যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে নিহত সোহেল রানার পরিবারের পাশে কেউ নেই

গনেশ দাস, বগুড়া
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১৮: ১৭
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১৮: ৪৯

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বিজয় মিছিল নিয়ে গণভবনে যাওয়ার পথে ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত হন বগুড়ার নন্দীগ্রামের ভুস্কুর গ্রামের সোহেল রানা। রাজধানীর একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে মা-বাবাসহ পাঁচ সদস্যের সংসার চলত সোহেল রানার উপার্জনে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে এখন দিশেহারা পরিবারটি। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটলেও কেউ পাশে দাঁড়ায়নি পরিবারটির। 

আজ রোববার নিহত সোহেল রানার বাড়িতে গেলে তাঁর ভাই সিহাব উদ্দিন এ প্রতিবেদককে এসব কথা জানান। 

৩০ বছরের যুবক সোহেল রানা ভুস্কুর গ্রামের ফেরদৌস রহমানের ছেলে। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে সংসারের অভাব-অনটনের কারণে ঢাকায় চলে আসেন প্রায় ৯ বছর আগে। দেড় বছর আগে বিয়ে করে স্ত্রীসহ বসবাস করতেন রাজধানীর রায়েরবাগ এলাকায়। ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেন শ্বশুরবাড়ি গাইবান্ধা জেলার ঢোলভাঙ্গা গ্রামে। 

বড় ভাই সিহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমি গরুর ব্যবসাতে লোকসান করে বর্তমানে বেকার। আমার স্ত্রী–সন্তান, বাবা-মার ভরণপোষণ চলত ছোট ভাইয়ের পাঠানো টাকায়। কিছুদিন পর ছোট ভাই ব্যবসার জন্য আমাকে টাকা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তার আগেই পুলিশের গুলিতে প্রাণ গেল ভাইয়ের।’ 

তিনি বলেন, গত শনিবার ৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। বাজার খরচের টাকা চাইলে সঙ্গে সঙ্গে বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠায়। তাকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলে বলে, ‘এলাকার কেউ ঘরে নেই, সবাই মাঠে নেমেছে। আমি একা ঘরে থেকে কী করব?’ 

সিহাব উদ্দিন বলেন, ‘পরদিন রোববার সোহেল রানা নিজেই কয়েকবার ফোন করে বাবা, মাসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে। সোমবার বিকেলে ফোন করতেই রিসিভ করেন অপরিচিত একজন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে বলেন সোহেল রানা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। বাড়িতে এ খবর শুনে আহাজারি শুরু হয় পরিবারে। ঢাকায় বসবাস করা চাচাতো ভাইকে সংবাদ দিলে তিনি সোহেল রানার লাশ নিয়ে আসেন বাড়িতে। পরদিন জানাজা শেষে দাফন করা হয়।’ 

শোকে স্তব্ধ সোহেল রানার পরিবার। ছবি: আজকের পত্রিকাসোহেল রানার মোবাইল ফোনে বেশ কিছু ভিডিও পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, ৫ আগস্ট দুপুরে সোহেল রানা হাতে লাঠি, বুকে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে বিজয় মিছিলে লোকজনকে সংগঠিত করছেন। তিনি সবাইকে গণভবনের দিকে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। হাসপাতালে মৃত্যু সনদ অনুয়ায়ী, সোমবার বেলা পৌনে ৩টায় সোহেল রানার মৃত্যু হয়। ছবিতে দেখা যায় তাঁর বুকের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ছাড়াও ছোট একটি ব্যাগ ছিল। ব্যাগ ভেদ করে গুলি তাঁর বুকে ঢুকে মৃত্যু হয়। 

সোহেল রানার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, মা মাবিয়া বেগম ছেলের জন্য বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। লোকজন দেখলে আহাজারি করছেন। 

তিনি বলেন, ‘বাড়ির ভিটা ছাড়া কোনো জমি নাই আমাদের। স্বামী অসুস্থ, বড় ছেলেও বেকার। এতগুলো মানুষের খরচ বহন করত সোহেল রানা। সেই ছেলেটাকে গুলি করে মেরে ফেলল পুলিশ? এখন আমাদের সংসার চলবে কী করে? খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে আমাদের। ছেলের বউ সাত মাসের গর্ভবতী। স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে বাবার বাড়ি থেকে আসলেও দাফন শেষে আবার চলে গেছে বাবার বাড়ি। পরে ঢাকায় গিয়ে বাসার মালামাল নিয়ে গেছে বাবার বাড়িতে। বাবার বাড়িতে থেকে আনতে গেলে সে আর শ্বশুরবাড়িতে আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।’ 

সোহেল রানার ভাই সিহাব উদ্দিন বলেন, ‘ছোট ভাইয়ের জানাজাতে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা এসেছিলেন। কিন্তু তার পর থেকে কেউ আর খোঁজখবর নেয়নি আমাদের।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত