Ajker Patrika

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ, পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি 
ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া ও বিভিন্ন অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম হোসেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করে এই অভিযোগ তোলেন তিনি।

এদিকে ওই অভিযোগের পর সেলিম হোসেনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান। সেখানে সেলিম হোসেন বাদে প্রায় ১০ জন ইউপি সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আজ শনিবার দুপুর ১২টায় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ওই সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে কাশিড়া বাজারে সেলিম হোসেনের অফিসঘরে বেলা ২টায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন সেলিম হোসেন।

‘সেলিম মেম্বার কাশিড়া’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে ২৫ মিনিট ধরে লাইভে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন সেলিম হোসেন।

এদিকে আজ সংবাদ সম্মেলনে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিড়ার দীঘিরপাড় গ্রামে উন্নয়নমূলক কাজ চলমান। সেই কাজে বাধা দেন ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন। বিগত পলাতক আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর ছিলেন সেলিম। পরিষদের বিভিন্ন কাজে অনিয়মের অভিযোগে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করে অপপ্রচার করেন। এতে আমার সম্মানহানি হয়েছে। এ ঘটনায় আমি পরিষদের অন্য সদস্যদের নিয়ে বসে আলোচনা করে সেলিমের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’

অপরদিকে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন আবার চেয়ারম্যানের ঘুষ ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করেন সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে ভুক্তভোগী দাবি করা দুই ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

সেলিম হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, মাতৃত্বকালীন ভাতার সুবিধাভোগীর তালিকায় নাম উঠাতে ৮-১০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন চেয়ারম্যান। ভাতাভোগীর পর সেই কার্ড আবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করে ফের অন্যজনের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তাঁর নাম তালিকায় তুলে দেন। অনেকের কাছ থেকে তালিকায় নাম তুলে দেওয়ার কথা বলে ঘুষ নিলেও তালিকায় তাঁদের নাম ওঠাননি তিনি, পরে সেই ঘুষের টাকা ফেরতও দেননি।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ইউপি মেম্বার সেলিম হোসেনের। ছবি: আজকের পত্রিকা
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ইউপি মেম্বার সেলিম হোসেনের। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেলিম হোসেন বলেন, ‘কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দীঘিরপাড় গ্রামে ইট সোলিং রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছিল। এ প্রকল্পের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সেটি আমরা কেউ জানতাম না। মিস্ত্রিরা রাস্তার কাজ করছিলেন। এ রাস্তার কাজে ভাঙাচোরা ইট ব্যবহার করা হচ্ছিল। লোকজন নিম্নমানের ইট সোলিং রাস্তার কাজের কথা আমাকে জানান। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাঙাচোরা ইট দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে দেখে ছবি তুলেছি। ভালো ইট দিয়ে কাজ করার কথা বলেছি। এতে ইউপি চেয়ারম্যান আমার ওপর চরম ক্ষুব্ধ হন। তিনি আমার বিরুদ্ধে প্রকল্পে কাজ বন্ধ করার অভিযোগ তুলে আমাকে সময় বেঁধে দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। আমি বৃহস্পতিবারে নোটিশের জবাব দিয়েছি। ইউপি চেয়ারম্যান তা গ্রহণ করেননি। ইউএনও কার্যালয়ে গিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছি। ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ঘুষ ছাড়া কাজ করেন না। তিনি মাতৃত্বকালীন ভাতার সুবিধাভোগীর তালিতায় নাম উঠাতে ৮-১০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। অনেকের এখনো মাতৃত্বকালীন সুবিধাভোগীর তালিকায় নাম ওঠেনি। তিনি তাঁদের টাকাও ফেরত দেননি। আমার ওয়ার্ডে ছয়জন মাতৃত্বকালীন ভাতা পেতেন। তাঁদের মোবাইল ফোন নম্বর পরির্বতন করা হয়েছে। কেউ এক বছর, আবার কেউ দশ মাস ধরে ভাতা পাচ্ছেন না। ভাতাভোগীদের ৫৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগী এক নারী কাশিড়া খলিফাপাড়ার আক্কেলপুরের ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। এরপর ১৫ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। ভাতাভোগীরা বাকি টাকা এখনো ফেরত পাননি।’

ইউপি সদস্য সেলিম বলেন, গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত। গ্রাম আদালতের ফৌজদারি ফিস ২০ আর দেওয়ানি ১০ টাকা। ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে ফৌজদারি ও দেওয়ানির ফিস ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়। মোটা অঙ্কের টাকা হলে বয়স কমবেশি করে জন্ম নিবন্ধনও মেলে। ওয়ারিশান সনদ পেতে ৫০ টাকা নেওয়া নিয়ম। কিন্তু ২০০ টাকা করে ফিস নেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভুক্তভোগী দাবি করা তছলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার মেয়ের মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের হাতে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছিলাম। মেয়ে আমার কয়েক মাস টাকা পেয়েছিল। তারপর হিসাব নম্বর পরিবর্তন করে আবার একজনকে দিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত