রিমন রহমান, রাজশাহী
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় খাসপুকুর ইজারা দেওয়ার সময় রীতিমতো ‘সাগরচুরির’ ঘটনা ঘটেছে। এলাকার একটি শক্তিশালী চক্রকে ইজারার মোড়কে খাসপুকুর দেওয়া হয়েছে পানির দরে। এসব ইজারার সময় ভুয়া চালানও ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক পুকুরের ক্ষেত্রে অনুমোদিত ইজারামূল্যের চেয়ে কম দরে দলিল করা কিংবা মামলার নিষেধাজ্ঞার কথা বলে তালিকাবহির্ভূত রেখে পরে গোপনে ইজারা দেওয়া হয়েছে।
এতে অন্তত ৫ কোটি ২৯ লাখ ৮২ হাজার ৬২৮ টাকার রাজস্ব ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইজারামূল্যের চেয়ে কম টাকার চালান জমা দিয়ে ৪৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯৫ টাকা, এক চালান একাধিকবার ব্যবহার করে ২৮ লাখ ১২ হাজার ৭৪৬ টাকা, পুকুরের নামে মামলা দেখিয়ে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৩৬ টাকা এবং প্রকাশিত তালিকার চেয়ে অনুমোদিত মূল্য কম করে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৫১ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সরকারি হিসাবে গোদাগাড়ী উপজেলায় খাসপুকুর রয়েছে ৩ হাজার ৬০টি। ১৪৩১-৩৩ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারা দিতে গত ১৮ এপ্রিল ২ হাজার ৭৪৯টি পুকুরের তালিকা প্রকাশ করা হয়। অভিনব এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটে তখনই। একটি বিশেষ মহল সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে এই জালিয়াতি করেছে। পুকুরের তালিকায় সই করা হয়েছে গত ৩০ মে। অনুমোদিত তালিকা প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ থাকে।
কিন্তু এবার তালিকাই প্রকাশ করা হয়েছে সই করার ২০ দিন পর, ২০ জুন। দেরিতে তালিকা প্রকাশ করে আপিল করার সুযোগ থেকে আগ্রহী দরপত্র দাখিলকারীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। তালিকায় ইজারামূল্য ৩০ লাখ টাকা থাকা পুকুর দুই লাখ টাকায়ও ইজারা দেওয়া হয়েছে।
প্রকাশিত তালিকা থেকে জানা গেছে, গোদাগাড়ী ইউনিয়নের রঘুনাথপুর মৌজার ৫৮ দাগের ১ একর ৮৬ শতাংশ আয়তনের পুকুরটির অনুমোদিত দর ছিল ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। ভ্যাট ও আয়কর ১৭ হাজার ৬২৫ টাকা এই মূল্যের সঙ্গে যোগ হওয়ার কথা। সাকল্যে পুকুরটির ইজারামূল্য দাঁড়ায় ৮১ হাজার ৭৫ টাকা। সেই পুকুরের বিপরীতে মাত্র ৭ হাজার ৫০ টাকার ট্রেজারি চালান জমা দেওয়া হয়েছে। এই পুকুর থেকে সরকারি রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৭৪ হাজার ২৫ টাকা। একইভাবে ১০৬টি পুকুরের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। তাতে সরকারের এক বছরের ক্ষতি হয়েছে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৫ টাকা। তিন বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৪৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯৫ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, একই ট্রেজারি চালান একাধিক পুকুরে ব্যবহার করেও সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এভাবে গোগ্রাম ইউনিয়নের তেরোপাড়া মৌজার ১৮৪ নম্বর দাগের ২ একর ২৮ শতাংশ আয়তনের খাসপুকুরের ট্রেজারি চালানের মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ হাজার টাকা। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ব্যাংকের সিলমোহর জাল করে একই চালান ব্যবহার করা হয়েছে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের কোচারপাড়া মৌজার ২৪৯ নম্বর দাগের ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ আয়তনের পুকুরের জন্যও। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পুকুরের জন্য সরকারের ঘরে কোনো টাকাই জমা হয়নি। পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। এভাবে ৯৬টি পুকুরের চালান জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। এই পন্থায় এক বছরের জন্য মোট ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮২ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। পুকুরগুলো তিন বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। সরকারের মোট ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ১২ হাজার ৭৪৬ টাকা।
এদিকে ইজারা তালিকায় প্রকাশিত মূল্যের চেয়ে অসম্ভব কম মূল্যে ৪৯টি পুকুর ইজারা দিয়ে এক বছরের জন্য সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে ৮৬ লাখ ৫৭ হাজার ১১৭ টাকা। তিন বছরের জন্য এই ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৫১ টাকা।
উপজেলার কাঁকনহাট পৌরসভার আব্দুলপুর মৌজার ১৯৭ নম্বর দাগের ৪ একর শূন্য ২ শতাংশ আয়তনের একটি ও মোহনপুর ইউনিয়নের দুধাই মৌজার ৪ একর ৯২ শতাংশ আয়তনের দুটি পুকুর ইজারার জন্য তালিকায় তোলা হয়নি। কিন্তু বাস্তবে পুকুর দুটি ভোগদখল চলছে। প্রতিটি পুকুরের ইজারামূল্য ৩০ লাখ টাকার কম হওয়ার কথা নয়। দুধাই মৌজার পুকুরটি উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ভোগদখল করছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, বৈধভাবে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন। দ্বিতীয় পুকুরটি দুলাল নামের এক ব্যক্তি ভোগ করছেন। তিনিও একই দাবি করেছেন।
এদিকে উপজেলার ১৩টি পুকুর ইজারার জন্য অনুমোদিত তালিকায় নেই। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুকুরগুলোর ট্রেজারি চালানোর মাধ্যমে ইজারামূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। গোপনে এসব পুকুর পেয়েছেন প্রভাবশালীরা।
এদিকে ইজারার জন্য প্রকাশিত পুকুরের তালিকায় তিনটি পুকুরের পাশে লিখে রাখা হয়, মামলা চলমান। অর্থাৎ, এগুলো ইজারাযোগ্য নয়। যদিও এগুলোর ইজারামূল্য লেখা হয়। মামলা চলমান লেখা দেখে আগ্রহী কেউ এগুলোর জন্য চালান জমা দেননি। তবে গোপনে এসব পুকুর ঠিকই ইজারা দেওয়া হয়েছে। আর নেওয়া হয়েছে প্রকাশিত ইজারামূল্যের চেয়ে অনেক কম টাকা।
এর মধ্যে গোদাগাড়ী ইউনিয়নের সাগুয়ান মৌজার ২৯৫ দাগের ৪ একর ২৬ শতাংশ আয়তনের পুকুরটির প্রকাশিত ইজারামূল্য ২১ লাখ ৪০ হাজার ৬৫০ টাকা। কিন্তু মামলা চলমান রয়েছে বলে এই পুকুরের বিপরীতে কেউ দরপত্রই জমা দেননি। অথচ গোপনে মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে বিশাল এই পুকুর। একই মৌজার ৬ একর ৬৪ শতাংশ আয়তনের পুকুরটির প্রকাশিত ইজারামূল্য ছিল ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা। এই পুকুর গোপনে মাত্র দুই লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। একই মৌজার ৩৭৪ দাগের ১ একর ৪৮ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুরের প্রকাশিত ইজারামূল্য হচ্ছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। এই পুকুর গোপনে ইজারা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার টাকায়। এই তিনটি পুকুরেরই ট্রেজারি জমাকারী হচ্ছেন একই ব্যক্তি।
সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার সাগুয়ান গ্রামের বিচারাধীন পুকুরটির খোঁজ নিতে গিয়ে হাবিব (৬২) নামের স্থানীয় এক কৃষককে পুকুরপাড়ে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘কয়েকজন ভাগে পুকুরটা খায়। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গোদাগাড়ীর মাদারপুরের শামীম। তিনি বলেন, সব নিয়ম মেনেই পুকুর ইজারা নিয়েছেন। কোনো অনিয়ম হয়নি।
গোদাগাড়ীতে পুকুরগুলো ইজারা দেওয়ার সময় এসি ল্যান্ড ছিলেন জাহিদ হাসান। তিনি বর্তমানে রাজশাহীর পবা উপজেলার এসি ল্যান্ড। সাগুয়ান গ্রামের পুকুরের বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা চলমান। এই পুকুর তিনি ইজারা দেননি। অবশ্য গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত নিশ্চিত করেছেন, ভূমি অফিসে ওই পুকুর ইজারা দেওয়ার দলিল পাওয়া গেছে। সেখানে এসি ল্যান্ডের স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীর জাহানাবাদ মহল্লার শরিফুল ইসলাম ওরফে বিষু নামের এক ব্যক্তি এই জালিয়াত চক্রের সঙ্গে জড়িত। তিনিই বছরের পর বছর গোদাগাড়ীর পুকুর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। নানা কায়দায় পানির দরে পুকুর নিয়ে তিনি আবার পরে প্রকৃত মাছচাষিদের কাছে চড়া মূল্যে ইজারা দেন। এভাবে তিনি ফুলেফেঁপে উঠেছেন।
বিষুর সিন্ডিকেটে ছিলেন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোক্তারুজ্জামান। বর্তমানে তিনি চারঘাট ভূমি অফিসে বদলি হয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি কিছু জানেন না। ইজারা কমিটির মাধ্যমে পুকুর ইজারা দেওয়া হয়। তিনি কিছুই দেখেন না।
পুকুর সিন্ডিকেটের হোতা শরিফুল ইসলাম বিষু একসময় বিএনপি করতেন। তবে দিনে দিনে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আবার বিএনপিতে ভেড়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ৫ আগস্ট গোদাগাড়ী থানায় আগুন দেওয়ার মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন কারাগারে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
গোদাগাড়ীর ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, তিনি গোদাগাড়ীতে আসার আগে এসব পুকুর ইজারা হয়েছে। তখন ইজারা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালীন ইউএনও আতিকুল ইসলাম। আর সদস্যসচিব ছিলেন এসি ল্যান্ড জাহিদ হাসান। যে বা যারাই জালিয়াতি করে পুকুর ইজারা দেওয়া কিংবা নেওয়ার সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় খাসপুকুর ইজারা দেওয়ার সময় রীতিমতো ‘সাগরচুরির’ ঘটনা ঘটেছে। এলাকার একটি শক্তিশালী চক্রকে ইজারার মোড়কে খাসপুকুর দেওয়া হয়েছে পানির দরে। এসব ইজারার সময় ভুয়া চালানও ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক পুকুরের ক্ষেত্রে অনুমোদিত ইজারামূল্যের চেয়ে কম দরে দলিল করা কিংবা মামলার নিষেধাজ্ঞার কথা বলে তালিকাবহির্ভূত রেখে পরে গোপনে ইজারা দেওয়া হয়েছে।
এতে অন্তত ৫ কোটি ২৯ লাখ ৮২ হাজার ৬২৮ টাকার রাজস্ব ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইজারামূল্যের চেয়ে কম টাকার চালান জমা দিয়ে ৪৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯৫ টাকা, এক চালান একাধিকবার ব্যবহার করে ২৮ লাখ ১২ হাজার ৭৪৬ টাকা, পুকুরের নামে মামলা দেখিয়ে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৩৬ টাকা এবং প্রকাশিত তালিকার চেয়ে অনুমোদিত মূল্য কম করে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৫১ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সরকারি হিসাবে গোদাগাড়ী উপজেলায় খাসপুকুর রয়েছে ৩ হাজার ৬০টি। ১৪৩১-৩৩ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারা দিতে গত ১৮ এপ্রিল ২ হাজার ৭৪৯টি পুকুরের তালিকা প্রকাশ করা হয়। অভিনব এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটে তখনই। একটি বিশেষ মহল সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে এই জালিয়াতি করেছে। পুকুরের তালিকায় সই করা হয়েছে গত ৩০ মে। অনুমোদিত তালিকা প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ থাকে।
কিন্তু এবার তালিকাই প্রকাশ করা হয়েছে সই করার ২০ দিন পর, ২০ জুন। দেরিতে তালিকা প্রকাশ করে আপিল করার সুযোগ থেকে আগ্রহী দরপত্র দাখিলকারীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। তালিকায় ইজারামূল্য ৩০ লাখ টাকা থাকা পুকুর দুই লাখ টাকায়ও ইজারা দেওয়া হয়েছে।
প্রকাশিত তালিকা থেকে জানা গেছে, গোদাগাড়ী ইউনিয়নের রঘুনাথপুর মৌজার ৫৮ দাগের ১ একর ৮৬ শতাংশ আয়তনের পুকুরটির অনুমোদিত দর ছিল ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। ভ্যাট ও আয়কর ১৭ হাজার ৬২৫ টাকা এই মূল্যের সঙ্গে যোগ হওয়ার কথা। সাকল্যে পুকুরটির ইজারামূল্য দাঁড়ায় ৮১ হাজার ৭৫ টাকা। সেই পুকুরের বিপরীতে মাত্র ৭ হাজার ৫০ টাকার ট্রেজারি চালান জমা দেওয়া হয়েছে। এই পুকুর থেকে সরকারি রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৭৪ হাজার ২৫ টাকা। একইভাবে ১০৬টি পুকুরের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। তাতে সরকারের এক বছরের ক্ষতি হয়েছে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৫ টাকা। তিন বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৪৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯৫ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, একই ট্রেজারি চালান একাধিক পুকুরে ব্যবহার করেও সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এভাবে গোগ্রাম ইউনিয়নের তেরোপাড়া মৌজার ১৮৪ নম্বর দাগের ২ একর ২৮ শতাংশ আয়তনের খাসপুকুরের ট্রেজারি চালানের মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ হাজার টাকা। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ব্যাংকের সিলমোহর জাল করে একই চালান ব্যবহার করা হয়েছে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের কোচারপাড়া মৌজার ২৪৯ নম্বর দাগের ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ আয়তনের পুকুরের জন্যও। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পুকুরের জন্য সরকারের ঘরে কোনো টাকাই জমা হয়নি। পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। এভাবে ৯৬টি পুকুরের চালান জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। এই পন্থায় এক বছরের জন্য মোট ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮২ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। পুকুরগুলো তিন বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। সরকারের মোট ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ১২ হাজার ৭৪৬ টাকা।
এদিকে ইজারা তালিকায় প্রকাশিত মূল্যের চেয়ে অসম্ভব কম মূল্যে ৪৯টি পুকুর ইজারা দিয়ে এক বছরের জন্য সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে ৮৬ লাখ ৫৭ হাজার ১১৭ টাকা। তিন বছরের জন্য এই ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৫১ টাকা।
উপজেলার কাঁকনহাট পৌরসভার আব্দুলপুর মৌজার ১৯৭ নম্বর দাগের ৪ একর শূন্য ২ শতাংশ আয়তনের একটি ও মোহনপুর ইউনিয়নের দুধাই মৌজার ৪ একর ৯২ শতাংশ আয়তনের দুটি পুকুর ইজারার জন্য তালিকায় তোলা হয়নি। কিন্তু বাস্তবে পুকুর দুটি ভোগদখল চলছে। প্রতিটি পুকুরের ইজারামূল্য ৩০ লাখ টাকার কম হওয়ার কথা নয়। দুধাই মৌজার পুকুরটি উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ভোগদখল করছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, বৈধভাবে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন। দ্বিতীয় পুকুরটি দুলাল নামের এক ব্যক্তি ভোগ করছেন। তিনিও একই দাবি করেছেন।
এদিকে উপজেলার ১৩টি পুকুর ইজারার জন্য অনুমোদিত তালিকায় নেই। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুকুরগুলোর ট্রেজারি চালানোর মাধ্যমে ইজারামূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। গোপনে এসব পুকুর পেয়েছেন প্রভাবশালীরা।
এদিকে ইজারার জন্য প্রকাশিত পুকুরের তালিকায় তিনটি পুকুরের পাশে লিখে রাখা হয়, মামলা চলমান। অর্থাৎ, এগুলো ইজারাযোগ্য নয়। যদিও এগুলোর ইজারামূল্য লেখা হয়। মামলা চলমান লেখা দেখে আগ্রহী কেউ এগুলোর জন্য চালান জমা দেননি। তবে গোপনে এসব পুকুর ঠিকই ইজারা দেওয়া হয়েছে। আর নেওয়া হয়েছে প্রকাশিত ইজারামূল্যের চেয়ে অনেক কম টাকা।
এর মধ্যে গোদাগাড়ী ইউনিয়নের সাগুয়ান মৌজার ২৯৫ দাগের ৪ একর ২৬ শতাংশ আয়তনের পুকুরটির প্রকাশিত ইজারামূল্য ২১ লাখ ৪০ হাজার ৬৫০ টাকা। কিন্তু মামলা চলমান রয়েছে বলে এই পুকুরের বিপরীতে কেউ দরপত্রই জমা দেননি। অথচ গোপনে মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে বিশাল এই পুকুর। একই মৌজার ৬ একর ৬৪ শতাংশ আয়তনের পুকুরটির প্রকাশিত ইজারামূল্য ছিল ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা। এই পুকুর গোপনে মাত্র দুই লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। একই মৌজার ৩৭৪ দাগের ১ একর ৪৮ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুরের প্রকাশিত ইজারামূল্য হচ্ছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। এই পুকুর গোপনে ইজারা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার টাকায়। এই তিনটি পুকুরেরই ট্রেজারি জমাকারী হচ্ছেন একই ব্যক্তি।
সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার সাগুয়ান গ্রামের বিচারাধীন পুকুরটির খোঁজ নিতে গিয়ে হাবিব (৬২) নামের স্থানীয় এক কৃষককে পুকুরপাড়ে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘কয়েকজন ভাগে পুকুরটা খায়। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গোদাগাড়ীর মাদারপুরের শামীম। তিনি বলেন, সব নিয়ম মেনেই পুকুর ইজারা নিয়েছেন। কোনো অনিয়ম হয়নি।
গোদাগাড়ীতে পুকুরগুলো ইজারা দেওয়ার সময় এসি ল্যান্ড ছিলেন জাহিদ হাসান। তিনি বর্তমানে রাজশাহীর পবা উপজেলার এসি ল্যান্ড। সাগুয়ান গ্রামের পুকুরের বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা চলমান। এই পুকুর তিনি ইজারা দেননি। অবশ্য গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত নিশ্চিত করেছেন, ভূমি অফিসে ওই পুকুর ইজারা দেওয়ার দলিল পাওয়া গেছে। সেখানে এসি ল্যান্ডের স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীর জাহানাবাদ মহল্লার শরিফুল ইসলাম ওরফে বিষু নামের এক ব্যক্তি এই জালিয়াত চক্রের সঙ্গে জড়িত। তিনিই বছরের পর বছর গোদাগাড়ীর পুকুর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। নানা কায়দায় পানির দরে পুকুর নিয়ে তিনি আবার পরে প্রকৃত মাছচাষিদের কাছে চড়া মূল্যে ইজারা দেন। এভাবে তিনি ফুলেফেঁপে উঠেছেন।
বিষুর সিন্ডিকেটে ছিলেন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোক্তারুজ্জামান। বর্তমানে তিনি চারঘাট ভূমি অফিসে বদলি হয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি কিছু জানেন না। ইজারা কমিটির মাধ্যমে পুকুর ইজারা দেওয়া হয়। তিনি কিছুই দেখেন না।
পুকুর সিন্ডিকেটের হোতা শরিফুল ইসলাম বিষু একসময় বিএনপি করতেন। তবে দিনে দিনে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আবার বিএনপিতে ভেড়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ৫ আগস্ট গোদাগাড়ী থানায় আগুন দেওয়ার মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন কারাগারে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
গোদাগাড়ীর ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, তিনি গোদাগাড়ীতে আসার আগে এসব পুকুর ইজারা হয়েছে। তখন ইজারা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালীন ইউএনও আতিকুল ইসলাম। আর সদস্যসচিব ছিলেন এসি ল্যান্ড জাহিদ হাসান। যে বা যারাই জালিয়াতি করে পুকুর ইজারা দেওয়া কিংবা নেওয়ার সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, আওয়ামী লীগ যে অপকর্ম করেছে, প্রত্যেকটি অপকর্মের বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দেশকে শ্মশান বানিয়ে ফেলেছে।
১৪ মিনিট আগেলক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থী সাদ আল আফনান হত্যা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. স্বপন ও অমিত হাসান রিপনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ রোববার ভোরে শহরের সমসেরাবাদ এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
১৮ মিনিট আগেন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা ভাতার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) সব হাসপাতালের বেসরকারি ট্রেইনি চিকিৎসকেরা। আজ রোববার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা...
৪২ মিনিট আগেগাজীপুরের শ্রীপুরে বোতাম তৈরির কারখানার কেমিক্যাল গুদামের আগুনে দগ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে শ্রীপুর পৌরসভার ভাংনাহাটি গ্রামের এমঅ্যান্ডইউ ট্রিমস নামক কারখানায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
১ ঘণ্টা আগে