Ajker Patrika

থানায় মাশোয়ারা দিয়ে বাড়িতেই চলছিল নকল ওষুধ কারখানা

প্রতিনিধি (রিমন রহমান) , রাজশাহী
থানায় মাশোয়ারা দিয়ে বাড়িতেই চলছিল নকল ওষুধ কারখানা

রাজশাহী: রাজশাহীতে একটি নকল ওষুধ তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। নগরীর চন্দ্রিমা থানার ছোটবনগ্রাম আবাসিক এলাকা-১ এর একটি বাড়িতে এই কারখানা গড়ে তোলা হয়েছিল। তবে মালিকের দাবি—থানায় নিয়মিত মাশোয়ারা ও চার সাংবাদিককে চাঁদা দিয়েই চলত এ কারখানা।

শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল এ বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ জব্দ করা হয়। আটক করা হয় বাড়ির মালিক শফিকুল ইসলাম ওরফে আনিস (৪৬) ও তাঁর সহযোগী রবিউল ইসলামকে (৩২)। এ অপরাধের মূল হোতা আনিসের বাবার নাম মৃত আনসার আলী। আর আটক রবিউল নগরীর ভদ্রা জামালপুর এলাকার আনসার আলীর ছেলে।

ওষুধ প্যাকেট করতে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক মেশিন। ছবি: আজকের পত্রিকানির্জন এলাকার নিজের বাড়িতে একটি ঘরে মেশিন বসিয়ে ওষুধ প্যাকেটিং করতেন আনিস। অত্যাধুনিক এই মেশিনটিও জব্দ করেছে ডিবি পুলিশ। আনিসের বাড়ি থেকে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বিপুল পরিমাণ সেকলো-২০, এসবি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের পাওয়ার-৩০, নাভানার পিজোফেন-০.৫, এপেক্স ফার্মার রিলামক্স-৫০০ ও ইলিমিক্স-২০০ জব্দ করা হয়।

জব্দ হওয়া ওষুধের মধ্যে সেকলো ছিল ১ হাজার ৮৬৪ প্যাকেট। মোড়কসহ যৌন উত্তেজক পাওয়ার-৩০ ছিল ৭৬৯ প্যাকেট, মোড়ক ছাড়া ৫ হাজার ১৮৮ প্যাকেট। এছাড়া এই ওষুধটির সবুজ রঙের পাওয়া গেছে ৬৫ পাতা ও খোলা ওষুধ পাওয়া গেছে ১৬ কেজি। পিজোফেন পাওয়া গেছে ১ হাজার ৩৫৬ পাতা, ইলিক্সিম ১২৫ পাতা ও রিলামক্স ২২ পাতা। বড় ১২ কার্টুন সেকলো ও ৭টি কার্টুনে পাওয়ার-৩০ দেখা গেছে। এ বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ ওষুধের খালি খোসা, স্টিকারসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও জব্দ করা হয়।

এসব নকল ওষুধ জব্দের পর আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক শনিবার দুপুরে নগর ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে নগর ডিবি পুলিশের উপ-কমিশনার আরেফিন জুয়েল ও সহকারী কমিশনার রাকিবুল হাসানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, জব্দ করা নকল ওষুধগুলোর আনুমানিক মূল্য ৭০ লাখ টাকা। দুই বছর ধরে নকল ওষুধ তৈরির কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন আনিস। তবে পুলিশের ধারণা, দীর্ঘ সময় ধরেই আনিস এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি এসব ওষুধ বাজারেও ছেড়েছেন। তথ্য নিয়ে এসব ওষুধ বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে। কারণ, এসব নকল ওষুধ খেয়ে কোন কাজ হয় না।

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, বাজারে যেসব ওষুধের চাহিদা বেশি সেগুলোই নকল করতেন আনিস। আনিস ও তাঁর সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। তবে ক্যাপসুলের ভেতরে ও ওষুধ তৈরিতে কী ধরনের পাউডার ব্যবহার হতো তা রাসায়নিক পরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না। এগুলোর রাসায়নিক পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

রাতে আটকের সময় আনিসুর এই প্রতিবেদককে বলেন, আগে তিনি দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীতে টেকনিশিয়ান হিসেবে চাকরি করেছেন। পরে চাকরি ছেড়ে নিজেই এই কারখানা গড়ে তোলেন। প্রয়োজনীয় সব উপাদান ঢাকা থেকে নিয়ে বাড়িতে শুধু ওষুধ প্যাকিং করতেন।

আনিস সাংবাদিকদের বলেন, ‘চন্দ্রিমা থানা পুলিশ তাঁর এই কারখানার ব্যাপারে জানত। থানায় আমাকে নিয়মিত মাশোয়ারা দিতে হতো। শহরের চারজন সাংবাদিককেও টাকা দিতে হতো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার বলেন, আনিসের সঙ্গে যার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাঁর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুম মুনীর বলেন, নকল ওষুধ কারখানা পাওয়া গেছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমার সাথে আনিসের কোন সম্পর্ক ছিল না। তাঁকে আমি চিনতামও না। আনিস কেন বলছে তা জানি না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুসলিম ছেলে বিয়ে করে পরিবারহারা, স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে ঢাকায় এসে ধর্ষণের শিকার

সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন

মাদারীপুরে ৩ খুন: ঘটনার পেছনে পা ভাঙার প্রতিশোধসহ ৩ কারণ

মসজিদে লুকিয়েও রক্ষা পেলেন না স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও তাঁর ভাই, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল প্রতিপক্ষ

ধর্ষণের শিকার নারী-শিশুর ছবি-পরিচয় প্রকাশ করলেই আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত