Ajker Patrika

আশ্রয়ণের ঘর পেয়ে এখন তারা ঋণগ্রস্ত 

বগুড়া (শেরপুর) প্রতিনিধি
আশ্রয়ণের ঘর পেয়ে এখন তারা ঋণগ্রস্ত 

ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। বিনা মূল্যে বাড়ি পেয়ে অনেকের দিন ফিরেছে। কিন্তু ভিন্ন কথা জানালেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের তাতড়া গ্রামের বানপুকুর আশ্রয়ণের বাসিন্দারা। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েই তারা এখন নিঃস্ব। বিনা মূল্যের ঘর বাড়িয়েছে তাদের ঋণের বোঝা।

জানা গেছে, শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের তাতড়া গ্রামের সরকারি সম্পত্তি বানপুকুর। আর এই পুকুর পাড়েই অনেক দিন ধরে বাস করে আসছেন ১৩টি ভূমিহীন পরিবার। সম্প্রতি সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে ২৬ পরিবারের জন্য বিনা মূল্যের ঘর। প্রতিটি ঘরের জন্য সরকারি বরাদ্দ ২ লক্ষ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে ঘরের বালি ভরাটের জন্য টাকা খরচ করতে হয়েছে বরাদ্দপ্রাপ্তদের। এ জন্য কেউ বিক্রি করেছেন গরু-ছাগল, কেউবা ঘরের টিন। আবার অনেকেই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে টানছেন কিস্তির বোঝা। টয়লেট বসানোর জন্যও অর্থ ব্যয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের। এর ওপর ঘরগুলোতে নেই বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা। এভাবেই গলার কাঁটা হয়েছে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর।

শারীরিক প্রতিবন্ধী ভূমিহীন আমির হোসেন মণ্ডল (৫৫) স্ত্রীকে নিয়ে লক্ষ্মীকোলা গ্রামের এক ব্যক্তির পুকুর পাড়ে টিনের ঘরে বাস করতেন। তার নামে বরাদ্দ হয়েছে বান পুকুরের আশ্রয়ণের ঘর। তিনি বলেন, ‘এক দিন ইউএনও স্যার এসে বললেন ঘর পেতে হলে নিজের টাকায় ঘরের বালি ভরাট করতে হবে। কোনো উপায় না দেখে ২৫ হাজার টাকায় পুরোনো ঘরের টিন বিক্রি করেছি। এরপর পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি করে বসবাস করেছি। পরে লোকজন কষ্ট দেখে কাজ শেষ হওয়ার আগেই আমাকে সরকারি ঘরে তুলে দেয়।’

এখানকার বাসিন্দা বিধবা হালিমা খাতুন (৫৫) বলেন, মিস্ত্রিরা ঘরের দেয়াল তুলে তাদের চাপ দেয় ভেতরের ফাঁকা জায়গা বালি দিয়ে পূরণ করার জন্য। তা না হলে বরাদ্দ বাতিল করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। বাধ্য হয়েই সবাই ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। এ জন্য তিনি এনজিও থেকে ঋণ করেছেন ২০ হাজর টাকা। এখন খেয়ে না খেয়ে সপ্তাহে ৬০০ টাকা কিস্তি দিচ্ছেন। তার মতো সকলেই ঋণ করে বা গবাদি-পশু, বিক্রি করেছেন বলে তিনি জানান।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের তাতড়া গ্রামের বানপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাসিন্দারাএরপরেও সমস্যার অন্তত নেই তাদের। প্রায় তিন মাস আগে ঘর বুঝে দেওয়া হলেও নেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা। ২৬টি পরিবারের জন্য টিউবওয়েল বসানো হয়েছে মাত্র ৩ টি। যদিও নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ৫টি ঘরের জন্য ১টি করে বরাদ্দ আছে। এখন পর্যন্ত কোনো বাড়িতে টয়লেট সুবিধা নেই। টয়লেটের রিং বসানোর জন্য সুবিধা ভোগীদের নিজ খরচে গর্ত খোঁড়ার চাপ দেওয়া হচ্ছে।

মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, তাদের এখানে কোনো টয়লেট নেই। কিছুদিন আগে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সবাইকে নিজ খরচে টয়লেটের জন্য গর্ত খুঁড়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ জন্য তাদের সবাইকে কমপক্ষে আরও ২ হাজার টাকা করে ব্যয় করতে হবে। এমনিতেই ঘরের বালি পূরণ করতে তারা ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। আবারও নতুন করে ঋণ করতে হবে বলে তিনি জানান।

ঘরগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বলে তারা জানান। ঘরে ওঠার আগেই দেয়াল ও মেঝের পলেস্তারা উঠে গেছে। পরে সেগুলো মেরামত করা হলেও নতুন করে মেঝে ও দেওয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। এ ছাড়া ঘরের চাল ও বারন্দার টিন প্রয়োজনের তুলনায় ছোট। এ জন্য সামন্য বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ঢুকে বিছানা ভিজে যায়।

তোজাম্মেল হোসেন (৫৮) বলেন, ঘরে সাত ফুট ও বারান্দায় ৬ ফুট মাপের টিন দেওয়া হয়েছে। রাতে বৃষ্টি হলে বিছানা গুটিয়ে মেঝেতে বসে থাকতে হয়। বর্ষাকালে ঘরে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাতায়াতের রাস্তার সমস্যার কথা জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। মূল সড়ক থেকে সেখানে যাতায়াতের জন্য একমাত্র রাস্তা অন্যের আবাদি জমির সংকীর্ণ আইল।

মো. ইসমাইল হোসেন (৫০) বলেন, ‘এখানে কোনো মানুষ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া খুবই কষ্টকর। কাঠের পাটাতনে করে মূল সড়কে নিতে হয়। তা ছাড়া বৃষ্টি হলে চলাচলের কোনো উপায় থাকে না।’

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের তাতড়া গ্রামের বানপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাসিন্দারাঘর বরাদ্দের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ করেছেন সৈকত ইসলাম (১৭) নামের এক কিশোর। তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের দুটি ঘর ছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, আমার বাবা ও আমাকে একটি করে বাড়ি দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী আমি টাকা খরচ করে বালি ভরাট করেছি, কাঠ, ইট বহন করার কাজে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু আমার সেই ঘর অন্য একজনকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি এখন অন্যের বাড়িতে বসবাস করছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামছুন্নাহার শিউলী বলেন, ‘এই প্রকল্পের সকল বিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে তদারকি করেন। মাঝে মাঝে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের জন্য আমাকে সঙ্গে নেওয়া হয়। তাই এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’ 

জানতে চাইলে শেরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের সকল কাজ সরকারি অর্থায়নে করা হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।’ 

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের অর্থ ব্যয়ের সুযোগ নেই। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা বিষয়টি তদন্ত করব। সত্য প্রমাণিত হলে সুবিধাভোগীদের অর্থ ফেরত দেওয়া ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধলেশ্বরী নদীতে ফেরি থেকে ট্রাকসহ ৫ যান নদীতে, নিহত ৩

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার বক্তাবলী ও নরসিংপুর ঘাটের মাঝামাঝি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, নরসিংপুর ঘাট থেকে ছেড়ে আসা একটি ফেরি বক্তাবলী ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। ফেরিটি মাঝনদীতে পৌঁছালে এতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ স্টার্ট হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি সামনে থাকা দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশাভ্যানকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী রফিক গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে রিকশাভ্যানচালক স্বাধীন (২৫) ও মাসুদ নামের দুজন দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ হন। খবর পেয়ে রাতেই নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে স্বাধীন ও মাসুদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

দুর্ঘটনার পর ফেরির কয়েকজন যাত্রী ও চালক সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

বক্তাবলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বলেন, ‘ফেরিতে থাকা ট্রাকটি হঠাৎ নিজে থেকেই স্টার্ট হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে যানবাহনগুলো নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় একজন হাসপাতালে মারা গেছেন এবং পরে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচি ঘোষণা রাকসুর জিএস আম্মারের

রাবি প্রতিনিধি  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগ ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অপসারণের দাবিতে ‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে সালাহউদ্দিন আম্মার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন।

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আগামীকাল সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। আওয়ামীপন্থী ছয়জন ডিনের পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে। রাবি প্রশাসন দেড় বছর সময় পেয়েছে, এখন সময় বিপ্লবীদের।’ তিনি লেখেন, ‘শহীদ হাদির রক্ত আরো একবার শেখালো লীগের প্রতি নমনীয়তা আমাদের জন্য কতটা বিভৎস হতে পারে।’ আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে উপস্থিত থাকার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি

এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন রাকসু জিএস। অভিযুক্তদের নাম, কর্মস্থল, বর্তমান পদবি, ঠিকানা এবং ফ্যাসিজমের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণাদি সরাসরি তার ফেসবুক ইনবক্স অথবা নির্দিষ্ট একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর অনুরোধ জানান তিনি।

আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত
আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক পোস্টে তিনি আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগে এক কর্মদিবসের আলটিমেটাম দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩২
হাসন রাজা। ফাইল ছবি
হাসন রাজা। ফাইল ছবি

মরমি কবি হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ। আধ্যাত্মিক এই সাধকের জন্ম ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর। তিনি সুনামগঞ্জ শহরের সন্নিকটে সুরমা নদীর তীরবর্তী লক্ষণছিরি (লক্ষণশ্রী) পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ও হুরমত জাহানের দ্বিতীয় ছেলে তিনি। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল অহিদুর রাজা। এক ফারসি ভাষাভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শে তাঁর নাম হয় হাসন রাজা। দেখতে সুদর্শন হাসন জমিদার পরিবারের সন্তান হওয়ায় অল্প বয়সেই জমিদারির দায়িত্ব নেন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রীসহ সিলেটের একাংশজুড়ে তাঁর জমিদারি ছিল।

হাসন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ না করলেও ছিলেন স্বশিক্ষিত। সরল ভাষায় সহস্রাধিক মরমি গান রচনা করেছেন হাসন। তিনি গানের মাধ্যমে অগণিত মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে- ‘লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নাই আমার’; ‘নেশা লাগিলরে, বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিলরে’; ‘গুড্ডি উড়াইলো মোরে, মৌলার হাতের ডুরি’; ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে, আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে’; ‘আমি যাইমুরে যাইমু, আল্লার সঙ্গে।’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও হাসন রাজা রচিত গানের প্রশংসা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিকবার তাঁর বক্তব্যে হাসন রাজার গানের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে হাসনের দর্শনচিন্তার কথা তুলে ধরেন। হাসন রাজার সৃষ্টিকর্ম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সমাদৃত।

বহু গানের রচয়িতা আধ্যাত্মিক সাধক হাসন রাজা ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। হাসনের জন্মভিটায় প্রতিষ্ঠিত ‘হাসন রাজা মিউজিয়াম’ একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন তাঁর ভক্ত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটের চিতলমারী: অবৈধ বালু উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট

  • মধুমতী নদী থেকে বালু উত্তোলন
  • ঝুঁকিতে চিতলমারীর একাধিক গ্রাম
  • অভিযোগ স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে
বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০২
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের চিতলমারীতে মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বিপুল বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট বালু উত্তোলন করায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বাগেরহাট, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

বালুমহাল ইজারায় একটি নির্দিষ্ট সীমানা বা এলাকা নির্ধারণ করা থাকে। নাজিরপুর উপজেলার বালুমহালের বা বালু উত্তোলনের সীমানা ২৪ দশমিক ২১ একর। কিন্তু চিতলমারীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ গ্রামসংলগ্ন মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। এই কাজে যুক্ত পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ও বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শৈলদাহ এলাকার প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন কলাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. কামাল শেখ ওরফে কামাল মেম্বার। মূল ইজারাদারের কাছ থেকে কয়েকজনকে নিয়ে এই কাজ নিয়েছেন তিনি। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করছি।’ যাঁর নামে সরকারি ইজারা আনা হয়েছে, তাঁর নাম অবশ্য জানাতে পারেননি কামাল মেম্বার। তিনি দাবি করেন, ওই ব্যক্তির নাম তাঁর মনে নেই।

চিতলমারীর শৈলদাহ এলাকার মো. ফরিদ শেখ, বিপুল বৈদ্য, আল-আমিন খান ও তুহিন শেখ জানান, কলাতলা ইউনিয়নের মধুমতী নদীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ এলাকায় ৩-৪টি বলগেট ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ফসলি জমি, গাছপালা ও রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে উপজেলার মানচিত্র। হুমকির মুখে পড়েছে কয়েক শ একর জমি ও বসতবাড়ি। এ ছাড়া প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাটিভাঙ্গা সেতুও এখন ঝুঁকির মুখে।

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন চিতলমারী উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ফজলুল হক বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার মানচিত্র ছোট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

চিতলমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘পিরোজপুর থেকে ওরা বালুমহাল ইজারা নিয়েছে। রাতের আঁধারে এসে চিতলমারীর সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করে। আমরা বেশ কয়েকবার অভিযানে গিয়েছি। কিন্তু অভিযানের খবর শুনে ওরা আগে থেকেই চলে যায়। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে, ওরা যাতে সীমানায় না আসে সে জন্য কাজ করছি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন “জিরো টলারেন্স” নীতিতে কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত