ভূমি কর্মকর্তার মামলায় প্রধান আসামি মৃত ব্যক্তি, কিছুই জানেন না সাক্ষী

পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২: ৫১
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০: ২৩

পাবনার সুজানগরে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন সুজানগর পৌর ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) বাবুল আক্তার। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ৭ বছর আগে মারা যাওয়া এক ব্যক্তিকে। এ ছাড়া মামলার প্রধান সাক্ষী বলছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই না করেই অসুস্থসহ সাধারণ মানুষের নামে নিজের ইচ্ছেমতো মামলা দায়ের করেছেন নায়েব বাবুল আক্তার। তবে বিষয়টিকে সামান্য ভুল দাবি করে গাফিলতি বলতে নারাজ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সুজানগর পৌর এলাকার চর ভবানীপুর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে ওই এলাকার বন্দের মণ্ডলের ছেলে কাদের মণ্ডলকে। যিনি ৭ বছর আগে মারা গেছেন। দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে কাদের মণ্ডলের বড় ভাই দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকা ৮৫ বছরের বৃদ্ধ শুকুর মণ্ডলকে। 

এ ছাড়া এই মামলায় যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তাদের অনেকেই বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয় বলে স্থানীয়দের দাবি। 

মৃত কাদের মণ্ডলের স্ত্রী আসমা খাতুন বলেন, ‘৭ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। তিন সন্তানকে নিয়ে অসহায়ভাবে বাস করছি। এর মধ্যেই হঠাৎ করে গত পশুদিন শুনলাম আমার স্বামীকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে প্রধান আসামি করা হয়েছে। একজন মৃত মানুষ কীভাবে এখন বালু উত্তোলন করতে পারে? এ জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তি চাই।’ 

বালু উত্তোলনের অভিযোগে মামলার কপি। ছবি: সংগৃহীত কাদের মণ্ডলের বড় ভাই মামলার দ্বিতীয় আসামি বয়োবৃদ্ধ শকুর মণ্ডল বলেন, ‘আমি ভালোভাবে চলাফেরাই করতে পারি না। আমার বয়স ৮৫ বছর। বালু কীভাবে কোথায় কারা উত্তোলন করে কিছুই জানি না। অথচ আমার মৃত ছোট ভাই ও আমাকে আসামি করা হয়েছে।’ 

মামলার প্রধান সাক্ষী ইকবাল সরদার বলেন, ‘আমি মামলার বিষয়ে কিছুই জানি না। পরে শুনলাম আমাকে নাকি সাক্ষী করা হয়েছে। আর আসামি করা হয়েছে মৃত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের। আমরা এলাকাবাসী মামলার আসামিদের নাম শুনে হতবাক হয়েছি। যাদের নাম শুনছি তারা অনেকেই নিরীহ সাধারণ মানুষ।’ 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) বাবুল আক্তার বলেন, ‘বালু উত্তোলন কারা করছে তা আমি সরাসরি দেখিনি। ওই এলাকার মানুষদের কাছ থেকে শুনে মামলা করেছি। পরে মামলা সংশোধন করতে থানায় আবেদন করেছি।’ 

সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, ‘নায়েব সাহেব যেভাবে এজাহার দিয়েছেন সেভাবেই আমরা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছি। এখন কেউ যদি মৃত বা অসুস্থ থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে বাদ দেওয়া হবে।’ 

বিষয়টিকে গাফিলতি বলতে নারাজ সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুখময় সরকার। তিনি বলেন, ‘এতে গাফিলতি কিছু নেই। যাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে নায়েব সাহেব মামলাটি করেছিল তারা ভুল তথ্য দিয়েছিল। পরে জানা গেছে উনি মৃত। এতে গাফিলতি কিছু নেই।’ 

ইউএনও বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই থানায় লিখিতভাবে দেওয়া আছে, আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। পরবর্তীতে চার্জশিট থেকে নাম বাদ যাবে। আর সাক্ষী কিছু জানে কি না সেটা তো আদালতের বিষয়। এটা নিয়ে আর কিছু বলার নাই।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত