Ajker Patrika

পুকুর ইজারায় সাগরচুরি

  • সরকারি হিসাবে গোদাগাড়ীতে খাসপুকুর রয়েছে ৩ হাজার ৬০টি
  • তালিকামূল্যের চেয়ে কম মূল্যে দলিল ও চালান
  • বিচারাধীন দেখিয়ে গোপনে কম মূল্যে ইজারা
  • রাজস্ব ক্ষতি ৫ কোটি ২৯ লাখ ৮২ হাজার ৬২৮ টাকা
 রিমন রহমান, রাজশাহী
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সাগুয়ান মৌজার এই পুকুর নিয়ে মামলা বিচারাধীন দেখানোর পরেও পানির দরে দেওয়া হয়েছে ইজারা। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা। আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সাগুয়ান মৌজার এই পুকুর নিয়ে মামলা বিচারাধীন দেখানোর পরেও পানির দরে দেওয়া হয়েছে ইজারা। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা। আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় খাসপুকুর ইজারা দেওয়ার সময় রীতিমতো ‘সাগরচুরির’ ঘটনা ঘটেছে। এলাকার একটি শক্তিশালী চক্রকে ইজারার মোড়কে খাসপুকুর দেওয়া হয়েছে পানির দরে। এসব ইজারার সময় ভুয়া চালানও ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক পুকুরের ক্ষেত্রে অনুমোদিত ইজারামূল্যের চেয়ে কম দরে দলিল করা কিংবা মামলার নিষেধাজ্ঞার কথা বলে তালিকাবহির্ভূত রেখে পরে গোপনে ইজারা দেওয়া হয়েছে।

এতে অন্তত ৫ কোটি ২৯ লাখ ৮২ হাজার ৬২৮ টাকার রাজস্ব ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইজারামূল্যের চেয়ে কম টাকার চালান জমা দিয়ে ৪৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯৫ টাকা, এক চালান একাধিকবার ব্যবহার করে ২৮ লাখ ১২ হাজার ৭৪৬ টাকা, পুকুরের নামে মামলা দেখিয়ে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৩৬ টাকা এবং প্রকাশিত তালিকার চেয়ে অনুমোদিত মূল্য কম করে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৫১ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সরকারি হিসাবে গোদাগাড়ী উপজেলায় খাসপুকুর রয়েছে ৩ হাজার ৬০টি। ১৪৩১-৩৩ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারা দিতে গত ১৮ এপ্রিল ২ হাজার ৭৪৯টি পুকুরের তালিকা প্রকাশ করা হয়। অভিনব এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটে তখনই। একটি বিশেষ মহল সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে এই জালিয়াতি করেছে। পুকুরের তালিকায় সই করা হয়েছে গত ৩০ মে। অনুমোদিত তালিকা প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ থাকে।

কিন্তু এবার তালিকাই প্রকাশ করা হয়েছে সই করার ২০ দিন পর, ২০ জুন। দেরিতে তালিকা প্রকাশ করে আপিল করার সুযোগ থেকে আগ্রহী দরপত্র দাখিলকারীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। তালিকায় ইজারামূল্য ৩০ লাখ টাকা থাকা পুকুর দুই লাখ টাকায়ও ইজারা দেওয়া হয়েছে।

প্রকাশিত তালিকা থেকে জানা গেছে, গোদাগাড়ী ইউনিয়নের রঘুনাথপুর মৌজার ৫৮ দাগের ১ একর ৮৬ শতাংশ আয়তনের পুকুরটির অনুমোদিত দর ছিল ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। ভ্যাট ও আয়কর ১৭ হাজার ৬২৫ টাকা এই মূল্যের সঙ্গে যোগ হওয়ার কথা। সাকল্যে পুকুরটির ইজারামূল্য দাঁড়ায় ৮১ হাজার ৭৫ টাকা। সেই পুকুরের বিপরীতে মাত্র ৭ হাজার ৫০ টাকার ট্রেজারি চালান জমা দেওয়া হয়েছে। এই পুকুর থেকে সরকারি রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৭৪ হাজার ২৫ টাকা। একইভাবে ১০৬টি পুকুরের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। তাতে সরকারের এক বছরের ক্ষতি হয়েছে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৫ টাকা। তিন বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৪৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯৫ টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, একই ট্রেজারি চালান একাধিক পুকুরে ব্যবহার করেও সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এভাবে গোগ্রাম ইউনিয়নের তেরোপাড়া মৌজার ১৮৪ নম্বর দাগের ২ একর ২৮ শতাংশ আয়তনের খাসপুকুরের ট্রেজারি চালানের মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ হাজার টাকা। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ব্যাংকের সিলমোহর জাল করে একই চালান ব্যবহার করা হয়েছে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের কোচারপাড়া মৌজার ২৪৯ নম্বর দাগের ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ আয়তনের পুকুরের জন্যও। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পুকুরের জন্য সরকারের ঘরে কোনো টাকাই জমা হয়নি। পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। এভাবে ৯৬টি পুকুরের চালান জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। এই পন্থায় এক বছরের জন্য মোট ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮২ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। পুকুরগুলো তিন বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। সরকারের মোট ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ১২ হাজার ৭৪৬ টাকা।

এদিকে ইজারা তালিকায় প্রকাশিত মূল্যের চেয়ে অসম্ভব কম মূল্যে ৪৯টি পুকুর ইজারা দিয়ে এক বছরের জন্য সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে ৮৬ লাখ ৫৭ হাজার ১১৭ টাকা। তিন বছরের জন্য এই ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৫১ টাকা।

উপজেলার কাঁকনহাট পৌরসভার আব্দুলপুর মৌজার ১৯৭ নম্বর দাগের ৪ একর শূন্য ২ শতাংশ আয়তনের একটি ও মোহনপুর ইউনিয়নের দুধাই মৌজার ৪ একর ৯২ শতাংশ আয়তনের দুটি পুকুর ইজারার জন্য তালিকায় তোলা হয়নি। কিন্তু বাস্তবে পুকুর দুটি ভোগদখল চলছে। প্রতিটি পুকুরের ইজারামূল্য ৩০ লাখ টাকার কম হওয়ার কথা নয়। দুধাই মৌজার পুকুরটি উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ভোগদখল করছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, বৈধভাবে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন। দ্বিতীয় পুকুরটি দুলাল নামের এক ব্যক্তি ভোগ করছেন। তিনিও একই দাবি করেছেন।

এদিকে উপজেলার ১৩টি পুকুর ইজারার জন্য অনুমোদিত তালিকায় নেই। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুকুরগুলোর ট্রেজারি চালানোর মাধ্যমে ইজারামূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। গোপনে এসব পুকুর পেয়েছেন প্রভাবশালীরা।

এদিকে ইজারার জন্য প্রকাশিত পুকুরের তালিকায় তিনটি পুকুরের পাশে লিখে রাখা হয়, মামলা চলমান। অর্থাৎ, এগুলো ইজারাযোগ্য নয়। যদিও এগুলোর ইজারামূল্য লেখা হয়। মামলা চলমান লেখা দেখে আগ্রহী কেউ এগুলোর জন্য চালান জমা দেননি। তবে গোপনে এসব পুকুর ঠিকই ইজারা দেওয়া হয়েছে। আর নেওয়া হয়েছে প্রকাশিত ইজারামূল্যের চেয়ে অনেক কম টাকা।

এর মধ্যে গোদাগাড়ী ইউনিয়নের সাগুয়ান মৌজার ২৯৫ দাগের ৪ একর ২৬ শতাংশ আয়তনের পুকুরটির প্রকাশিত ইজারামূল্য ২১ লাখ ৪০ হাজার ৬৫০ টাকা। কিন্তু মামলা চলমান রয়েছে বলে এই পুকুরের বিপরীতে কেউ দরপত্রই জমা দেননি। অথচ গোপনে মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে বিশাল এই পুকুর। একই মৌজার ৬ একর ৬৪ শতাংশ আয়তনের পুকুরটির প্রকাশিত ইজারামূল্য ছিল ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা। এই পুকুর গোপনে মাত্র দুই লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। একই মৌজার ৩৭৪ দাগের ১ একর ৪৮ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুরের প্রকাশিত ইজারামূল্য হচ্ছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। এই পুকুর গোপনে ইজারা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার টাকায়। এই তিনটি পুকুরেরই ট্রেজারি জমাকারী হচ্ছেন একই ব্যক্তি।

সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার সাগুয়ান গ্রামের বিচারাধীন পুকুরটির খোঁজ নিতে গিয়ে হাবিব (৬২) নামের স্থানীয় এক কৃষককে পুকুরপাড়ে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘কয়েকজন ভাগে পুকুরটা খায়। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গোদাগাড়ীর মাদারপুরের শামীম। তিনি বলেন, সব নিয়ম মেনেই পুকুর ইজারা নিয়েছেন। কোনো অনিয়ম হয়নি।

গোদাগাড়ীতে পুকুরগুলো ইজারা দেওয়ার সময় এসি ল্যান্ড ছিলেন জাহিদ হাসান। তিনি বর্তমানে রাজশাহীর পবা উপজেলার এসি ল্যান্ড। সাগুয়ান গ্রামের পুকুরের বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা চলমান। এই পুকুর তিনি ইজারা দেননি। অবশ্য গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত নিশ্চিত করেছেন, ভূমি অফিসে ওই পুকুর ইজারা দেওয়ার দলিল পাওয়া গেছে। সেখানে এসি ল্যান্ডের স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীর জাহানাবাদ মহল্লার শরিফুল ইসলাম ওরফে বিষু নামের এক ব্যক্তি এই জালিয়াত চক্রের সঙ্গে জড়িত। তিনিই বছরের পর বছর গোদাগাড়ীর পুকুর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। নানা কায়দায় পানির দরে পুকুর নিয়ে তিনি আবার পরে প্রকৃত মাছচাষিদের কাছে চড়া মূল্যে ইজারা দেন। এভাবে তিনি ফুলেফেঁপে উঠেছেন।

বিষুর সিন্ডিকেটে ছিলেন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোক্তারুজ্জামান। বর্তমানে তিনি চারঘাট ভূমি অফিসে বদলি হয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি কিছু জানেন না। ইজারা কমিটির মাধ্যমে পুকুর ইজারা দেওয়া হয়। তিনি কিছুই দেখেন না।

পুকুর সিন্ডিকেটের হোতা শরিফুল ইসলাম বিষু একসময় বিএনপি করতেন। তবে দিনে দিনে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আবার বিএনপিতে ভেড়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ৫ আগস্ট গোদাগাড়ী থানায় আগুন দেওয়ার মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন কারাগারে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

গোদাগাড়ীর ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, তিনি গোদাগাড়ীতে আসার আগে এসব পুকুর ইজারা হয়েছে। তখন ইজারা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালীন ইউএনও আতিকুল ইসলাম। আর সদস্যসচিব ছিলেন এসি ল্যান্ড জাহিদ হাসান। যে বা যারাই জালিয়াতি করে পুকুর ইজারা দেওয়া কিংবা নেওয়ার সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শিক্ষার্থী হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাবেক এমপি বাদলকে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সাবেক সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল। ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিউমার্কেট থানা এলাকায় শিক্ষার্থী শামীমকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম গ্রেপ্তার দেখানোর এ নির্দেশ দেন।

আজ ফয়জুর রহমানকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার এসআই মো. ওমর ফারুক। শুনানি শেষে আদালত বাদলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. হারুন অর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তদন্তকালে এই মামলায় সাবেক এমপি ফয়জুর রহমান বাদলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণের জন্য তিনি এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের প্ররোচনা এবং অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন বলে প্রাথমিক সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এবং আসামির নাম-ঠিকানা যাচাই করতে তাঁকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো প্রয়োজন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই ঢাকা কলেজ এলাকায় আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে আন্দোলনকারীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনায় ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শামীম গুরুতর আহত হন। পরে সুস্থ হয়ে তিনি মামলা দায়ের করেন।

উল্লেখ্য, ‎গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার খিলক্ষেত থানা এলাকা থেকে সাবেক এই এমপিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের হওয়া একাধিক মামলায় তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

কুমিল্লা প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৬
নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুমিল্লা-৬ (সদর, সদর দক্ষিণ, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও তা জমা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর

নানুয়ার দীঘিসংলগ্ন নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।

মনিরুল হক সাক্কু বলেন, তিনি শুরু থেকেই কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মনোনয়ন কেনার বিষয়টি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। এ কারণে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেবেন না। তবে ভবিষ্যতে যদি এ আসনে দলীয় মনোনয়নে পরিবর্তন আসে, সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও সাবেক এমপি আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের ব্যাপারে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, অতীতের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইয়াছিন তাঁর শ্যালককে প্রার্থী করেছিলেন। এতে ভোট বিভাজনের কারণে তিনি অল্প ব্যবধানে পরাজিত হন। একই ব্যক্তি পরবর্তী উপনির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেন। এসব ঘটনায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কাউকে দোষারোপ করেননি। এ বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা প্রকাশ্যে আনার আহ্বান জানান তিনি।

মনিরুল হক সাক্কু আরও বলেন, চূড়ান্ত মনোনয়নে দলের মনোনয়ন পরিবর্তন হয়ে যদি হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন পান তাহলে তিনি স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করবেন।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কু এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার প্রার্থী হন। ওই নির্বাচনে সাক্কু অল্প ব্যবধানে পরাজিত হন। পরে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে উভয়কেই বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন মনিরুল হক সাক্কু। গতকাল রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাঁর পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় এনসিপি নেতাকে গুলির ঘটনায় যশোর সীমান্তে কড়া নজরদারি

­যশোর প্রতিনিধি
যশোর সীমান্ত এলাকায় বিজিবির তল্লাশি কার্যক্রম। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোর সীমান্ত এলাকায় বিজিবির তল্লাশি কার্যক্রম। ছবি: আজকের পত্রিকা

খুলনায় এনসিপি কেন্দ্রীয় নেতা মোতালেব শিকদারের গুলিবিদ্ধের ঘটনার পর যশোর সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি। এই হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা যেন বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যেতে না পারে, সে লক্ষ্যেই বেনাপোলসহ সীমান্ত এলাকাগুলোয় ব্যাপক নজরদারি ও তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

জানা গেছে, ৪৯ বিজিবির ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ মেইন পিলার ১৮/১ এস থেকে ৪৭/৩ এস পর্যন্ত প্রায় ৭০ দশমিক ২৭৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কড়া তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বাড়ানো হয়েছে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি। সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। যেসব সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নেই, সেসব সীমান্ত সিলগালা করা হয়েছে। বেনাপোল আইসিপি, আমড়াখালি, সাদীপুর, রঘুনাথপুর, ঘিবা, শিকারপুর, শালকোনা, কাশিপুর, মাসিলা, আন্দুলিয়া ও পাঁচপিসতলা এলাকাসহ সীমান্তসংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এনসিপি নেতার গুলিবিদ্ধের ঘটনা গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই এসব এলাকায় যানবাহন ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে।

এ ব্যাপারে ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী আজ সোমবার দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘মোতালেব শিকদাদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত আসামিরা যাতে কোনোভাবেই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালাতে না পারে, সে জন্য বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্টে তল্লাশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় কমিটির প্রতিনিধি মো. মোতালেব শিকদারকে (৪০) দুর্বৃত্তরা গুলি করেছে। আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা বেসরকারি গাজী মেডিকেলের সামনে তাঁকে গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ মোতালেবকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। গুলি তাঁর মাথায় বিদ্ধ হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে দেশীয় পিস্তল ও কার্তুজ উদ্ধার

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৫
উদ্ধারকৃত অস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
উদ্ধারকৃত অস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কালেঙ্গা বৈরাগী টিলা এলাকা থেকে একটি দেশীয় তৈরি পিস্তল ও একটি কার্তুজ উদ্ধার করেছেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব)-৯ সদস্যরা। রোববার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে র‍্যাব-৯ সিলেট সিপিসি-৩, শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চুনারুঘাট উপজেলার ১০ নম্বর মিরাশি ইউনিয়নের বৈরাগী টিলা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় নীল রঙের পলিথিন দিয়ে মোড়ানো পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি দেশীয় তৈরি লোহার পিস্তল ও একটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধারকৃত আলামত পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চুনারুঘাট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে র‍্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

র‍্যাব-৯ জানায়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে তাদের নিয়মিত অভিযান চলমান থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত