না। খলিল, রইচ আর দুলাল গতকাল সোমবার সকালে বাড়ির পর আইসে টেকা চায়। আমি কইছি ছাওয়ালেক টেকা দিছেও তার কাছে যাও।’

রমেছা বেগম আরও বলেন, ‘টেকা যহন দিছেও তহন তো আমার কাছে শোনো নাই। এহন আমার কাছে টেকা চাইচ্ছেও ক্যা। পরে ওরা কয় ঘরের থেনে বাড়াও, ঘরে তালা দেব। এই কয়া আমাক জোর করে ঘরের থেনে বাইর কইরে দিয়ে তালা দেয়। পরে আমি চিয়েরমেনেক কইছি।’ 

এদিকে, বিকেল চারটার দিকে চরতারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান খান তাঁর পরিষদের অন্য দুই ইউপি সদস্যসহ বৃদ্ধার বাড়িতে যান। এ সময় স্বজন প্রতিবেশীসহ স্থানীয়দের উপস্থিতিতে তালা ভেঙে বৃদ্ধা রমেছা বেগমকে ঘরে তুলে দেন। তাঁকে বাড়িতে বসবাসে আশ্বস্ত করেন। এ সময় তিনি বৃদ্ধাকে কিছু নগদ আর্থিক সহায়তাও দেন চেয়ারম্যান।

সেখানে উপস্থিত রমেছা খাতুনের ছোট ছেলে গোলাম মোস্তফা জানান, তারা চার ভাই, দুই বোন। ইদ্রিস আলী মেজ ভাই। তাঁত ব্যবসা করেন। চারটি তাঁতের কারখানা আছে তাঁর। 

গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, ‘বছর খানেক আগে ব্যবসার কারণে একই গ্রামের মাদ্রাসাপাড়ার বাসিন্দা খলিল হোসেন, রইচ উদ্দিন ও দুলাল হোসেনের কাছ থেকে বেশ অনেক টাকা সুদে ধার নেন ইদ্রিস। এখন সুদের টাকা দিতে পারেন না। সুদ কারবারিরা তাদের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। সেই ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কোথায় গেছে জানি না।

সুদ কারবারিদের দেওয়া তালা ভাঙা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকাতিনি বলেন, ‘সোমবার সকালে ওই তিনজন এসে ঘরে তালা মেরে দিয়ে গেছে। আমরা বাধা দেই নাই যদি মারধর করে।’

স্থানীয় ২ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুল আলীম বলেন, ‘সুদের টাকার জন্য ছেলেকে না পেয়ে তার বৃদ্ধা মাকে ঘর থেকে বের করে তালা দেওয়ার ঘটনাটি একটি জঘন্যতম অমানবিক ঘটনা। আমরা বিভিন্ন সময়ে সুদের ব্যবসা করতে নিষেধ করি। কিন্তু তারা গোপনে এ কাজগুলো করে। যারা সুদে টাকা নেয় তাদের সচেতন হওয়া দরকার।’

চরতারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ‘আজ বিকেলে পরিষদ থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় ওই বৃদ্ধা আমাকে ঘটনাটি জানায়। তখনই আমি ওই বাড়িতে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাই। আমি দ্রুত তালা ভেঙে ঘরে তুলে দিয়েছি। কোনো সমস্যা হলে জানাতে বলেছি।’

এ বিষয়ে কথা হয় সুদ কারবারি তিনজন তারাবাড়িয়া মাদ্রাসাপাড়ার বাসিন্দা খলিল হোসেন, রইচ উদ্দিন ও দুলাল হোসেনের সঙ্গে। তাঁরা সুদে টাকা ধার দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।

খলিল হোসেন বলেন,‘তাঁদের তিনজনের কাছ থেকে জমি বন্ধক রাখা বাবদ মোট ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন ইদ্রিস মল্লিক। তিনি টাকা ফেরত দেন না, জমিও দেন না। এখন আমাদের তো টাকা লাগবে। কে দিবে টাকা। সে তো বাড়ি থেকে পলাতক। তাই বাধ্য হয়ে ইদ্রিসের বাড়িতে গিয়ে তার ঘরে তালা দিয়েছি।’

বৃদ্ধা মাকে ঘর থেকে বের করে তাঁর কক্ষে তালা দেওয়া কি ঠিক কাজ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কাজটা ঠিক হয় নাই। আমরা জানি ঘরটা ইদ্রিসের। যাই হোক চেয়ারম্যান তালা ভেঙে দিছেন, ভালো করেছেন।’

এ বিষয়ে তাঁত ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত