যমুনায় পানি বৃদ্ধি, সিরাজগঞ্জে স্পার বাঁধের ১০০ ফুট নদীতে বিলীন

সিরাজগঞ্জ ও কাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৩, ১৪: ১৪
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৩, ১৪: ৪০

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে বাড়ছে যমুনা নদীর পানি। এদিকে নদীর তীব্র স্রোতে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে মেঘাই ১ নম্বর স্পার বাঁধের ১০০ ফুট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার ভোরে কাজীপুর স্পার বাঁধে এই ধস নামে। ভাঙন রোধে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার মেঘাই ১ নম্বর স্পারের উত্তর পাশ থেকে ভেঙে প্রায় ১০০ ফুট যমুনায় বিলীন হয়েছে। ভাঙন রোধে আজ সকাল থেকেই বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলা হচ্ছে। তবে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি হলে কাজে কিছুটা ভাটা পড়ে। তাতে ভাঙনের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোরে স্পারের মাথায় ফাটল ধরে। এলাকাবাসী বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএওন) জানালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে নিয়ে তিনি সেখানে পরিদর্শনে যান। পরে পাউবোকে জানালে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়।

এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে যমুনার পানি বাড়ার কারণে তলিয়ে যাচ্ছে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও ফসলি জমি। গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে আজ শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত) যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্ট এলাকায় ৪ সেন্টিমিটার বাড়লেও বিপৎসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ভাঙন রোধে নৌকায় করে জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলা হচ্ছেপানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতীরবর্তী সদর উপজেলা, বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বেলকুচির খিদ্রচাপড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ সদরের কাওয়াকোলা, বেলকুচি, শাহজাদপুর উপজেলা কৈজুড়ী ইউনিয়নের হাটপাচিল এবং চৌহালীতে যমুনার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভাঙনে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও শতাধিক ঘরবাড়ি, বসতভিটা, ফসলি জমি। ভাঙনের মুখে থাকা বাড়িঘরের আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে এলাকাবাসী। যমুনার গর্ভে সহায়-সম্বল হারিয়ে অনেকে খোলা আকাশের নিচে অন্যের জমিতে রাত কাটাচ্ছে। 

যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ, হুড়াসাগর, করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। তবে নদ-নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক হাসানুজ্জামান বলেন, দ্বিতীয় দফায় যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্ট এলাকায় চার সেন্টিমিটার বাড়লেও বিপৎসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ভাঙন এলাকায় এলাকাবাসীর ভিড়কাজীপুরের মেঘাই ১ নম্বর স্পার বাঁধে ভাঙনের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার ফলেই আজকের এই অবস্থা হয়েছে। একেবারে স্পারের প্রায় এক শ-দেড় শ মিটার পাশ থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলা হতো। ভাঙনের মূল কারণ এটাই। তা ছাড়া স্পারের কাজ হওয়ার পর কোনো রক্ষণাবেক্ষণও হয়নি।

তবে পাউবোর দাবি, স্পার ভাঙনের সঙ্গে বালু তোলার কোনো সম্পর্ক নেই। স্পার থেকে নিরাপদ দূরত্বে বালু উত্তোলন করা হতো। সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করেছি। খুব দ্রুতই ভাঙন রোধ হবে।’

কাজীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী বলেন, কাজীপুরের প্রাণ মেঘাই ১ নম্বর স্পার বাঁধ রক্ষা করা না গেলে কাজীপুর হুমকির মুখে পড়বে। তবে ভাঙন রোধে কাজ চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। পরে ডিসি স্যার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালে তাঁরা দ্রুত ব্যবস্থা নেন। যতক্ষণ পর্যন্ত ভাঙন পুরোপুরি বন্ধ না হবে, জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ডাম্পিং চলবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত