Ajker Patrika

ছিনতাইয়ের অভিযোগ দিতে গিয়ে পুলিশের চড়-থাপ্পড় খেলেন যুবক

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৪, ২২: ০৯
ছিনতাইয়ের অভিযোগ দিতে গিয়ে পুলিশের চড়-থাপ্পড় খেলেন যুবক

বগুড়ার শাজাহানপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযোগ দিতে গেলে ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমকে (৩৬) মারধর করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে। তবে আব্দুর রহিমকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এসআই আশরাফ। গত সোমবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। 

পরে থানা মামলা নিলেও আজ শুক্রবার (১৪ জুন) পর্যন্ত ছিনতাই হওয়া জিনিস উদ্ধার এবং জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ছিনতাই হওয়া জিনিস উদ্ধার এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত অফিসার উপপরিদর্শক বিরঙ্গ চন্দ্র মণ্ডল। 

আব্দুর রহিম খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের ঘাষিড়া ডোকলাপাড়া গ্রামের কৃষক রুস্তম আলীর ছেলে। 

আব্দুর রহিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি একজন বিকাশ এবং মোবাইল ফোন কোম্পানির রিচার্জ কার্ড ব্যবসায়ী। এর আগে দোকানে চুরি হওয়ায় দোকানের মূল্যবান জিনিস সঙ্গেই রাখি। ঘটনার দিন (১০ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুটিতে চেপে মাঝিরা বাজারে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় বাড়ির অদূরে আল আমিন, শিপলুসহ বেশ কয়েকজন আমাকে আটকে মারপিট করে। আমার স্কুটি ভাঙচুর করে। আমার কাছে থাকা ব্যাগে টাকা, মোবাইল রিচার্জ কার্ড, মোবাইল ফোন এবং খাবারের টিফিন বাটি ছিনিয়ে নেয়। সঙ্গে থাকা আমার বাবা আমাকে বাঁচাতে আসলে তাঁর ওপরও হামলা করা হয়। এ সময় তাঁদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আমার বাবার হাত কেটে যায়। পরে চিকিৎসার জন্য তাঁকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেই।’ 

আব্দুর রহিম আরও বলেন, ‘ছিনতাই হওয়া জিনিসগুলো উদ্ধারের আশায় আমি সেখান থেকে দ্রুত শাজাহানপুর থানায় যাই। কিন্তু থানায় গিয়ে উপপরিদর্শক আশরাফ আলীর সঙ্গে দেখা হয়। আশরাফ আলী ঘটনা শুনে থানার ভেতরেই আমার চিপ ধরে টানেন এবং আমার মাথা ও ঘাড়ে থাবড়াতে থাকেন। আমাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে উপস্থিত খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বেলী বেগমের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে সবার সামনে আবারও আমার চিপ ধরে টান মেরে গালে ও মাথায় থাবড়াতে থাকেন। পরে থানার ওসির কাছে ঘটনা জানাই। তখন ওসি মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে এখন পর্যন্ত ছিনতাই হওয়া কোনো কিছুই উদ্ধার হয়নি এবং জড়িত কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি।’ 

সরেজমিন কথা হয় গ্রামবাসীর সঙ্গে। স্থানীয় লাল মিয়াসহ অনেকে আজকের পত্রিকাকে বলেন, গ্রামের ইটপাড়া রাস্তার ওপরে বাঁশ গেড়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল সাবেক ইউপি সদস্য বেলী বেগমের ছোট বোন। ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে আব্দুর রহিমসহ গ্রামের লোকজন সেই খুঁটি তুলে দেন। এর জের ধরে আব্দুর রহিমের ওপরে হামলা করে সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। আব্দুর রহিম এলাকায় ভালো ছেলে বলেই পরিচিত। 

বাড়িতে গিয়ে কথা হয় সাবেক ইউপি সদস্য বেলী বেগমের সঙ্গে। এই মামলায় তিনিও একজন আসামি। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আব্দুর রহমান তাঁর স্কুটারের ভেতরে দা-চাপাতি রেখেছিল। আল আমিনকে দেখে সে স্কুটি থেকে সেগুলো বের করে মারতে এসেছিল। উপপরিদর্শক আশরাফ আলী ঘটনাস্থলে এসে স্কুটি আমার বাড়ির ভেতরে রেখে গেছেন।’ 

স্কুটারের ছবি তুলতে চাইলে প্রথমে তিনি বাধা দিয়ে বলেন, ‘উপপরিদর্শক আশরাফ আলী নিষেধ করেছেন।’ কিছুক্ষণ পর বেলী বেগম আবারও বলেন, ‘আব্দুর রহিমের ব্যাগের ভেতর থেকে দা-চাপাতি বের করেছিল। পুলিশ এসে সেগুলো নিয়ে গেছে। ব্যাগ বাইরে পড়েছিল। কে কী নিয়ে গেছে তা আমরা জানি না।’ 

জানতে চাইলে উপপরিদর্শক আশরাফ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আব্দুর রহিমকে মারার ঘটনা মিথ্যা। আমি আব্দুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে পরিস্থিতি ভালো ছিল না বলে স্কুটি বেলী বেগমের বাড়িতে রাখতে বলেছি।’ 

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আব্দুর রহিমের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। উপপরিদর্শক বিরঙ্গ চন্দ্র মণ্ডল মামলার তদন্ত অফিসার। 

উপপরিদর্শক বিরঙ্গ চন্দ্র মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলাটি আমি তদন্ত করছি। যে মোবাইল ফোনগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর আইএমই নম্বর বাদীকে দিতে বলেছি। স্কুটি, কার্ড এবং টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারি নাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত