কারাগারে কথা-কাটাকাটির পর সাবেক এমপি এনামুলকে পেটান ৩ কয়েদি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১: ৫৪
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০: ০১

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এনামুল হককে কারাগারে মারধর করেন তিন কয়েদি। ঘটনার পরপর এই তিনজনকে শাস্তি হিসেবে সেলে রাখা হয়েছে। এনামুলেরও ‘নিরাপদে’ থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

দুই মাসের সাজা খেটে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া এক কয়েদি আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। 

ঘটনার পর থেকেই সাংবাদিকদের ফোন ধরছেন না রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ জেল সুপার রত্না রায় ও জেলার মো. আমান উল্লাহ। কোনো কারারক্ষীও মুখ খুলছেন না। 

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এনামুলকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে ঘটনা জানাজানি হয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, গতকাল বিকেলে এনামুলকে কারাগারে মারধর করা হয়। তবে কারাগার থেকে বের হওয়া ওই কয়েদি জানালেন, বুধবার নয়, মারধরের ঘটনা ঘটে আগের দিন মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে। বুধবার এনামুলকে হাসপাতালে নেওয়া হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। এরপর রাতেই আবার তাঁকে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। 

মুক্তি পাওয়া এই কয়েদি জানান, তিনি সশ্রম কারাদণ্ড পাওয়া কয়েদি ছিলেন। পুরো কারাগারেই ঘুরে বেড়ানো যায় এমন একটি কাজ করতেন তিনি। তাই ঘটনার বিষয়ে সবকিছুই জানেন। 

তিনি জানান, শুরু থেকেই কারা অভ্যন্তরের হাসপাতালেই ছিলেন এনামুল হক। মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এ সময় রাজনৈতিক বিষয়কে কেন্দ্র করে এক কয়েদির সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। তখন ক্ষুব্ধ হয়ে তিন কয়েদি তাঁকে ধরে মারধর শুরু করেন। পরে দ্রুতই কারারক্ষীরা গিয়ে তাঁকে রক্ষা করেন। 

তিনি আরও জানান, ঘটনার পরই কারাভ্যন্তরের হাসপাতালে এনামুলকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরদিন বিকেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাঁকে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে যাওয়ার পর এনামুল হককে কারা ক্যানটিন ও ইন্টার রুমের মাঝামাঝি একটি ঘরে রাখা হয়েছে। এই ঘরটিতে একজন বন্দীকেই রাখা হয় বলে তিনি জানান। 

মুক্তি পাওয়া এই বন্দী ঘরটির যে বিবরণ দেন, তাতে ধারণা করা যায় এটি ডিভিশনপ্রাপ্ত ‘ভিআইপি’ আসামিদের থাকার কক্ষ। ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামিদের থাকার কক্ষটি কারাগারের ওই এলাকাতেই অবস্থিত। 

তবে এনামুলকে আসলেই ওই কক্ষে রাখা হয়েছে কি না, তা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারেনি আজকের পত্রিকা। 

এদিকে যে তিন কয়েদি সাবেক এই এমপিকে মারধর করেন, তাঁদেরও বর্ণনা দেন মুক্তি পাওয়া ওই কয়েদি। তিনি জানান, ওই তিনজনের মধ্যে দুজন বয়সে তরুণ। একজনের বয়স ৫০–এর বেশি। তিনি ওই কয়েদিদের নাম-ঠিকানা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। 

তিনি জানান, এনামুল হককে মারধরের পরই কারারক্ষীরা ওই তিন কয়েদিকে ধরে ফেলেন। তাৎক্ষণিক তাঁদের ‘শাস্তি’ দেওয়া হয়। এ নিয়ে কারাবিধি অনুযায়ী একটি ‘কেস ফাইল’ হয়। পরদিন ভোরে কেস টেবিলে তাঁদের বিচার করেন জ্যেষ্ঠ জেল সুপার। এরপর শাস্তিস্বরূপ তাঁদের কারাগারের ‘ছয় সেল’-এ রাখা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই ব্যক্তি গণমাধ্যমে নিজের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। 

বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ জেল সুপার রত্মা রায় ও জেলার মো. আমান উল্লাহকে বুধ ও বৃহস্পতিবার দফায় দফায় ফোন করা হলেও ধরেননি। 

গতকাল রাতে রামেক হাসপাতালে দায়িত্বরত ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, এনামুল হকের মাথা ও কপালের ডান পাশে ছিলা ফোলা জখম ছিল। কারাগারের ভেতরে বন্দীরা তাঁকে মারধর করেছেন বলে কারারক্ষীরা তাঁকে জানিয়েছিলেন। 

উল্লেখ্য, এনা গ্রুপের চেয়ারম্যান এনামুল হক নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন।

গত ৫ আগস্ট বাগমারায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় একাধিক মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে রাজধানীর আদাবর থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত