Ajker Patrika

কালাইয়ে করোনায় স্থবির হয়ে পড়েছে নিম্নবিত্তদের জনজীবন

প্রতিনিধি, কালাই (জয়পুরহাট)
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২১, ১৪: ১৩
কালাইয়ে করোনায় স্থবির হয়ে পড়েছে নিম্নবিত্তদের জনজীবন

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা পরিষদের গেটের পাশে ফুটপাতে খোলা জায়গায় কাঠের বাক্স নিয়ে বসে সকাল–সন্ধ্যা পুরোনো জুতা-স্যান্ডেল, ব্যাগ সেলাই ও ভাঙা ছাতা মেরামতের কাজ করতেন মানিক রবিদাস। বয়স ৬৫ ছুঁই ছুঁই। জুতা সেলাই আর ছাতা মেরামতের কাজ করে দিন শেষে তাঁর ৩০০-৪০০ টাকা উপার্জন হতো। সেই আয়ে চলত শ্রমজীবী এ মানুষের ৫ সদস্যের সংসার। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে আয় কমে অর্ধেকে নেমেছিল। এখন কঠোর বিধিনিষেধের পর ঠিকমতো ফুটপাতে কাঠের বাক্স পেতে বসতেই পারছেন না। মানুষের আনাগোনা নেই, আয় রোজগারও বন্ধ। হাত গুটিয়ে বসে আছেন। অচল প্রায় সংসার। পরিবার নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। 

সহায় সম্বলহীন মানিক রবিদাসের বাড়ি উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের বেগুনগামে। আজ শুক্রবার বৃষ্টিভেজা সকালে দোকান খোলার আশায় উপজেলা পরিষদের সামনের ফুটপাতে বিষণ্ন মনে ঘুরঘুর করছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের ভয়ে ফুটপাতে দোকান খুলে বসার সাহস পাচ্ছিলেন না। কথা হয় মানিক রবিদাসের সঙ্গে। তিন যুগ ধরে তিনি জুতা সেলাইয়ের পেশায় জড়িত। জুতা ও ব্যাগ সেলাইয়ের পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে পুরোনো ছাতা মেরামতের কাজ করেন। 

মানিক রবিদাসের আয় করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই কমে গেছে। এখন ভরা বর্ষাকাল। এ সময় অনেকেই পুরোনো ছাতা মেরামতের জন্য আসতেন তাঁর কাছে। কিন্তু এখন এই লকডাউনের মধ্যে তাও বন্ধ। বিধিনিষেধের ভয়ে ঠিকমতো ফুটপাতে দোকান খুলে বসতে পারেন না। লোকজনের আনাগোনা নেই, কাজও তেমন নেই। এখন দিন শেষে ৫০-১০০ টাকা রোজগার হয়। এই আয়ে সংসার চলে না। পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে। 

কতটা কষ্ট, তা মানিক রবিদাসের কথাতেই স্পষ্ট। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘ইঙ্কা (এমন) কষ্ট আর সহ্য করা যাওচেনা (যাচ্ছে না)। কামাই রোজগার বাদ দিয়ে ইঙ্কা করে বসে থাকলে করোনাত মরার আগে বউ–ছল (সন্তান) লিয়ে মোক না খায়াই মরা লাগবে।’ 

শুধু মানিক রবিদাস নন, লকডাউনে এমন সংকটে পড়েছেন উপজেলার শ্রমজীবী হাজারো মানুষ। করোনা মহামারিতে স্থবির হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবন। এই ক্রান্তিকালে লোকলজ্জায় তাঁরা না পারছেন কাউকে কিছু বলতে, না পারছেন বাঁচতে। ফলে তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। 

সরেজমিনে ঘুরে এমন বহু মানুষের দেখা পাওয়া গেল, যারা খুব কষ্টে দিন পার করছেন। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব তাঁদের জীবনটাই যেন ওলটপালট করে দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানবেতর জীবনযাপন করছেন শ্রমজীবী মানুষেরা। 

নিম্নবিত্ত মানুষেরা সাধারণত দিন আনে দিন খায়। তাঁদের দৈনিক রোজগারে পরিবারের মুখে হাসি ফোটে। সেই হাসি আজ দূর অতীত। এখন এই সংকটকালে তাঁদের বেঁচে থাকাই যেন দায় হয়ে পড়েছে। কষ্টই এখন তাঁদের নিত্যসঙ্গী। 

মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। করোনাভাইরাস মহামারিতে সব ব্যবসাতেই মন্দা দেখা দিয়েছে। কিন্তু লোকলজ্জার কারণে কাউকে কিছু বলার বা কারও কাছে কিছু চাওয়ার উপায় তাঁদের নেই। ফলে তাঁদেরও দিন যাচ্ছে কষ্টে। 

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) টুকটুক তালুকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর করোনাকালীন মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত আছে। 

কিন্তু এই মানবিক সহায়তার দেখা পান না মানিক রবিদাসের মতো লোকেরা। আর মধ্যবিত্ত শ্রেণি সমাজের কাছে ছোট হয়ে যাওয়ার ভয়ে পারে না এই সহায়তা নিতে যেতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত