Ajker Patrika

জোর করে অধ্যক্ষের চেয়ারে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা

  • অভিযুক্ত সিরাজুলের বিরুদ্ধে অন্তত ১০ জন ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
  • চেয়ার দখলের বিষয়ে করণীয় জানতে জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছেন ইউএনও।

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ৪৪
সিরাজুল হক। ছবি: সংগৃহীত
সিরাজুল হক। ছবি: সংগৃহীত

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজশাহীর কাটাখালীর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সিরাজুল হক নামের ওই সহকারী অধ্যাপক রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। গত এপ্রিলে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কাটাখালী পৌরসভার উপনির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।

আর কলেজেরই ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় শিক্ষার্থীরা সিরাজুল হকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন-বিক্ষোভও করেছিল। এবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ৯ আগস্ট তিনি কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীনকে তাঁর কার্যালয়ে ঢুকতে দেননি। সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে গিয়ে হামলা চালিয়েছেন অধ্যক্ষের বাড়িতেও। ফলে ভয়ে অধ্যক্ষ কলেজে যেতে পারেননি। কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া এবং বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগে জয়নাল আবেদীন থানায় আলাদা দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

প্রাণভয়ে এখনো কলেজে যেতে পারছেন না অধ্যক্ষ। এই অবস্থায় কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন কলেজের এক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু পরদিনই অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে নিয়েছেন সিরাজুল হক। এখন কলেজটিতে অধ্যক্ষের পদ নিয়ে জটিলতা চলছে। এ নিয়ে গত ২৮ অক্টোবর ইউএনও সোহরাব হোসেন জেলা প্রশাসকের কাছে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন।

এর আগে অধ্যক্ষকে কলেজে ঢুকতে না দেওয়া এবং তাঁর বাড়িতে হামলার ঘটনায় ২০ অক্টোবর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনারকে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো কলেজে যেতে পারেননি জয়নাল আবেদীন। দায়িত্ব নিতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বদরুল আমিন সরকারও।

অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে আছেন ভূগোলের শিক্ষক সিরাজুল হক।

জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সিরাজুল হক গত ৯ আগস্ট বহিরাগতদের নিয়ে এসে আমাকে কলেজে ঢুকতে দেননি। আমার বাড়িতেও হামলা চালিয়েছেন। কলেজে গেলে মেরে ফেলা হবে বলে ভয় দেখানো হয়েছে। তাই আমি কলেজে যেতে পারি না। এখন শুনছি সিরাজুল হক অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে নিয়েছেন।’

কলেজের শিক্ষকেরা জানান, সিরাজুল হকের অধ্যক্ষ হওয়ার খায়েশ নতুন নয়। অধ্যক্ষের চেয়ারে বসতে অধ্যক্ষকে দীর্ঘদিন ধরেই নানাভাবে হয়রানি করে আসছিলেন সিরাজুল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে চেয়ার দখল করেছেন তিনি। সিরাজুলের বিরুদ্ধে অন্তত ১০ জন ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বলে শিক্ষকেরা জানান।

অধ্যক্ষের চেয়ার দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিরাজুল হক বলেন, ‘এলাকার লোকজন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী আমাকে এই সম্মান দিয়েছেন। তাদের অনুমতিক্রমেই আমি দায়িত্ব নিয়েছি। অধ্যক্ষ পালিয়ে থাকলে তো কলেজ চলে না। তাই স্বেচ্ছায় এই দায়িত্ব পালন করছি।’ তিনি দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল। তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার।

অধ্যক্ষকে ঢুকতে না দিয়ে সিরাজুল হকের চেয়ার দখলের বিষয়ে বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক ও রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন বলেন, ‘বিএনপি কখনো অবৈধ ও অনৈতিক কাজকে সাপোর্ট করে না। কেন্দ্রীয়ভাবেও সতর্ক করা হয়েছে, দলের নাম ব্যবহার করে কোনো ধরনের অনৈতিক কাজ করার সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে সোহরাব হোসেন বলেন, ‘অধ্যক্ষ অনুপস্থিত থাকার কারণে আমরা একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দিতে চাই। তখন জ্যেষ্ঠ পাঁচজনের নাম আনা হলে তিনজনই দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আর সিরাজুল হক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হলেও তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নসহ ছয়টি মামলা আছে। তাই আমরা তাঁকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না করে অন্যজনকে করি। কিন্তু পরদিনই সিরাজুল নিজেই অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে গেছেন। এ পরিস্থিতিতে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন করণীয় কী, তা জানতে চেয়ে জেলা প্রশাসককে প্রতিবেদন দিয়েছি। জেলা প্রশাসক বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত