বাসশ্রমিক-অটোরিকশাচালক দ্বন্দ্ব: বিএনপি নেতার কার্যালয়ে মীমাংসায় বসে আবার মারামারি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী    
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭: ১৮
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭: ৩০
সিএনজিচালিত চালক ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরের ষষ্ঠীতলা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে বাসশ্রমিক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে মুখোমুখি হয়ে তাঁরা আবারও মারামারি করেছেন। এতে দুই পক্ষই তাদের দুজন করে আহত হওয়ার দাবি করেছে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরের ষষ্ঠীতলায় মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের সামনে এই মারামারির ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের এই দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য পুলিশ বিএনপি নেতা মামুনকেই দায়িত্ব দিয়েছিল। তবে মারামারির কারণে মীমাংসা হয়নি।

জানতে চাইলে মামুনুর রশিদ বলেন, ‘পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের ডিসি আমাকে দুই পক্ষকে নিয়ে মীমাংসা করে দিতে বলেছিলেন। সে অনুযায়ী আমি বসি। মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন আসে, কিন্তু সিএনজি চালকদের একটা গ্রুপ আসে, অন্যটি আসেনি। তাই মীমাংসা হবে না বলে দিই।’

তিনি বলেন, ‘এ সময় হঠাৎ হারু গ্রুপ (সিএনজি মালিকদের একটি গ্রুপ) চলে আসে এবং আমার সামনেই মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের দুই-তিনজনকে মারধর করে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যেই মারামারি লেগে যায়।’

জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিক আলী পাখি বলেন, ‘ওরাই সব সময় মারামারি করে, আর দোষ হয় আমাদের। আজ ওরা আমাদের ওপর হামলা করেছে। এতে দুজন আহত হয়েছে। এখন রাতে আবার পুলিশ-প্রশাসন উভয়পক্ষকে নিয়ে বসার কথা।’

রাজশাহী সিএনজি মালিক সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মীমাংসায় বসে মোটরশ্রমিকেরা আমাদের কথা বলতে দিচ্ছিল না। আমাদেরই তারা মারধর করেছে। এতে দুজন আহত হয়েছে। এক সিএনজি চালককে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আর কোনো রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে মীমাংসায় বসতে রাজি না। পুলিশ-প্রশাসন থাকবে, আমরা দুই পক্ষ থাকব। এভাবে মীমাংসা করতে হবে। সন্ধ্যার পর ট্রাফিকের ডিসির অফিসে আবার বসার কথা আছে।’

রাজশাহীতে প্রায়ই সিএনজি অটোরিকশার চালক ও বাসের শ্রমিকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। গত সোমবার সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা তানোর উপজেলা সদরে বাসের ছয়জন চালক, হেলপার ও কন্ডাক্টরকে মারধর করেন। পরদিন বাস শ্রমিকেরা নগরের শিরোইল বাস টার্মিনাল থেকে লাঠিশোঁটা ও হাতুড়ি নিয়ে এসে রেলগেট সিএনজি স্ট্যান্ডে হামলা করেন।

তারা ৭০-৮০টি সিএনজি অটোরিকশার কাঁচ ভাঙচুর করে চলে যান। যাত্রী ও সিএনজি চালক মিলিয়ে ৪০ জনকে মারধরের অভিযোগ তুলেছে সিএনজি মালিক সমিতি। এর জের ধরে গতকাল বুধবার রাজশাহীর নওহাটা ব্রিজ এলাকায় বিক্ষোভ করেন সিএনজি চালকেরা। দুটি বাসও তখন ভাঙচুর করা হয়।

ফলে রাজশাহী-নওগাঁ এবং রাজশাহী-আমনুরা রুটে ফের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে বাস চলছে।

গত সোমবার তানোরের ঘটনার পর ১৮ সিএনজি চালকের নামে মামলা হয়েছে। তবে সিএনজি স্ট্যান্ডে হামলার ঘটনায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ আছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

গতকাল বুধবার দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) নূর আলম সিদ্দিকী উভয়পক্ষকে নিয়ে নিজ কার্যালয়ে বসেছিলেন। এ সময় মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য বিএনপি নেতা মামুনুর রশিদকে দায়িত্ব দেন। তখন সিএনজি চালকেরাও বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন। তবে মামুনের কার্যালয়ে বসার পর আজ বৃহস্পতিবার আবার দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ফলে মীমাংসা ভেস্তে যায়।

এ বিষয়ে কথা বলতে ট্রাফিক বিভাগের ডিসি নূর আলম সিদ্দিকীকে কয়েকদফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

আরএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘নতুন করে মারামারির ঘটনাটি জানা নেই। এ রকম হলে দুপক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত