Ajker Patrika

কোনো শিক্ষার্থী নেই এই বিদ্যালয়ে, আছে শুধু ফাঁকা বেঞ্চ, টেবিল-চেয়ার 

কাজীপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬: ২২
কোনো শিক্ষার্থী নেই এই বিদ্যালয়ে, আছে শুধু ফাঁকা বেঞ্চ, টেবিল-চেয়ার 

ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১১টা ৪৩ মিনিট। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল দুজন শিক্ষক অফিস কক্ষে বসে গল্প করছেন। ওই দুই শিক্ষক ছাড়া বিদ্যালয়ে আর কাউকে পাওয়া গেল না। সম্প্রতি উপজেলার খাসরাজবাড়ী ইউনিয়নের কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এমন চিত্র পাওয়া গেল। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন ধরে কোনো শিক্ষার্থী নেই।  

নিয়মানুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছয়টি শ্রেণিতে সর্বনিম্ন পঞ্চাশ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা। কিন্তু কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীও নেই। এক দিনের নয়, ২০১৮ সাল থেকেই এমন চিত্র বিদ্যালয়টিতে। জানা গেছে, বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য শিক্ষক রয়েছেন পাঁচজন। শিক্ষার্থী নেই বলে তাঁরাও নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। 

সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য কোনো নির্দেশক সাইনবোর্ড নেই, নেই কক্ষ নির্দেশক কোনো লেখা। শ্রেণিকক্ষে বোর্ড, বেঞ্চগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। প্রাক-প্রাথমিকের কক্ষটিতে শুধু একটি খেলনা রাখা আছে। অফিস কক্ষের ভেতরে শিক্ষকদের নামের তালিকার বোর্ডে কর্মকর্তাদের তথ্য সংযুক্ত নেই। বেঞ্চের ওপর রাখা বঙ্গবন্ধু কর্নারে ধুলোর আস্তর পড়েছে, সঙ্গে রাখা টয়লেট ক্লিনার। শেখ রাসেল স্মৃতি কর্নারে রাখা স্যাভলন, স্যানিটাইজার ও গ্লাসসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। আর ওপরে রাখা গতবারের অবিতরণকৃত পাঠ্যবই। উপস্থিত দুই শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তাঁরা তা দেখাতে পারেননি। 

এভাবেই ফাঁকা পড়ে থাকে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকার কারণ জানতে চাইলে উপস্থিত সহকারী শিক্ষক শারমিন সুলতানা বলেন, ‘নাই, শিক্ষার্থী ভর্তি হয় না, তাই নাই। আপনারা তো দেখতেইছেন।’ গতবারের বই এখনো বিতরণ করেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীই নাই, বই কাকে দেব?’ 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ‘আমরা তো ইহিনেই থাকি। কোনদিন তো একজন ছাত্র আসতি দেইখলাম না। খালি দেহি দুয়েকজন মাস্টার যাওয়া আসা হরে।’ 

তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, ‘ইহিনে পড়াশোনা ভালো না। মাস্টাররাও নিয়মিত আইসে না। তাই আমরা ছলপাল সব কে.জি স্কুলে দিই। কোনো অফিসারও খোঁজ নিবার আইসে না এই স্কুলে।’

জানা গেছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বিদ্যালয়টিতে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেটিরও কোনো কাজ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, সরকারি বরাদ্দের কোনো টাকারই কাজ করা হয়নি এখানে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে তেমন পড়াশোনা করানো হয় না, তাই ছাত্র-ছাত্রী কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করে দেন অভিভাবকেরা। 

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক এনামুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

বেঞ্চের ওপর রাখা বঙ্গবন্ধু কর্নার ধুলোর আস্তর পড়েছে, সঙ্গে রাখা টয়লেট ক্লিনারবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রায়হান বলেন, ‘দুই-আড়াই মাস আগে আমাকে নতুন সভাপতি বানানো হয়েছে। স্কুলের অবস্থা মোটামুটি ভালো। আমি মাঝে মাঝে প্রধান শিক্ষককে মোবাইল করে খোঁজখবর নিই। আর কোনো দরকার থাকলে স্কুলে যাই।’ এ সময় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকার বিষয়ে কথা তুললে তিনি এড়িয়ে যান।  

কাজীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টির ব্যাপারে এর আগেও অভিযোগ পেয়েছিলাম। এবার আর  ছাড় দেওয়া হবে না। অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুখময় সরকার বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে বিদ্যালয়টি সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত